রোমান আহমেদ, জামালপুর প্রতিনিধি :ময়মনসিংহ বিভাগের অন্তর্গত জেলা জামালপুর। জামালপুর ৭টি উপজেলা নিয়ে গঠিত হয়েছে। উপজেলাগুলোর বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন নামে বছর জুড়েই বসছে মেলা আর মেলা। মেলার বসার আগেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় উঠে মেলার সময়, স্থানের নাম নিয়ে। শুরু আগ মূহুর্তে মাইকিং করে জানিয়ে দেয়া হয় স্থানীয়দের মাঝে। অন্যান্য বিভাগের ব্যবসায়ীরা পন্য সামগ্রী এনে স্টল বরাদ্দ নিয়ে বেচাকেনা করে থাকে। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই নানান সাজে ঘুরতে যায় মেলায়। তরুনেরা গারিতে সাউন্ড বক্সের সাথে নেচে গেয়ে যায় মেলায়। তরুণী থেকে বৃদ্ধা পর্যন্ত নারীদের আনাগোনাই বেশি থাকে মেলাগুলোতে।এ জেলার মানুষের যে কোন উৎসব, দিবসগুলোতে মেলায় না গেলে যেনো অপূর্ণই রয়ে যায় দিনগুলো। সংস্কৃতি যেনো সম্প্রীতির বন্ধনে আবব্ধ করে রেখেছে এ জেলার মানুষকে।
তবে সংস্কৃতিমনা ব্যাক্তিদের অভিযোগ মেলা বসলেও মেলাগুলোতে থাকছে না সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য।
জামালপুর জেলার কয়েকটি উপজেলায় উল্লেখযোগ্য মেলা রয়েছে যেমন-জামালপুর সদরের শিল্প ও বানিজ্য মেলা, মাদারগঞ্জের জামাই মেলা, মেলান্দহের মাস ব্যাপী বৈশাখী মেলা।
মেলা উপলক্ষে স্থানীয় ও অন্যান্য বিভাগ থেকে আসা বিক্রেতাগণ বিভিন্ন খাবার যেমন, চমচম, রসগোল্লা, সন্দেশ, টক-মিষ্টি আচার, মাছ,ইত্যাদি বিক্রি করেন। এছাড়া মেলায় নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যবহার্য্য পণ্য যেমন, তৈজসপত্র, আসবাপত্র, বিভিন্ন প্রকার ফার্নিচার ও লোহার সামগ্রী ইত্যাদি পাওয়া যায়।
মেলায় শিশুদের বিনোদনের জন্য রয়েছে নাগরদোলা, বিদ্যুৎ চালিত নৌকা, বিদুৎ চালিত রেলগাড়ী, পুতুল নাচ। বড়দের জন্য থাকে মোটরসাইকেল খেলা, নাটক, নাচ-গান ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা। এছাড়াও সকলে মিলে দেখার জন্য থাকে সার্কাস।
মাদারগঞ্জ উপজেলার চরপাকেরদহ ইউনিয়নে জামাই মেলার আয়োজন করে স্থানীয়রা। ডিসেম্বর মাসে মেলাটি শুরু হয়ে থাকে। মেলাকে কেন্দ্র করে এলাকার জামাইয়েরা শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে আসে। এ মেলায় ঐতিহ্যবাহী পন্য হিসেবে পাওয়া যায় বড় বড় বাহারি মাছ। স্থানীয়রা বলেন জামাইয়ের সাথে শশুর বাড়ির সম্পর্ক আরও দৃঢ করতেই এ মেলার হয়ে থাকে।
মেলান্দহ উপজেলার দুরমুট ইউনিয়নে মাস ব্যাপী বৈশাখী মেলার আয়োজন করে স্থানীয়রা। শুক্রবার (৩ মে) বিকালে ঘুরে দেখা যায়, তরুণ-তরুণী, শিশু-কিশোরসহ নানা বয়সের মানুষ মেলা উপভোগ করতে আসছেন। ছুটির দিন থাকায় সমাগম ঘটেছে হাজারো মানুষের।
সুবর্না আক্তার নামে এক তরুণী বলেন, বৈশাখ উপলক্ষে এখানে মেলার আয়োজন করেছে। পরিবারের সাথে ঘুরতে এসেছি মেলায়।
ছোট ছোট বাচ্চাদের মেলার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে মেলায় এসেছেন সামিয়া হক। তিনি বলেন, আমরা ছোটবেলায় মেলায় যা পেয়েছি, এখন আর তা নেই। আমাদের নতুন প্রজন্মকে বাংলার আদি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যগুলো দেখাতে পারছি না। গ্রামের মেলাগুলোতে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য এখন বিলুপ্তির পথে।
সামিয়া নামে আরেক তরুণী বলেন, মেলা উপলক্ষে আমরা বন্ধুরা একসঙ্গে ঘুরতে পারছি। এটাই আমাদের কাছে অনেক আনন্দের।
সংস্কৃতিমনা ব্যক্তি মহব্বত আলী ফকির বলেন, মেলা বিনোদনের একটি উৎস। জামালপুর জেলায় কয়েক বছর থেকে বিভিন্ন জায়গায় মেলা বসে। সারা বছরই দেখা যায় কোন না কোন জায়গায় মেলা চলছে। যদি মেলার নাম নিয়ে মানুষ হাসাহাসি করে তাহলে এমন নাম ব্যবহার না করাই শ্রেয়। বর্তমান সময়ে দেশীয় সংস্কৃতি বিলুপ্তির পথে। এই মেলা আয়োজন করে দেশীয় সংস্কৃতি ধরে রাখা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//

Discussion about this post