Print Date & Time : 25 August 2025 Monday 3:32 am

জমে উঠেছে পটুয়াখালী পৌর নির্বাচন

রাকিবুল ইসলাম তনু,পটুয়াখালী : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রেশ কাটতে না কাটতে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে পটুয়াখালী পৌরসভা নির্বাচনের।
ভোটাররা ভাবছেন পৌর নির্বাচনে এবার তুমুল প্রতিযোগিতা হবে।
কারন বর্তমান মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ ও সাবেক মেয়র ডাঃ শফিকুল ইসলাম দুজনই নির্বাচন করতে যাচ্ছেন। তবে বরাবরের মত বিএনপি এ নির্বাচনেও অংশ না নিলেও নিজ অবস্থানে অনড় আওয়ামীলীগ।

এবারের নির্বাচনে পটুয়াখালী পৌরসভায় মোট ভোটার ৫০ হাজার ৬৯৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২৩ হাজার ৯৪৭ জন ও নারী ভোটার ২৬ হাজার ৭৫০ এবং দুই জন আছেন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার। নিজ নিজ প্রচারনায় ব্যাস্ত হয়ে পরে মেয়র কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীরা। নির্বাচনের দেড় মাস আগে থেকে পথ সভা, উঠান বৈঠক মিছিলে পটুয়াখালী শহরে তৈরি হয়েছে এক ভিন্ন আমেজ। কে হবেন পৌরপিতা এ ব্যাপার নিয়েই চলছে চুল ছেঁড়া বিশ্লেষণ। নির্বাচন শুরুর বেশ কয়েকমাস আগে থেকেই ৬ জন মেয়র পদপ্রার্থী ও ৯টি ওয়ার্ডে মোট ৪০ জন কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করতে আগ্রহ প্রকাশ করে প্রার্থীরা। যাদের মধ্যে বেশির ভাগই তরুণ প্রার্থী। তবে সময়ের সাথে সাথে মেয়র পদপ্রার্থীদের সংখ্যা কমে ৪ জন হয়ে যায়। যাদের মধ্যে বর্তমান মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ ও সাবেক মেয়র পটুয়াখালী জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শফিকুল ইসলাম রয়েছেন আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে । বাকি দুইজন জনসাধারণের কাছে এখন পর্যন্ত নিজেদের পরিচিত করতে পারেননি। যার মধ্যে একজন হলেন পটুয়াখালী পৌর আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি এনায়েত হোসেন ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক মোঃ ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া।

তবে কে হতে যাচ্ছেন পটুয়াখালী পৌর মেয়র সাবেক না-কি বর্তমান এ নিয়ে শহরের বিভিন্ন স্থানে চলছে আলোচনা। এদিকে হেভিওয়েট এই দুই প্রার্থী পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে ভোটারদের সাথে দিচ্ছেন নানান প্রতিশ্রুতি। তবে দুজন দুজনার সমালোচনা করতে দেখা গিয়েছে বেশির ভাগ সময় প্রচারনার উঠান বৈঠক বা আলোচনা সভা গুলোতে।
তবে দুজনার-ই রয়েছে তুমুল জনপ্রিয়তা। বর্তমান মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ পটুয়াখালী শহরের দৃষ্টিনন্দন কয়েকটি কাজ করে রয়েছেন মানুষের নজরে। অপরদিকে সাবেক মেয়র ডাঃ শফিকুল ইসলাম সেই পনেরো থেকে বিশ বছর আগে থেকে স্বল্প আয়ের মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা, বিভিন্ন সময় আর্থিক সহায়তা সহ বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতার মাধ্যমে একটি শ্রেনীর মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছেন।

পটুয়াখালী শহরের রিক্সা চালক নিজাম বলেন, আমি আগেও দেখেছি উন্নয়ন হইছে এখনো দেখতাছি একছের উন্নয়ন। কিন্তু আমার তো কোন উন্নয়ন হয় নাই। আসলে উন্নয়ন সবাইর সময় হয়। তবে হেইডা হয় বড়লোকের লইগ্গা। নির্বাচন আইলেই সবাই একছের আমাগো উন্নয়ন করতে আয়।

