আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তপশিলের পর থেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ মনোনয়ন ফরম বিক্রির ঘোষনা দিলে, দেশের বিভিন্ন আসনে যেমন ফরম বিক্রি হচ্ছে টাঙ্গাইলও তার ব্যাতিক্রম নয়। রাজনৈকিত অঙ্গনের প্রভাবশালীরা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহে রয়েছেন সরব অবস্থায়।
এরই ধারাবাহিতকায় আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসনের বর্তমান সাংসদ ক্ষমতাসীন আ’লীগের কেন্দ্রিয় সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ও প্রভাবশালী মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের বিপরীতে অন্তত অর্ধ ডজন (৬) জন নৌকার মনোনয়ন চেয়ে নির্বাচন করার জন্য মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। দলিয় ফরম বিক্রির শেষদিন সোমবার বিকেল পর্যন্ত আ’লীগের দলীয় কার্যালয় থেকে মন্ত্রীসহ মোট ৭ জন নেতাকর্মি ও সমর্থক দলের মনোনয়ন সংগ্রহ ও পূরণ করে জমা দিয়েছেন। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
কৃষিমন্ত্রী ছাড়া দলের মনোনয়ন সংগ্রহ করা বাকি নেতকর্মিরা হলেন-কেন্দ্রীয় আ’লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাপা, মধুপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ছরোয়ার আলম খান আবু, রাজধানীর তেজগাঁও কলেজের শিক্ষক ধনবাড়ী উপজেলার মেহেরুল হাসান সোহেল, নাট্য ব্যক্তিত্ব মধুপুরের সিদ্দিকুর রহমান, ধনবাড়ী উপজেলার হাজরাবাড়ীর অটিস্টিক সেবা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মাসুদুর রহমান ওরফে মাসুদ রানা এবং সর্বশেষ যুক্ত হয়েছেন ধনবাড়ী উপজেলার বীরতারা ইউনিয়নের বাসিন্দা দাতা প্রতিষ্ঠানের সাবেক কাট্রি ডিরেক্টর খন্দকার হাসানুজ্জামান রানা। অন্যান্যদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার তেমন না থাকলেও এদের মধ্যে শামসুন নাহার চাপা, ছরোয়ার আলম খান আবুর রয়েছে দীর্ঘ পথ চলার রাজনৈকিত ইতিহাস। কৃষিমন্ত্রী ড. রাজ্জাকের স্বজন শামসুন নাহার চাপা কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে ৮০ দশকের ঢাবির ছাত্র রাজনীতির ধারাবাহিকতায় ভূমিকা রাখছেন। সাড়ে তিন দশক ধরে উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকা ছরোয়ার আলম খান আবুর ছাত্র রাজনীতিতেও আছে উজ্জ্বল অতীত। দুই দফা সমাপ্ত হতে চলছে তিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। আওয়ামী রাজনীতিতে কলেজ শিক্ষক মেহেরুল হাসান সোহেলের নাম কম বেশি থাকলেও কমিটিভুক্ত হয়ে স্বক্রিয় রাজনীতির বিশেষ কোন ভূমিকা রাখতে তাকে দেখা যায়নি। নাট্য ব্যক্তিত্ব সিদ্দিকুর রহমান ছাত্র রাজনীতির কথা বললেও প্রকৃত পক্ষে ছাত্র রাজনীতিতে তার ভূমিকা তেমন কোন ইতিহাস খুজে পাওয়া যায়নি । আওয়ামীলীগের এক রকম সমর্থক সমাজ সেবক মাসুদুর রহমান ওরফে মাসুদ রানা। প্রতিবন্ধী (অটিস্টিক) সেবা ও শিক্ষা নিয়ে কাজ করেন তিনি। দলে তার অবদান ও বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের কথা নেতাকর্মিদের অজানা। খন্দকার হাসানুজ্জামান ছাত্রজীবনে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। কর্মজীবনে তিনি একটি বিদেশী দাতা প্রতিষ্ঠানের এশিয়া প্যাসিফিক জোন এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ছিলেন। বর্তমানে সুপর্না গ্রæপ অব ইন্ড্রাস্ট্রিজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপানা পরিচালক হাসানুজ্জামান ঢাকা উত্তর মহানগর আ’লীগের সদস্য দাবি করে তিনি জানান, যোগ্যতার বিবেচনায় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে তিনি শতভাগ আশাবাদী।
২০০১ সালের ৮ম সংসদ নির্বাচন থেকে টানা চার বারের এ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হচ্ছেন কেন্দ্রীয় আ’লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। ১/১১ এর পর নির্বাচনে আ’লীগের ২০০৯-১৪ মেয়াদের সরকারে ড. রাজ্জাক খাদ্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন। একাদশ সংসদে তিনি আবারও মন্ত্রীত্ব পান। কৃষিমন্ত্রী হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এবারও নির্বাচনে তিনি শক্ত প্রার্থী। কিন্তু দলের মনোনয়ন পেতে এবার তার সাথে যুক্ত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। গত নির্বাচনে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীর কথা শোনা গেলেও এবার তা বেড়ে অর্ধ ডজনে (৬) এ উন্নীত হয়েছে।
কৃষিমন্ত্রীর এ আসনে প্রার্থীতা দ্বন্ধে উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ছরোয়ার আলম খান আবুর সাথে দলীয় বিরোধ শুরু হয়েছে গত মে মাস থেকে। ১৪ মে বেসরকারি একটি টিভি চ্যানেলে নির্বাচন সংক্রান্ত সাক্ষাৎকারে উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীতা ঘোষণা করতে গিয়ে কৃষিমন্ত্রীকে নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্য দেয়ার পর থেকেই এটি প্রকাশ্যে আসে। এ নিয়েই দলে অন্তকোন্দল শুরু হয়। দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ২৩ জুন মধুপুরে রাজনৈতিক সংঘর্ষ বাধে। সেই থেকে শুরু। উপজেলা আ’লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের যৌথ গ্রæপের সাথে কৃষিমন্ত্রী ড. রাজ্জাক গ্রæপের পাল্টা পাল্টি দলীয় কর্মসূচি চলে আসছে। সরকারে উন্নয়ন কর্মকান্ডের চিত্র তুলে ধরাসহ নির্বাচনী প্রচার কার্য পৃথক ভাবে চলছে এসব কর্মসূচি। অব্যাহত আছে সে ধারা। এ অবস্থাতেই নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হলো। এ আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থীদের এমন ভীড় নিয়ে সাধারণের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা চলছে জোর গতীতে। ঝটলা করে করে চলছে এসব আলোচনা। উদ্বেগের নির্বাচন মনে হলেও অনেকেই মজা পাচ্ছেন এসব আলোচনায়। বিভিন্ন চায়ের দোকান, মোড়ের টং দোকানসহ বাজারে বাজারেও শোনা যাচ্ছে এ নিয়ে নানা কানা ঘোষা। এখন দেখার বিষয় শেষ মুহুর্তে কার ভাগ্যে জোটে টাঙ্গাইল-১, এ আসনটির নৌকার টিকেট।
খালিদ সাইফুল // দৈনিক দেশতথ্য // ২৫ নভেম্বর ২০২৩

Discussion about this post