এনামুল হক কুষ্টিয়া: ওয়ার্ক পারমিটসহ সৌদি আরব নিয়ে গিয়ে ওয়ার্ক পারমিট বা ‘আকামা’ না দিয়ে অবৈধভাবে রাস্তায় ছেড়ে দিয়ে সেখানে পুলিশী হয়রানি ও ভোগান্তির সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে সদর উপজেলার বোয়ালদাহ গ্রামের মৃত: হিসাব আলী’র ছেলে আজিবরের বিরুদ্ধে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব অসহায় পরিবারের সমস্যার নিরসনে ইতোমধ্যে একাধিকবার স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের শালিসী বৈঠকে কোন সুরাহ না হওয়ায় অবশেষে কুষ্টিয়া মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ৫টি পরিবার।
তাদের অভিযোগ, শুরুতেই চুক্তি মোতাবেক সাড়ে ৪লাখ টাকার মধ্যে সৌদিতে নিয়ে যাওয়া এবং ‘আকামা’ করে দেয়ার কথা বলে পরে নানা ধানায় পানায় কারন দেখিয়ে ধাপে ধাপে পরিবারের নিকট থেকে পৃথক ভাবে আরও অতিরিক্ত প্রায় ৫ লাখ টাকা আদায় করেছে। এখন আজিবর সে সব টাকাও ফেরত দিচ্ছে না আবার পাচার করা ওই সব লোকদেরও ফিরিয়ে এনে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দিচ্ছে না। তারা কে কোথায় আছে সেবিষয়েও আজিবর মুখ খুলছেন না। তবে অভিযোগ বিষয়ে আজিবরের মুঠোফোনে যোগাযোগ করে জানতে চাইলে আজিবর বলেন, ‘যখন কেউ কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয় তখন অভিযোগকারীরা অতিরিক্ত বাড়িয়ে বলেন। অভিযোগ কারীরা যা বলছেন তা সঠিক নয়; আমি সৌদি আরবে মানুষ নিয়েও গেছি এবং তাদের আকামা’ও করে দিয়েছি। এখন তারা সেখানে চাকরি করছে, বাড়িতে টাকাও পাঠাচ্ছে, কোন সমস্যা নেই।’
বুধবার দুপুরে আদম পাচারে জড়িত আজিবরের বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পক্ষ থেকে কুষ্টিয়া মডেল থানায় যারা লিখিত অভিযোগ করেছেন তারা হলেন- কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বোয়ালদাহ নতুন পাড়া গ্রামের বাসিন্দা বাদশা শেখের স্ত্রী মোছা: খুশি খাতুন। তিনি তার ছেলে সুজন শেখকে সৌদি পাঠাতে নির্ধারিত সাড়ে ৪ লাখ টাকার অতিরিক্ত আরও ৫লাখ টাকা দিয়েছেন আজিবরকে। একই গ্রামের আলতাফ মোল্লা তার ছেলে রুমনকে সৌদি পাঠাতে আজিবরকে অতিরিক্ত ৬লাখ টাকা দিয়েছেন তবুও রুমনকে কোন আকামা করে দেয়া হয়নি। একই এলাকার নজরুল ইসলামের স্ত্রী রুনা আক্তার তার স্বামীকে সৌদি পাঠাতে দিয়েছেন প্রায় ১০ লাখ টাকা। এভাবে ঋতু খাতুন তার স্বামীকে সৌদি পাঠাতে দিয়েছেন ৮ লাখ টাকা এবং মিরপুর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের মাসুদ রানা’র স্ত্রী তার স্বামীদের সৌদিতে পাঠাতে আজিবরকে দিয়েছেন প্রায় ৯লাখ টাকা। এভাবে কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন থানায় আজিবরের প্রতারণার অভিযোগে একাধিক পরিবারের লিখিত অভিযোগ রয়েছে বলে তাদের দাবি।
অভিযোগকারী আলতাফ মোল্লা বলেন, ‘আমার ছেলে রুমন সৌদি আরবে খুব খারাপ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। কোন আকামা না থাকায় পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। রুমনকে আজিবর তার গ্যাংয়ের লোকজনদের দিয়ে মারধর করে আটকে রেখেছে। আকামা করে দেয়ার কথা বলে আমার কাছে আবারও অতিরিক্ত ৬ (ছয়) লাখ টাকা নিয়েও আকামা করে দিচ্ছে না। আমি এখন আমার ছেলেকে ফিরিয়ে নিতে চাই’। এমুহুর্তে আজিবার দেশেই আছে। আইন শৃংখলা বাহিনীর কাছে আবেদন ও যেনো আবার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে না পারে। ও পালিয়ে গেলে আমার ছেলেকে ওর গ্যাংয়ের লোকজন মেরে ফেলবে’।
অভিযোগ বিষয়ে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বোয়ালদাহ গ্রামের মৃত হিসাবের ছেলে বর্তমানে চর থানাপাড়ার বাসিন্দা আজিবার রহমান এনআইডি নং ৯৫৬৭৬৭২৫২৩ মুঠোফোনে আলাপকালে বলেন, ‘অভিযোগ যে কেউ যে কারো বিরুদ্ধে দিতেই পারে। তবে তার সত্যতা কতটুকু সেটা যাচায় হোক তারপর আমি দায়ি হলে আমার বিচার হোক’।
লিখিত অভিযোগ বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ শেহাবুর রহমান বলেন,‘আদমের খপ্পরে কেউ আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন লিখিত অভিযোগগুলি যাচায় করে দেখে সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্যই দায়ী ব্যাক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Discussion about this post