কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের কেউপুর গ্রামের কৃষক কিরণ আলী। প্রতি বছর ৫ থেকে ৭ বিঘা জমিতে তামাক আবাদ করতেন। তবে বছর দুয়েক হলো তামাক আবাদ পুরোপুরি ছেড়ে দিয়েছেন এ কৃষক। এখন ৪ বিঘা জমিতে তাঁর শসা ও ব্লাকবেবী তরমুজের আবাদ আছে।
এখান থেকেই প্রতি বছর তিনি আয় করছেন তিন থেকে ৪ লাখ টাকারও বেশি, যা তামাকের থেকে কয়েক গুণ বেশি। খরচ ও প্ররিশ্রমও কমেছে তাঁর। তামাক পোড়ানোর সময় পরিবারের নারী-পুরুষ ও শিশুদের ওপর যে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ত তা থেকেও বেরিয়ে আসতে পেরেছেন বলে জানান তিনি।
তার মতো আরও কৃষক তামাকের চাষ ছেড়ে দিয়ে সবজি চাষ ও ফলজ বাগান করে তারা বেশ ভালোই আয় রোজগার করছেন।
কৃষক কিরণ আলী বলেন, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘দিশা’ তাঁকে তামাক চাষ ছাড়তে উৎসাহ দেয়। তারা তাঁকে ফলসহ অন্যান্য ফসল আবাদের ওপর ট্রেনিং করায়। বীজ, সার ও বালাইনাশক বিনামূল্যে দিয়ে সহযোগিতা করায় তিনি এখন তামাক চাষ বন্ধ করে দিয়েছেন।
গত তিন বছরে কুষ্টিয়া জেলায় তামাকের চাষ কিছু হলেও কমেছে বলে দাবী পল্লী-কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন ( পিকেএসএফ)’র।
এলাকায় পল্লী-কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন ( পিকেএসএফ)’র।আর্থিক ও কারিগরী সহায়তায় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা দিশা – এর মাধ্যমে ২০১৭ সাল থেকে ‘তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে বিকল্প ফসল উৎপাদন ও বহুমুখী আয়ের উৎস্য সৃষ্টি’শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। উক্ত প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে এলাকায় তামাকের পরিবর্তে তামাকের বিকল্প ফসল উৎপাদন করে বহুমুখী আয়ের উৎস সৃষ্টি করা।
ইতোমধ্যে সহযোগী সংস্থা দিশা মিরপুর উপজেলার ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এলাকার প্রায় ৫০০ কৃষককের নিয়ে তামাকের বিকল্প ফসল উৎপাদনের আওতায় আনতে কাজ শুরু করে। বর্তমানে এগারোশ কৃষককে উদ্বুদ্ধ করণের মাধ্যমে তামাকের বিকল্প ফসল উৎপাদনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে।
মিরপুরের কয়েকটি এলাকায় তামাক আবাদ নিরুৎসাহিত করতে কাজ করছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘দিশা’।
দিশার কৃষিবিদ জিল্লুর রহমান কাজ করছেন প্রায় ৫ বছরের বেশি সময় ধরে। প্রথমে বারুইপাড়া ইউনিয়নের কেউপুর গ্রামে তারা কাজ শুরু করেন। কৃষকদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পান। যেসব কৃষক তামাক আবাদ ছাড়তে চান তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, সার, বীজ ও বালাইনাশক দিয়ে সহযোগিতা করছে এ সংস্থাটি। সরকারের কৃষি বিভাগের পাশাপাশি পিকেএসএফ’র সহযোগীতায় ও দিশার বাস্তবায়নে আমরা প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকের সাথে যোগাযোগ রেখে এই কৃষিখাতকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিতে কাজ করছি।
দিশা সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মো: রবিউল ইসলাম বলেন, বারুইপাড়া ইউনিয়নে ১১টি গ্রামের ৭০০ কৃষক পুরোপুরি তামাক আবাদ ছেড়ে রবি ফসল আবাদ করছেন। আরও ৪০০ কৃষক তামাক আবাদ কমিয়ে এনেছেন। তাঁরাও তামাক আবাদ ছাড়বেন বলে মনে করছেন তিনি।
যেসব ক্ষেতজুড়ে আগে তামাকের আবাদ করতেন কৃষকরা সেখানে শীতকালীন নানা শাক-সবজির পাশাপাশি বিভিন্ন জাতীয় ফল ও সরিষা আবাদ করছেন তাঁরা। সবজির বাজারদর তুলনামূলক ভালো থাকায় কম প্ররিশ্রম ও অল্প পুঁজিতে বেশি আয় হচ্ছে।
মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, তামাক আবাদের চিত্র বদলে যাচ্ছে। তিন থেকে ৪ বছর ধরে প্রতি মৌসুমেই তামাক আবাদ কমছে। কৃষকরা এ থেকে বের হয়ে আসছেন। গত বছর মিরপুর উপজেলার মাঠে আনুমানিক ৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে তামাক আবাদ হলেও চলতি বছরে কমে তামাক আবাদ হয়েছে ৬ হাজার ৩৯৫ হেক্টর জমিতে, যা আগের বছরগুলোর তুলনায় প্রায় ১৫ ভাগ কম।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//মে ৩০,২০২৩//

Discussion about this post