হাসপাতালের খাবার সরবরাহে দুর্নীতি
অনিয়মের খবর প্রকাশ হলে সরকার বেকায়দায় পড়বে কেনো? এখানে সরকারের স্বার্থ কি? দুর্নীতির টাকা যাচ্ছে হাসপাতালের পরিচালক, প্রকল্প পরিচালকসহ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের পকেটে। এর জন্য সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে কেনো?
সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল থেকে বলা হয়েছিল, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হলে পুলিশ সদর দপ্তরের অনুমতি ছাড়া গ্রেপ্তার করা যাবে না। কিন্তু সাংবাদিক তানভীর হাসান তানুকে গ্রেফতারের সময় পুলিশ সদর দফতরের অনুমতি কি নেওয়া হয়েছিলো?
নিশ্চয়ই না। হাসপাতাল ও কারাগারে খাবার সরবরাহে কেমন অনিয়ম ও দুর্নীতি হয় তা কে না জানে?
ঠাকুরগাঁওয়ের সাংবাদিক তানভীর হাসান, সদর হাসপাতালের করোনা রোগিদের জন্য সরবরাহ করা খাবারের মান নিয়ে রিপোর্ট করেছিলেন। অনিয়মের চিত্র তুলে ধরেছিলেন।
তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে গ্রেপ্তার করা হবে কেন?
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় মিডিয়াকে সহ্য করতেই পারছে না। কদিন আগে ঢাকার সিভিল সার্জন সাংবাদিকদের কোনো তথ্য দিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। এর আগে রোজিনা ইসলামকে মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করেছে।
ভয়ংকর অবস্থা ও মানসিকতা। দেশটা যেনো তাদের বাপদাদার। চুরি করবে, লুট করবে, ৫ টাকার মাস্ক ৫শ’ টাকা দিয়ে কিনবে কিন্তু খবর প্রকাশ করা যাবে না। করলেই মামলা, গ্রেপ্তার, হয়রানি।
এটা তো সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এ দেশে মনে হয় সাংবাদিকতা করা সম্ভব হবে না। কোনো অনিয়ম, দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরা যাবে না?
সাংবাদিক তার নিজের স্বার্থে খবর প্রকাশ করে, না জনগণকে জানানোর জন্য, সরকারকে জানানোর জন্য প্রকাশ করে? একজন সাংবাদিক ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার সঙ্গে আপোষ করলে সেও তো সুবিধা নিতে পারে। টাকা কামাই করতে পারে। কিন্তু তা না করে খবর প্রকাশ করে কেনো? একজন দুর্নীতিবাজ তার দুর্নীতি,অনিয়ম লুকাতে চায়?
এটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু যারা এটা প্রকাশ করতে পারে তারাই দায়িত্বশীল দেশপ্রেমিক সাংবাদিক। সংবাদ প্রকাশ হয় জনগণের স্বার্থে। কারণ ওই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বেতন হয় জনগণের ট্যাক্সের টাকায়, দরিদ্র রিক্সাচালকের টাকায়। কষ্টের টাকা লুট করে পাচার করবে, ভোগবিলাস করবে মানুষের হক কেড়ে নেবে তা মেনে নেয়া যায় না।
কী দুর্ভাগ্য এ দেশে! দুর্নীতির খবর প্রকাশ করলে দুর্নীতিবাজকে না ধরে যে প্রকাশ করে তাকে ধরে জেলে দেয়া হয়। এতেই প্রতিয়মান যে, দুর্নীতির মাত্রা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে।
জাতির পিতার জন্মশতবর্ষে তার কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি স্বপ্নের উদ্যোগ,গৃহহীনদের গৃহনির্মাণ করে দেয়ার প্রকল্পে লুট হয়। ঘর ভেঙ্গে পড়ে। এখানে মামলা হয় না, কেউ গ্রেপ্তার হয় না। এতো বড় দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতরা রেহাইও পেয়ে যাবে হয়তো, তখন দেখা যাবে সংবাদ প্রকাশের জন্য সাংবাদিককে জেলে নেয়া হবে।
রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ সংবাদ মাধ্যমের এভাবে টুঁটি চেপে ধরলে রাষ্ট্রের কল্যাণ হবে না। সরকারেরও না। এটা শাসক শ্রেণি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় বুঝে না। জনগণকে নিয়েইতো সরকার। মুষ্টিমেয় কিছু দুর্নীতিবাজের পক্ষাবলম্বন করে কারও কোনো লাভ হবে না।
সাংবাদিকদের হয়রানির হাতিয়ার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল চাই। অবিলম্বে ঠাকুরগাঁওয়ের সেই সব দূর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক।
প্রিন্ট করুন
Discussion about this post