সবুজবাগ মোড়ের চায়ের দোকানি মানিক বলেন, যে ভালো কাজ করবে। যারে আমার মনে হবে যে আমাদের সবার জন্য ভালো কাজ করবেন। আমি তাকেই ভোট দেবো।

স্কুল শিক্ষক তন্ময় হালদার তপু বলেন, এখন আমাদের পটুয়াখালীর রাস্তাঘাট বা বিভিন্ন স্থাপনা যথেষ্ট সুন্দর আছে। এর বেশি প্রয়োজন হয় বলে আমি মনে করি না। এখন যেটি প্রয়োজন সেটি হচ্ছে বেকারত্ব ঘোচানো ও মাদক নির্মূল করা। কিন্তু এই দুটি ক্ষেত্রে সত্যি কেউই খুব একটা এগোতে পারেনি। আসলে এই দুটো ব্যাপার নিয়ে প্রত্যেক প্রার্থীর আগানো প্রয়োজন।

সাবেক ও বর্তমান এই দুই মেয়র প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখার মতো হবে বলে অনেকের ধারনা। তবে ২০১৮ সালের নির্বাচনে জেলা আওয়ামীলীগের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলমগীরকে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন দেয়ায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান সাবেক মেয়র। তবে সেই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান মেয়রের কাছে বিপুল ভোটে হেরে যায় তৎকালীন আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী। তবে বর্তমান নির্বাচনে কোনো দলীয় প্রতীক না থাকায় কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে কথা বলে সর্ব সম্মতিক্রমে স্থানীয় ভাবে আওয়ামীলীগের সমর্থন প্রদান করা হয়েছে সাবেক মেয়র ডা. শিফককে এমনটাই জানিয়েছেন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলমগীর। তবে এই ঘোষণার পরপরই দলীয় নেতা কর্মীদের মধ্যে কিছুটা দ্বিমত দেখা দিয়েছে ‌। এদিকে বর্তমান মেয়র মহিউদ্দিনের দলীয় কোন পদ পদবী না থাকলেও তিনিও আওয়ামীলীগের একজন। এ নিয়ে এখন অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগেছে কে হতে যাচ্ছেন পটুয়াখালীর ভবিষ্যত মেয়র। কার হাতে পাঁচটি বছর থাকবে পৌরবাসীর ভবিষ্যৎ।

কেনো আবারো মানুষ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে বর্তমান মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি কি করেছি গত পাঁচ বছরে সেটা মানুষ জানে। পটুয়াখালীতে দৃশ্যমান যতো কাজ হয়েছে সেটিই আমার সময়। আজ পটুয়াখালী দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ আসে। আমি বিশ্বাস করি মানুষ আমাকে ভালোবাসে। আমি যা করেছি তার ভালো মন্দ বিচার করে আমাকে আবারো জনগণ নির্বাচিত করবে।

নির্বাচন নিয়ে সাবেক মেয়র ডা. মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি যখন মেয়র ছিলাম সেই সময়ে দল মত নির্বিশেষে সকল মানুষ আমার কাছে আসতে পেরেছে। আমার সময়ে সব থেকে বেশি বরাদ্দ পেয়েছে এই পৌরসভা। যেই কাজ গুলো এখন মানুষ দেখতে পাচ্ছে এইগুলো আমার সময়ে রেখে যাওয়া বরাদ্দের অংশ। আমি মাই ম্যান হিসাব করে নাগরিক সুবিধা দেইনি। আমি শাষক নয় সেবক হয়ে কাজ করেছি। আমাকে আমার এই পটুয়াখালীর মানুষরা আবারো ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলে আমি তাদের সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করে যাবো।

দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//