Print Date & Time : 26 August 2025 Tuesday 9:20 am

ঝড়ে ভেঙে পড়ছে শতবর্ষী হালাবট গাছ!

শেখ জাহাঙ্গীর আলম শাহীন, লালমনিরহাট: শুক্রবার রাত ৮টায় এক মিনিটের টর্ণেডোর আঘাতে লালমনিরহাট সদর উপজেলার বেশকিছু স্থানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
লালমনিরহাট সদর থানা চত্বরের শতবছরের হালাবটের গাছটি উপড়ে পড়েছে।

শুক্রবার রাত ৮ টার পরপর লালমনিরহাটে ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়। ঝড়ের সময় হঠাৎ টর্ণেডোর আঘাত হানে। টর্ণেডো সদরের লালমনিরহাট পৌরসভা, মোগলহাট, দূগার্পুর, কুলাঘাট, বড়বাড়ি, রাজপুর, তাজপুর, মহিষখোচা, সাপ্টিবাড়ির উপর দিয়ে চলে যায়। এসময় ঘরবাড়ি, গাছপালা ভেঙ্গে পড়ে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কোথাও কোথাও শতবছরের পুরনো গাছপালা উপড়ে পড়েছে। লালমনিরহাট সদর থানায় শতবছরের ১টি ফুলকড়াই গাছ উপড়ে পড়েছে। গাছটি পুরনো জব্দ করা গাড়ির গুলোর উপর পড়ে। এতে গাড়ি গুলো দুমড়েমুচড়ে যায়। অল্পের জন্য থানা চত্বরের আবাসিক এলাকায় পড়েনি।

এদিকে শহরের হালাবটেরতলের ঈদগাঁও মাঠের শতবছরের বট,পাইকর ও আম গাছটি উপড়ে পড়েছে। কিংবদন্তি এই গাছটি ঘিরে একশ্রেণির সাধারণ মানুষের মধ্যে কুসংস্কার ও ধর্মবিশ্বাস চালু ছিল যে, গাছটির গোড়াই কিছু মানত করছে মনের আশা পূরণ হয়। গাছের ডালপালা ভাঙ্গলে রক্তবমি হয়ে মানুষ মারা যায়। এ কারণে শতবছর ধরে মানুষের মধ্যে গাছটির প্রতি একধরণের কিংবদন্তিতুল্য মযার্দা ছিল। গাছটির দুটি ডাল গ্রামটির আঞ্চলিক সড়কের উপরে গেটের মত সৃষ্টি করে ব্যারিকেট তৈরী করে ছিল। যার কারণে এই গাছের নিচ দিয়ে উচু যানবাহন যেতে পারতো না। তবুও গাছটির ডাল দুইটি কেউ কাটতে সাহস করেনি। শেষ পর্যন্ত ঝড়ে গাছটি উপড়ে পড়েছে। এই উপড়ে পড়া গাছটি দেখতে সকাল হতে শতশত মানুষ ভিড় করছে। প্রায় দেড় একর জমি জুড়ে বিস্তৃত অতি পুরানো এ বটগাছের অবস্থান লালমনিরহাট পৌরসভাধীন সাপটানা (উত্তর) মৌজায় লালমনিরহাট—কুলাঘাট সড়কের উত্তর পাশে।
জনশ্রুতি থেকে জানা যায় যে, বটগাছটির বয়স নূন্যতম ১৩০বছর। গাছটি ঘিরে ঈদগাঁওয়ের মাঠটি আরও পুরানো। পাকিস্তান আমলে (১৯৫১—৫২খ্রিষ্টাব্দে) স্থানীয় খতিফকির জৌনপুরী পীর সাহেবকে এখানে এনেছিলেন ধর্ম প্রচার করতে। পীর সাহেব এই গাছের নিচে বসে ছিলেন। ঈদগাঁওয়ের মাঠের পাশে ১টি কুয়া খনন করা হয়। আগত লোকজনদের ওজু করার জন্য। কিন্তু সেই কুয়ায় পানি আসছিল না। পীর হুজুর ওজু বদনা দিয়ে এক বদনা পানি ঢেলে দেন। কুয়ায় পানি এসে যায়। সকলে এই কুপের পানি দিয়ে ওজু করেন। কালের গর্ভে কুপটি আজ এখানে নেই। আবার ধর্মসভা শেষে আগতদের মাঝে খিচুরী বিতরণে সকলে খিচুরী হবে না। এমন প্রচার হয়। পীর সাহেব খিচুরীর হাড়ির মুখে ঢাকনা বন্ধ করে বিতরণ করতে বলেন। তার নির্দেশ অনুযায়ী ঢাকনা একটু সরিয়ে খিচুরী বিতরণ শুরু করা হয়। এক হাড়ির খিচুরী আগত লোকজনের মাঝে বিতরণ শেষে পার্শ্ববর্তী কয়েক গ্রামের লোকজন যারা এখানে আসেনি তাদের জন্যেও পাঠিয়ে দেয়া সম্ভব হয়। পীর সাহেব ধর্ম সভা ওয়াজ করে চলে যান কিন্তু আজও ধর্ম সভার ঈদগাঁও মাঠটি লোকজনের কাছে পবিত্র স্থান বলে বিবেচিত হতে থাকে। পীর সাহেবকে ছায়াদানকারী বট গাছটির প্রতিও বিশেষ সম্মান দেখানো শুরু হয়। এক শ্রেণির মানুষ এই বটগাছটি ঘিরে ধর্ম ব্যবসা শুরু করে। নানা কুসংস্কার চালু করেন। এখানে প্রতি শুক্রবার শতশত মানুষ দান করতে থাকে। মানত করে গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগিসহ নানা পণ্য।

দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//