মো.আলাউদ্দীন, হাটহাজারীঃ
ঈদের আর মাত্র বাকি কয়েকদিন। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে হাটহাজারীর বিভিন্ন মার্কেটে ক্রেতাদের আনাগোনা ততই বাড়ছে। আর সেই সাথে ঈদের কেনাকাটাও বেশ জমে উঠেছে।
হাটহাজারী পৌরসদরের বিভিন্ন মার্কেটের পাশাপাশি ফুটপাতের দোকানগুলোতে কেনাকাটা চলছে সমানতালে। তবে তীব্র গরমের কারনে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের।
এদিকে জমজমাট বেচাকেনার সাথে পাল্লা দিয়ে বখাটেদের উৎপাতও চলছে বলে অভিযোগ পরিবার পরিজন নিয়ে বাজারে আসা প্রায় ক্রেতাদের। তবে প্রশাসনের কঠোর তৎপরতায় বখাটেরা তেমন সুবিধা করতে পারছেনা বলেও জানান স্থানীয়রা।
সরেজমিনে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পৌর সদরের এন জহুর শপিং সেন্টার, সিটি সেন্টার, আমির এরশাদ প্লাজা, তৈয়ুবিয়া নূর কমপ্লেক্স, সুপার সিটি মার্কেট, আলী মমতাজ শপিং সেন্টারের দোকানগুলোতে জমজমাট বেচাকেনা চলছে। বিশেষ করে সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে মার্কেটগুলোতে কেনাকাটায় মানুষের ভীড় শুরু হয়ে তা চলছে সেহরির সময় পর্যন্ত। এছাড়াও উপজেলার নাজিরহাট, কাটিরহাট, সরকারহাট, চৌধুরীহাট, নজুমিয়াহাট ও আমানবাজার এলাকার বিভিন্ন মার্কেটে শেষ মুহূর্তের জমজমাট বেচাকেনা চলছে।
ঈদের পোশাকসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে দোকানগুলোতে সকাল ৯টা থেকে সেহরির আগ পর্যন্ত ক্রেতাদের ভীড় চোঁখে পড়ার মত। রমজানের প্রথম থেকে বাজারগুলোতে কেনাকাটা মোটামুটি শুরু হলেও দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ক্রেতাদের আনাগোনা বাড়ায় বেচাকেনা শুরু হয়েছে এবং সেই সাথে কেনাকাটায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। আর ক্রেতাদের সমাগম বাড়তে থাকায় দোকানীরাও বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। তবে দোকানিরা বলছেন, গরম আবহওয়ার কারণে দোকান খোলার পর থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ক্রেতারা আসছেন। তারপর ক্রেতাদের আনাগোনা কমে যাচ্ছে। আবার সন্ধ্যার পর বেচাকেনা শুরু হচ্ছে। বুধবার উপজেলার বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, ঈদে উৎসবের আমেজ ছড়াতে রমজানের শেষ সময়ে এসে কেনা কাটায় মনোযোগী হয়েছেন সব শ্রেনীর মানুষ। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরেরা ইতিমধ্যে বেতন-বোনাস পেয়ে তারা এবং অনেক প্রবাসীদের পরিবার-পরিজনও বাজার সেরে নিচ্ছেন। ফলে উপজেলা ও পৌরসদরের দোকানগুলো মোটামুটি লোকারণ্য। চলছে মধ্যরাত পর্যন্ত বিকিকিনিও। বিশেষ করে পৌরসদরের মার্কেটগুলোতে পুরুষের চেয়ে নানা বয়সী নারী ক্রেতার ভীড় লক্ষ্যনীয়। তাল মিলিয়ে আসছে কিশোর ও তরুণরাও। ঈদে পোশাকে মধ্যবয়সী কিংবা নব বিবাহিতা নারীরা বিভিন্ন নামী-দামী ব্রার্ন্ডের শাড়ী খুঁজলেও তরুনী ও কিশোরীদের পছন্দ থ্রী-পিচ ও ভারতীয় সিনেমা ও সিরিয়ালের চরিত্রের সাথে মেলানো নামের নানা