Print Date & Time : 13 September 2025 Saturday 11:37 am

ড্যাপ নিয়ে রাজউকের ওয়ার্কিং কমিটি গঠন

স্বাগত জানিয়েছে আবাসন উদ্যোক্তারা। আবাসন খাতের বড় সংগঠনের প্রতিনিধি রাখা জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা

রাজধানী ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) বাস্তবায়নে একটি সংগঠনের সুপারিশের ভিত্তিতে একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করে সম্প্রতি অফিস আদেশ জারি করেছেন রাজধানী  উন্নয়ন কর্র্তপক্ষ (রাজউক)।

ড্যাপ বাস্তবায়নে গঠিত এই কমিটিকে স্বাগত জানিয়েছেন আবাসনখাতের শিল্প উদ্যোক্তারা। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশদ এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বড় আবাসনখাতের সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিত্ব থাকা জরুরি। একই সঙ্গে শুধু একটি সংগঠনের সুপারিশের জন্য ওয়ার্কিং কমিটি না করে সংশ্লিষ্ট সবার যোক্তিক প্রস্তাবনা গ্রহণের সুযোগ রাখলে ড্যাপ বাস্তবায়ন সহজ হতো।

তারা বলছেন, ২০১০ সালের ড্যাপ বাস্তবায়নে পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ ছিলো শিল্প উদ্যোক্তাদের অন্তর্ভক্ত না করা।

নগর পরকিল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘ওয়ার্কিং কমিটি হতে পারে সেটিকে স্বাগত। তবে সেটি সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে হওয়া উচিত। দেখা গেলো বিএলডিএ বা রিহ্যাবের মতো বড় সংগঠন ভালো মতামত দিলো সেগুলো নিয়েও আলোচনার সুযোগ রাখতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘ড্যাপের গেজেট হওয়ার পর থেকে আলোচনা-সমালোচনা ছিল। এটি থাকাটা স্বাভাবিক। তবে একটি সংগঠনের (আইএবি) ড্যাপ বিষয়ক সুপারিশমালা নিয়ে গঠিত ওয়ার্কিং কমিটিকে আমি স্বাগত জানাতে পারছি না। কারণ সেখানে বলা হয়নি ড্যাপ নিয়ে সংশ্লিদের যোক্তিক মতামত নিয়ে আলোচনা হবে। একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে কোন একটি নির্দিষ্ট সংগঠনের সুপারিশ নিয়ে আলোচনার বিষয়টি ঠিক না। এমন মতামত অনেকেই দিয়েছে। মতামত আছে।’

নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ ল্যান্ড ডেভেলপারস এ্যাসোসিয়েশন (বিএলডিএ), রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) সহ আবাসন খাতের বড় সংগঠনগুলোর মতামত নেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বড় স্টেকহোল্ডাররা যদি ড্যাপ বাস্তবায়নে এগিয়ে না আসে তবে রাজধানীকে বসবাসযোগ্য করে গড়ে তোলা কঠিন হবে।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা  বলেন, ‘এটা আসলে এরকম কোন ওয়ার্কিং কমিটি না। স্থপতি ইন্সটিটিউট স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মহাদয়ের কাছে কিছু দাবি করেছিল। তখন বলা হয়েছিল (মন্ত্রণালয় থেকে) যদি যোক্তিক কিছু হয় তবে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অর্থাৎ ড্যাপ বিষয়ক মন্ত্রী সভা কমিটিতে উপস্থাপন করা হবে। কমিটি যদি যোক্তিক মনে করে তখন বিবেচনা করা হতে পারে। এটা (গঠিত ওয়ার্কিং কমিটি) আসলে অফিসাল কিছু না। কয়েকজনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবটার উপরে কাজ করে একটা খসড়া স্থানীয় সরকার মন্ত্রীকে দিলে সেটার উপর পরে যদি যোক্তিক মনে হয় তাহলে আলোচনায় (মন্ত্রী সভা কমিটিতে) আসবে।

 সুপারিশমালায় দু একটি এলাকায় ভবনের উচ্চতা (এফএআর) বাড়ানোর বিষয় ছাড়া আর কিছু আছে কিনা আমি এখনো দেখেনি।’

ওয়ার্কিং কমিটিতে আবাসন খাতের সংশ্লিষ্ট বড় সংগঠনগুলোকে রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটাতো আসলে কোন কমিটি না। আন অফিসিয়ালি দেখার জন্য বলা হয়েছে। স্থপতি ইন্সটিটিউট মন্ত্রণালয়ে কিছু সুপারিশ দিয়েছেন। তখন মন্ত্রী মহাদয় বলেছেন এগুলো একটু দেখেন। এখন আন অফিসিয়ালি বিষয়টি দেখা হবে। পরে অফিসিয়ালি সেটি মন্ত্রণালয়ে জানানো হবে। রাউজকের কর্মকর্তারা বিষয়টা বুঝে ওনাকে (মন্ত্রী) জানাবেন। পরে আরো কাউকে প্রয়োজন হলে উনি (মন্ত্রী) ডাকবেন। এটা আমাদের কিছু না। এখানে রাজউকের কিছু করার নেই।’

তিনি আরো বলেন, ‘যে জটিলতা (ড্যাপ নিয়ে) তৈরি হয়েছে সেটি ওনারা (গঠিত ওয়ার্কিং কমিটি) দেখবে। রিহ্যাব বা অন্য কেউ চাইলে আবেদন (স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বরাবর) করতে পারেন। তিনি (মন্ত্রী) যদি আবার আমাদের বলেন আমরা আবারো দেখবো। কারণ আমাদের এখতিয়ারের মধ্যে বিষয়টা নেই।’

আবাসন খাতে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সবার জন্য আবাসন নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ ল্যান্ড ডেভলপার অ্যাসোসিয়েশন (বিএলডিএ) ও রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)।

ড্যাপ নিয়ে রাজউকের গঠিত ওয়ার্কিং কমিটিকে স্বাগত জানিয়ে বিএলডিএ এর মহাব্যবস্থাপক নওশেরুল আলম বলেন, ‘আলোচনার জায়গা রাখাটা প্রশংসনীয়। ওয়ার্কিং কমিটির মাধ্যমে নিশ্চয় স্টেকহোল্ডাররা যোক্তিক প্রস্তাবনা উপস্থাপনের সুযোগ পাবেন। তবে আবাসন খাতে ৮০ শতাংশ চাহিদা পূরণ করেন বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা। যারা বিএলডিএ ও রিহাবের সাথে জড়িত। যেকোনো নীতি নির্ধারণে এই দুই সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব না থাকলে সেটা অপূর্ণ থেকে যাবে বলে মনে করছি।’

আবাসন শিল্পের খাতে জড়িত সংশ্লিষ্টদের দাবি করেন, ২০১০ সালে প্রণীত পরিকল্পনায় শিল্পের প্রতিনিধি না থাকার কারণে তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। গত বছরের আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে ড্যাপের গেজেট প্রকাশ করে সরকার। তবে এবারেও আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে সঠিক বাস্তবায়ন নিয়ে শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের সাথে আলাপ না করে ড্যাপ অনুমোদন করায়।

এবি//দৈনিক দেশতথ্য//জানুয়ারী ২১,২০২৩//