ডায়াবেটিসকে এখন সার্বজনিন একটি রোগ হিসেবে গণ্য করা যায়। অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনই এই রোগের প্রধান কারণ। আবার বংশগত কারণেও ডায়াবেটিস হতে পারে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেশিরভাগ লোক ওষুধ সেবন করে।
শরীরচর্চা এবং নিয়ম মেনে খাওয়া-দাওয়া করলে এটি নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে কখনো কখনো হুট করে তা বেড়েও যেতে পারে। যার ফলে অনেকেই মনে করেন ডায়াবেটিসকে পুরোপুরি নিরাময় করা কোন ভাবেই সম্ভব নয়। এই রোগ মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। শারীরিক বিভিন্ন অসুস্থতা বাড়িয়ে তোলে।
উচ্চ মাত্রায় রক্তে শর্করার উপস্থিতি ডায়াবেটিসের উদ্বেগের বিষয়। এটি কিডনি, হৃদরোগের পাশাপাশি অন্ধত্বের কারণ হতে পারে। এসব রোগ প্রতিরোধে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা অবশ্যই প্রয়োজন। তবে অনেক সময় জানা যায় না কখন রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সকালে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আছে এমন ভেবে নিশ্চিন্ত থাকলে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। আবার সব এই মাত্রা মেপে চলাও ব্যায় সাধ্য।
তাই ডায়াবেটিসের ক্রম বৃদ্ধির সাথে অতিমাত্রায় পরিচিত হতে হবে। আর এটা করতে হলে এর লক্ষণগুলো চেনা অত্যন্ত জরুরি। এসব লক্ষণগুলো চিনতে পারলেই আগাম সতর্কতা অবলম্বন করা সম্ভব।
শরীরে সুগারের মাত্রা বাড়লে প্রকাশ পাবে পাঁচটি লক্ষণ প্রকাশ পাবে।
০১। দৃষ্টি ঝাপসা লাগবেঃ ঘুম থেকে উঠেই চোখ মেলার পর যদি ঝাপসা দেখেন তাহলে বুঝবেন সুগারের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে।
০২। বমি বমি ভাব থাকবেঃ ঘুম থেকে উঠার পর যদি বমিবমি ভাব লাগে তাহলেও বুঝতে হবে সুগারের মাত্রা বেড়ে গেছে।
০৩। কর্ম স্পৃহা কমে যাবেঃ সকালে ঘুম থেকে উঠার পর যদি মনে হয় যে, প্রত্যাহিক কাজ গুলোতে মনোযোগ দেয়া যাচ্ছে না কিংবা কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মনোযোগ দিতে পারছেন না। তাহলে বুঝবেন মাত্রা বেড়েছে।
০৪। ঘন ঘন তৃষ্ণা অনুভূতিঃ ঘুম থেকে উঠেই ঘনঘন পিপাসা অনুভূত হলে বুঝতে হবে সুগারের মাত্রা বেড়ে গেছে।
০৫। মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়াঃ ঘুম থেকে উঠেই মাথা ঘুরে পড়ে গেলে কিংবা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার অবস্থা হলে, বুঝতে হবে সুগারের মাত্রা বেড়ে গেছে।
রক্তে শর্করার স্বাভাবিক পরিমাপঃ
সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) মতে, খাবারের আগে রক্তে শর্করা মাত্রা ৮০-১৩০ এমজি/ডিএল হওয়া উচিত। আর খাবারের ২ ঘণ্টা পরে ১৮০ এমজি/ডিএল এর কম হওয়া উচিত। আমরা সচরাচর যাকে ৬ পয়েন্ট ও ৮ পয়েন্ট বলে থাকি।
সিডিসি’র মতে, রক্তে শর্করার লক্ষণগুলো বয়স, স্বাস্থ্য সমস্যা এবং অন্যান্য কারণের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিতও হতে পারে। তাই এ বিষয়ে চিকিৎসকরের পরামর্শ নেয়া অবশ্যই প্রয়োজন।
সকালে রক্তে শর্করার বৃদ্ধি প্রতিরোধে পাঁচটি করণীয়ঃ
(ক) সন্ধ্যা হবার পরপরই রাতের খাবার খেয়ে নিতে হবেঃ গভীর রাতে না খেয়ে সন্ধ্যা রাতেই রাতের খাবার খেয়ে নিন। তাতে দেহে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।
(খ) নিয়মিত সুগার লেভেল পরীক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণঃ মাঝেমধ্যে সুগারের মাত্রা পরীক্ষা করে পরিমাণ জেনে নিতে হবে।
(গ) রাতে হাঁটা বা ব্যায়াম করতে হবেঃ রাতে নিয়মিত আধাঘন্টা হাটার অভ্যাস করতে পারলে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।
(ঘ) রাতে কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার খাওয়া ত্যাগ করুনঃ সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে রাতের খাবারে অবশ্যই কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার পরিত্যাগ করতে হবে।
(ঙ) নিজেকে হাইড্রেটেড রাখতে প্রচুর তরল পান করুনঃ নিয়মিত পানি পানের অভ্যাস গড়ে তুলুন। তাতে সুগারের মাত্রা কমে আসবে।
এরপরেও যদি সকালে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়তে দেখা যায়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
# দৈনিক দেশতথ্য ঢাকা ডেস্ক থেকে আলী আজগর স্বপনের লেখাটি সম্পাদনা করা হয়েছে। সম্পদনায় এবি/০২ সেপ্টম্বর/২০২১।
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post