আমেরিকান ডাক্তার ভাইগো অলসন
‘ডাক্তার ডিপ্লোম্যাট ইন বাংলাদেশ’ নামক একটি বইয়ের রচয়িতা। তাঁর ওই গ্রন্থে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম, বঙ্গবন্ধুসহ বিবিধ প্রসঙ্গ রয়েছে। যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করেন তাদের জন্য বইটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ডাক্তার ভাইগো অলসন স্বাধীনতার আগেই বাংলাদেশে ছিলেন। তিনি মালুমঘাট, ডোলাহাজরা, চকরিয়া, কক্সবাজারস্থ মেমোরিয়াল ক্রিষ্টিয়ান হাসপাতালের প্রধান ছিলেন।
ডাক্তার অলসন মুক্তিসংগ্রামের আগ থেকেই পূর্ববঙ্গে ছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর পর আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্ট পূর্ব পাকিস্তানকে আমেরিকানদের জন্য অনিরাপদ ঘোষণা করে। সে সময়ে তিনি টেকনাফের প্রমত্তা নাফ নদী পেরিয়ে বার্মার মংডু, আকিয়াব, রেঙ্গুন হয়ে আমেরিকায় চলে যান। চলে যাবার আগে তিনি দেখেছেন পাকিস্তানী সেনাদের অত্যাচার, নিপীড়ন, জ্বালাও, পোড়াও, হত্যা, মানবতা বিরোধী অপরাধের ভয়াল রূপ। তাঁর লেখনীতে সেই সময়ের চিত্র ফুটে উঠেছে। ওই বইয়ে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে।
সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে আসার জন্য ব্যকুল এই ডাক্তার ভিসা জটিলতায় পড়েছিলেন। অল্প সময়ে জটিলতা কাটিয়ে তিনি ভিসা পেয়েছিলেন। আমেরিকায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এনায়েত করিম নিজে তাকে ভিসা দিয়েছিলেন। তিনিই ছিলেন বাংলাদেশের ভিসা পাওয়া প্রথম আমেরিকান। তাঁর ভিসা নং ছিলো ০০১।
৮০ র দশকে আমি কক্সবাজার জেলার এসপি ছিলাম। একজন কন্সটেবল অসুস্থতায় মরণাপন্ন হওয়ায় তাকে নিয়ে গিয়েছিলাম তাদের ক্রিষ্টিয়ান হাসপাতালে। সেই সুবাদে পরিচয়। পরবর্তী সময়ে ডাক্তার ভাইগো অলসন তাঁর লেখা ” ডাক্তার ডিপ্লোম্যাট ইন বাংলাদেশ’ নামের বিখ্যাত গ্রন্থটি উপহার দেন। <
৩৫০ পৃষ্ঠার বইটি ২৪ টি পরিচ্ছদে বিভক্ত।১৯৭৩ সালে শিকাগোর ‘মুডি প্রেস’ থেকে ছাপা বইটির ২১ নং অনুচ্ছদে ‘Meeting “Mujib” এবং ২৪ নং অনুচ্ছেদে “Visa # 001” প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়েছে।
গ্রন্থটির ইন্ট্রোডাকশনে তৎকালীন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সম্পর্কের বর্ণনায় তিনি লিখেছেনঃ “Pakistan…..was a geographical absurdity. East Pakistanis, moreover, different from West Pakistanis in nearly every respect: nationality, appearance, language, dress, diet, customs and culture. Only the Islamic religion and the daily inter-wing flights of Pakistan International Airlines held the two disparate wing together”.
ওই বইয়ের বর্ননায় বলা হয়েছে, পূর্ব বাংলা ও পশ্চিম পাকিস্তান অমূলকভাবে জোড়া দেওয়া একটি দেশ। এটা তৎকালীন হিন্দু কংগ্রেস এবং মুসলমানদের মুসলিম লীগ নেতাদের আবিষ্কৃত অষ্টম আশ্চর্য ছাড়া আর কিছুই নয়।মধ্যপ্রাচ্যের সব মুসলিম দেশগুলি ইসলামিক উম্মার খাতিরে তো এক দেশে পরিণত হয়নি।তারা একই ধর্মের অনুসারী। তাদের বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠির আচার, আচরন, সংস্কৃতির ভিন্নতা নেই। তারপরও অসম্ভবকে সম্ভব করে একটি সুবৃহৎ মুসলিম দেশ তারা গড়েনি। তাহলে মাত্র ধর্ম এক হওয়ার কারণে কেন দেড় হাজার মাইল দূরত্বের দুই খন্ডকে জোর করে জোড়া দিয়ে পাকিস্তান নামে একটি দেশ গঠন করা হয়েছিল? ২৩ বছর পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তি সংগ্রামের মাধ্যমে জন্ম নেয় স্বাধীন বাংলাদেশ। প্রাণ বিসর্জন দেয় ৩০ লক্ষ বাঙালী।
উল্লেখ্য, ডাক্তার ভাইগো অলসন আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্টসহ অন্যান্য দপ্তরের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক গড়ে দিয়েছিলেন। যার ফলে বাংলাদেশ অল্প সময়ের মধ্যেই আমেরিকার স্বীকৃতি ও সাহায্য, সহযোগিতা পায়। এসব কাজের জন্য তিনি হয়ে উঠেছিলেন “ডাক্তার ডিপ্লোম্যাট”। ডাক্তার অলসনের ‘ডিপ্লোম্যাটিক’ ভূমিকার সাথে গ্রন্থটির নামকরণের যৌক্তিকতা যথার্থ।
তিনি বঙ্গবন্ধুর সাথে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের বিভিন্ন সমস্যা/বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁর সাথে এম আর সিদ্দিকী, ডিপ্লোম্যাট এনায়েত করিমের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের বিষয় গ্রন্থে আলোচিত হয়েছে।
গ্রন্থটিতে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের এমন কিছু বিষয় তুলে ধরা হয়েছে যা স্বাধীনতার ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছে।
দৈনিক দেশতথ্য পত্রিকার পাঠকদের জন্য লেখাটি পাঠিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত ডি আই জি মালিক খসরু।
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post