গত শনিবার ও রবিবার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে জি-২০ সম্মেলন। এই জোটের মেগা ইভেন্টে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) ২০ সদস্য দেশের নেতারা অংশ নিয়েছিলেন। এতে সদস্য দেশের বাইরে নয়টি দেশ আমন্ত্রিত হয়েছিল। এরমধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
সম্মেলনে চীন এবং রাশিয়ার সরকার প্রধান অংশগ্রহণ না করায় সম্মেলনটি অনেকটা নিষ্প্রভ হয়েছে। এই সম্মেলনে যে সমস্ত বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা ছিল তার মূল অংশই বাদ পড়ে গেছে।
সম্মেলন সফল না হলেও বাংলাদেশ অর্জন করেছে অভূতপূর্ব সন্মান ও সফলতা। এ নিয়ে ভারতীয় সাংবাদিক জয়ন্ত ঘোষাল বাংলাদেশের কালের কন্ঠ পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন করেছেন। তার প্রতিবেদনের মূল বক্তব্যকে বিশ্লেষণ করলে দেখা গেছে যে, এই সম্মেলনে বাংলাদেশের লাভ হয়েছে সবচেয়ে বেশি।
ওই প্রতিবেদনে তিনি পুরো সম্মেলনের প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশ ও শেখ হাসিনা প্রসঙ্গ সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।
তিনি লিখেছেন জি-২০সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও বাইডেনের আলাপচারিতা, ফটো সেশন এবং তাঁদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ একটি বার্তা দিয়েছে। সেই বার্তাটি হলো এই যে, যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের মধ্যেও সাম্প্রতিক যে টেনশন তৈরি হয়েছিল সেটা বর্তমানে আর নেই। তারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছে।
এবারের জি২০ সম্মেলনে শেখ হাসিনা ভারতের কাছ থেকে ব্যাপক সম্মান পেয়েছেন। জি২০-এর স্টেজে বাংলাদেশকে গোটা দুনিয়ার সামনে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পেয়েছেন।
আমেরিকার ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের ইন্দো-প্যাসিফিক কো-অর্ডিনেটর কার্ট ক্যাম্পবেল জানিয়েছেন, জো বাইডেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকের সময় বলেছেন, আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনেক কিছুই করা প্রয়োজন।
শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির একান্ত বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকের স্থায়িত্ব ছিলো এক ঘণ্টারও বেশি। বাংলাদেশের নির্বাচনের আগে এই দুই রাষ্ট্রপ্রধানের এই বৈঠক অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এটা একটা বিরল ঘটনাও বটে।
ভারত খুব স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বিশ্ব সন্ত্রাসের মোকাবেলা করেছেন। নিজে সন্ত্রাসের শিকার হয়েও তিনি এ ব্যাপারে আপস করতে রাজি হননি। বাংলাদেশের মাটিকে ভারতবিরোধী জঙ্গি কার্যকলাপের ক্ষেত্র করতে দেননি। তার জন্য ভারতের কৃতজ্ঞতা ষোলো আনার ওপর আঠারো আনা।
নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, পৃথিবী বদলে যাচ্ছে। আজকের আধুনিক দুনিয়ায় কোনো দেশেরই নির্বাচন ওইভাবে অন্য কোনো দেশ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই হোক, ভারতই হোক আর চীনই হোক। বাংলাদেশের নির্বাচন বাংলাদেশের সরকার করবে।
নরেন্দ্র মোদি দ্ব্যর্থহীনভাবে জানিয়েছেন, ভারত চায় না বাংলাদেশের মাটিতে আবার মুজিবের হত্যাকারী শক্তি মাথাচাড়া দিক। জামায়াত-জঙ্গিরা আবার নাশকতামূলক কাজে লিপ্ত হোক। ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও এটা বলেছে।
শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) শীর্ষ সম্মেলনে ‘ওয়ান আর্থ’ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষণ দিয়েছেন। বিশ্বব্যাপী সংহতি জোরদার করা এবং বৈশ্বিক সংকট মোকাবেলায় সমন্বিতভাবে প্রচেষ্টা গ্রহণের ওপর জোর দিয়ে তিনি চার দফা সুপারিশ উপস্থাপন করেছেন ।
তিনি বলেছেন, জি২০ ও আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সংকট মোকাবেলায় কার্যকর সুপারিশ তৈরিতে তাদের প্রচেষ্টাকে সহযোগিতা করতে বাংলাদেশ প্রস্তুত রয়েছে।
তার এই বক্তব্য বিশ্ব নেতাদের কাছে বাংলাদেশ ও শেখ হাসিনার গুরুত্বের ব্যপকতা বাড়িয়েছে।
শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা ইস্যু জি২০-এর মঞ্চে উত্থাপন করে আন্তর্জাতিক দুনিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছেন।
তার উত্থাপিত চার দফা ইস্যু অর্থনৈতিক, জলবায়ু, সন্ত্রাস দমন, সর্বোপরি ইন্টারনেট এবং আধুনিক প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে এগিয়ে যাওয়ার বাণী তিনি তুলে ধরার সুযোগ পেয়েছেন।
এই জি-২০-এর মধ্যেও দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে তিনটি সমঝোতা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে আধুনিক একটা সমঝোতা হলো ডিজিটাল পেমেন্ট মেকানিজম। এই ডিজিটাল পেমেন্ট মেকানিজম বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ন্যাশনাল পেমেন্টস করপোরেশন অব ইন্ডিয়ার (NPCI) সঙ্গে হয়েছে। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো শক্তিশালী, আরো অগ্রগতি পাবে বলে মনে করা হয়েছে।
এর পাশাপাশি ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব অ্যাগ্রিকালচারাল রিসার্চ এবং বাংলাদেশের অ্যাগ্রিকালচারাল রিসার্চ কাউন্সিলের মধ্যে একটা সমঝোতা স্মারক (MOU) স্বাক্ষরিত হয়েছে। পাশাপাশি ২০২৩-২৫ এ দ্বিপক্ষীয় সাংস্কৃতিক সম্পর্কের সমঝোতা স্মারকও স্বাক্ষরিত হয়েছে।
কোনো সন্দেহ নেই এসবই শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক প্রাপ্তি। পাশাপাশি ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় প্রাপ্তি, সেটাও কিন্তু বাংলাদেশের জন্য কম নয়।
সুতরাং সুষ্ঠু বিশ্লেষণ, সুষ্ঠু মূল্যায়নের মধ্য দিয়ে জি২০-এর ইতিবাচক উপাদানগুলো বাংলাদেশের জন্য খুবই বড় ধরনের প্রাপ্তি এনে দিয়েছে।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//সেপ্টেম্বর ১২,২০২৩//
প্রিন্ট করুন
Discussion about this post