Print Date & Time : 25 August 2025 Monday 3:25 am

ঠাকুরগাঁয়ে নির্মানের পরদিন ভেঙ্গে পড়েছে কবরস্থানের সীমানা প্রাচীর!

ঠাকুরগাঁও অফিস:
ঠাকুরগাঁওয়ে কবরস্থানের সীমানা প্রাচীর নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে এলজিইডি ও এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।

নির্মানের পরদিদনই ভেঙ্গে পড়েছে কবরস্থানের নতুন নির্মিত সীমানা প্রাচীর। গ্রেডবিমগুলোতে হাত দিলেই ঢালাই খুলে পড়ছে। এ অবস্থায় ক্ষুব্ধ হয়ে সেগুলো গুড়িয়ে দেয় স্থানীয় লোকজন।

অনিয়মের কথা স্বীকার করে নতুন সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কথা জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী মো. মাবুদ হোসেন।
শুক্রবার করবস্থানের সীমানা প্রাচীর নির্মাণে অনিয়মের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। যা মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়।

করবস্থানের মতো জায়গাতেও অনিয়ম করায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও এলজিইডি কর্তৃপক্ষের কঠোর শাস্তি দাবিসহ বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন সাধারন মানুষ।

রবিবার ২৪ আগস্ট বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের কাজীপাড়া এলাকায় একটি কবরস্থানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শ্রমিক লাগিয়ে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নির্মিত গ্রেডবিমগুলো ভাঙছেন। তবে তাদের নির্মাণের ঢালাই করা গ্রেডবিমগুলোর পলেস্তারায় হাত দিলেই খসে পড়ছে। আর পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার উপসহকারী প্রকৌশলী প্রমোদ চন্দ্র রায় ও সার্ভেয়ার মোস্তাফিজুর রহমান। এসময় সাধারণ মানুষের তোপের মুখে পড়েন এই দুই কর্মকর্তা। একপর্যায়ে তারা কাজ বন্ধ করে দেয়।

জানা গেছে, স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতায় ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে কাজীপাড়া এলাকায় একটি গোরস্থানের দক্ষিণ-পশ্চিম পার্শ্বে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ পান আল আকসা নামে এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার ঢালাই করা হয়। পরদিন কাঠ খুললে দেখা যায় সব খসে পড়ছে।
এসময় স্থানীয় বিক্ষুব্ধ লোকজন প্রতিবাদ জানিয়ে সেই কাজ বন্ধের পাশাপাশি পিলারসহ গ্রেডবিম গুড়িয়ে দেয়।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, এলাকার মানুষ সচেতন বলেই অনিয়ম ধরতে পেরেছেন। মানুষ মারা গেলে কবরস্থানে মাটি দিবে সেখানেও অনিয়ম করে কাজ বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদার। এখানে এলজিইডি কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের যোগসাজশ আছে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ খুঁটিয়ে দেখে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন এমনটাই দাবি করেন তারা।
স্থানীয়রা বলেন, কবরস্থানেও যদি ঠিকাদার ও এলজিইডির লোকজন অনিয়ম করে এটার মতো দুঃখজনক আর কিছুই নেই। এই কবরস্থানে আমাদের মা-বাবা-আত্নীয় স্বজনরা সবাই শুয়ে আছে আর এলজিইডি ও ঠিকাদারের লোকজন প্রাচীর নির্মাণের নামে চুরি করছে। এরা কি মানুষ না অমানুষ? অবশ্যই এখানে এলজিইডির কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এই অনিয়মগুলো হচ্ছে। ঠিকাদারের লাইসেন্স বাতিল করা হোক এবং এলজিইডির কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুত করা হোক।

এবিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আল আকসার প্রতিনিধি পশিরুল ইসলাম বলেন, আগের ঢালাই করা নির্মিত গ্রেডবিমগুলো ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করে দেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে উপসহকারী প্রকৌশলী প্রমোত চন্দ্র রায় জানান, এটা তদারকির অভাবে অনিয়ম হয়েছে। ঢালাইয়ে সিমেন্ট কম, বালুর পরিমাণ বেশি ছিল। কাজ করার সময় না জানিয়ে করেছে ঠিকাদার। আর সে কারণে অনিয়ম করেছেন তিনি। ঠিকাদারকে পুনরায় ভেঙে নতুন করে গ্রেডবিমগুলোতে ঢালাই দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মো. মাবুদ হোসেন বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। নিয়ম হলো ঢালাই করার দুই সপ্তাহ পর স্যাটারিং খোলা হয়। কিন্তু ঠিকাদার তা না করে মাত্র একদিন পরেই তা খুলে কাজ শুরু করে দেয়। আমরা ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি তিনি পুনরায় কাজ করে দিবেন। এ কাজে এলজিইডি কর্তৃপক্ষের অবহেলা আছে কিনা এমন প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে যান।