পোশাক। ছোটদের জন্য খোঁজা হচ্ছে লেটেস্ট ব্রান্ডের নানা ধরণের পাঞ্জাবী-মেয়েদের ড্রেস। এসবের সাথে কেউ কেউ চাচ্ছেন পুরোনো শিপন, থ্রি-পিস, জিন্স প্যান্ট, জামদানি শাড়ী, বেনারশি, কাতানসহ বিভিন্ন ব্রান্ডের পোশাকও। বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেছে, ল্যাহেঙ্গা, বুটিকস, চোষা, আড়ং, জিপসি, দেশীয় সূতি থ্রী-পিস, ভারতীয় থ্রী পিস, নাইরাকাট, সারারা-জারারা এবারের মূল আকর্ষণ। এছাড়াও বাজারে ভারতীয় সারারা-জারারা ও থ্রি-পিসের পাশাপাশি দেশীয় পোশাক মেয়েদের পছন্দের র্শীর্ষে।
উপজেলার চারিয়া এলাকা থেকে বাবা মার সাথে ঈদবাজার করতে আসা নাসরিন নাহার নিপা বলেন, পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাজার করতে আসার মজাই আলাদা। কিন্তু এই কাঁচারি সড়কে এতো ব্যাটারী রিকশা আর এতো সিএনজি, আবার সেসব যেখানে ইচ্ছে টার্ন নিচ্ছে চলেও বেপরোয়া। আর এলোমেলো দাঁড়িয়ে থাকার কারনে তীব্র যানজটেরও সৃষ্টি হয়। অনেক সময় যানবাহনে চলা দূরে থাক পায়ে হাটাও কষ্টকর হয়ে পড়ে।
ইদ বাজারে আসা একাধিক ক্রেতারা অভিযোগ করে বলেন, উপজেলার প্রায় মার্কেটগুলোর সামনে বিশেষ করে পৌরসদরের কাঁচারি রোড়ের আমির এরশাদ প্লাজা, এন জহুর মার্কেট, সিটি সেন্টার, আলি মমতাজ ও সুপার সিটি নামক মার্কেটের সামনে প্রকৃত ক্রেতার চেয়ে ইভটিজারদের আনাগোনা বেশি। এসব ইভটিজাররা সুযোগ বুঝে মেয়েদের টিজ করছে। কোনো কোনো জায়গায় দোকানের মৌসুমি কর্মচারীরাও সুযোগ বুঝে মহিলা কাস্টমারদের টিজ করে যাচ্ছে। আবার প্রায় মার্কেটের সামনে দলবল নিয়ে গ্রুপ আকারে দাঁড়িয়ে আড্ডাবাজি করা অযথা মার্কেটে ঘুরে ঘুরে চক্কর দেয়া গ্যাংও চোঁখে পড়ার মতো।
ঈদ বাজার সম্পর্কে পৌরসভা ব্যবসায়ি সমিতির সম্পাদক মো.শফিউল আলম জানান, গত ২/৩ বছর মহামারির কারনে পবিত্র ঈদুল ফিতর কে কেন্দ্র করে ব্যবসা বানিজ্য হয়নি বললেই চলে। এবার মহামারির ঝুঁকি কাটিয়ে পুনরায় ব্যবসা জমে উঠেছে। তাই চুরি-ছিনতাই ও ইভটিজিং প্রতিরোধে মার্কেটের সামনে নিরাপত্তা বলয় তৈরী করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকেও নিরাপত্তাকর্মী নিয়োজিত রয়েছে। তিনি ঈদ বাজারে বখাটেদের উৎপাত প্রতিরোধে প্রশাসনের প্রতি কাঁচারি সড়কের প্রতিটা মার্কেটের সামনে পুলিশের টহল জোরদার করার অনুরোধ করেছেন।
হাটহাজারী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো.রুহুল আমিন সবুজ জানান, ঈদে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সব ধরণের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। প্রতিটি মার্কেটের সামনে বসানো রয়েছে পর্যাপ্ত পুলিশ পাহারা। এছাড়াও মোটরসাইকেল টিমও পুরা উপজেলাজুড়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। মার্কেটের সামনে কোথাও জটলা বেঁধে আড্ডাবাজি, ইভটিজিং বা উছশৃঙ্খল আচরণ করতে দেখলে সাথে সাথে পুলিশ কে জানানোর পরামর্শও দেন তিনি।
দৈনিক দেশতথ্য//এসএইচ//
প্রিন্ট করুন
Discussion about this post