ইবতেশাম রহমান সায়নাভ:
বাংলাদেশ সম্প্রতি এক সংকটময় সময় অতিক্রম করেছে। সামনে নির্বাচন, আর সেই নির্বাচনকে ঘিরে নতুন করে পথচলা শুরু করেছে বাংলাদেশ ২.০। কিন্তু এই প্রক্রিয়ার মাঝেই রাজনৈতিক ও সামাজিক বিরোধীপক্ষকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে নানা গোষ্ঠী সক্রিয় হয়ে উঠেছে। উদ্দেশ্য যেন শুধু ক্ষমতার পালাবদল নয়, বরং গণনাগত সততাকে আঘাত করে নিজের মতাদর্শ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা।
এর ভিতর সবচেয়ে বিপজ্জনক বিষয় হলো ভুয়া খবরের বিস্তার। ভুয়া খবর শুধু কোনো ব্যক্তিকে নয়, পুরো দেশ ও জাতিকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। একে অপরকে অবিশ্বস্ত করে তোলে, মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ও অনাস্থা ছড়িয়ে দিচ্ছে ভুয়া খবর।
তাই বাংলাদেশের জনগণের এখনই দরকার ভার্চুয়াল জগতের বিভ্রান্তি থেকে বের হয়ে বাস্তব সমাজের সত্যকে আঁকড়ে ধরা। একইসাথে নিজের এবং নিজের সমাজের জ্ঞানগত উন্নতিতে মনোনিবেশ করা। কারণ সচেতন নাগরিকই পারে ভুয়া খবরের বিষ থেকে দেশকে রক্ষা করতে।
সম্প্রতি আমি ও আমার সহপাঠীরা মিলে একটি গবেষণা করেছি, যেখানে দেখেছি ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে ভুয়া খবর কীভাবে জনমতকে প্রভাবিত করেছে। শুধু ২০২৪ সালের চার মাসে ২,৯১৯টি ভুয়া দাবি রেকর্ড হয়েছে, এর মধ্যে ৭২৭টি সরাসরি রাজনৈতিক। শেখ হাসিনার পতনের দিনই ছড়িয়েছে ৯১টি ভিন্ন ভিন্ন ভুয়া খবর।
এসব কনটেন্টের ধরণ ছিল বহুমুখী—বিকৃত ছবি ও ভিডিও, ভারতে সংঘটিত ঘটনার ছবি বাংলাদেশি ঘটনার নামে প্রচার, এমনকি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরি ফেইক ভিডিও।
আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, ভুয়া খবরের সবচেয়ে বড় উৎস ফেসবুক। ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে ৬৬% ও ভুয়া পেজ থেকে ৩৪% ভুয়া তথ্য ছড়ানো হয়েছে, যা সরাসরি জনসাধারণকে প্রভাবিত করেছে। ভয়, রাগ বা ক্ষোভ উসকে দেয় এমন কনটেন্ট দ্রুত ভাইরাল হয়েছে। এর ফলে মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে বাস্তবতা থেকে দূরে সরে গেছে, ভুল তথ্যের ভিত্তিতে রাজনৈতিক অবস্থান নিয়েছে এবং সমাজে অস্থিরতা বেড়েছে।
ফেসবুকভিত্তিক ভুয়া খবর এখন শুধু অনলাইন সমস্যাই নয়, বরং জাতীয় নিরাপত্তা ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার জন্য বড় হুমকি। তাই তথ্য যাচাইয়ের অভ্যাস গড়ে তোলা, ডিজিটাল সাক্ষরতা বৃদ্ধি এবং ভুয়া তথ্য ছড়ানোকারীদের জবাবদিহির আওতায় আনা—এসবই সময়ের দাবি। সচেতন নাগরিক আর কার্যকর নীতিই পারে এ বিপদ থেকে দেশকে রক্ষা করতে।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ,
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।

Discussion about this post