সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়নের হলহলিয়া গ্রামে হত্যাকান্ডের সূত্র ধরে প্রতিপক্ষের বাড়ীঘর ব্যাপকভাবে ভাংচুর ও লুটতরাজের ঘটনায় আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
রবিবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে আইন শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আদালত সুনামগঞ্জে ১৪ নং মামলাটি দায়ের করেছেন হলহলিয়া গ্রামের আমির আলীর পুত্র সুলতান মিয়া।
এতে আইন শৃঙ্খলা বিঘœকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন (সংশোধিত/২০০৯) এর ৪ ও ৫ ধারায় দায়েরকৃত মামলায় ৪২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৮০ জনকে আসামী করা হয়েছে। আসামীরা হলেন,হলহলিয়া গ্রামের চান্দু মিয়ার পুত্র নুর ইসলাম (৪৫),আনোয়ার (৪২),কুদরত আলী (৩০),আছমত আলী (২৬), মনসুর আলী (২৪),স্ত্রী নিলুফা বেগম (৫৫), মৃত ইছব আলীর পুত্র সাদেক মিয়া (৫৯),ছমেদ আলী (৫০),ছমেদ আলীর পুত্র রুমালী (২৮), আজিল হক (২৪),স্ত্রী তাহেরা (৪৫),মৃত কেরামত আলীর পুত্র রমিজ উদ্দিন (২৬),তমিজ উদ্দিন (২৫),সাদেক মিয়ার পুত্র নুরুল হক (৩২),সাজিল হক (২৮),সালাহ উদ্দিন (২৪),সামছুল হক (৩৫), সোনা মিয়ার পুত্র আব্দুর রহমান (২৭),আব্দুল হামিদ (৪০),নুর ইসলামের পুত্র তারা মিয়া (২৪),স্ত্রী জো¯œা বেগম (৪৫),দুনু মিয়ার পুত্র মরম আলী (৩০),মনহর আলী (৪৫), আনোয়ারের স্ত্রী আকলিমা (৩৫),পুত্র মনির হোসেন (২৪),আব্দুন নূরের পুত্র খালেক মিয়া (২৮),আব্দুল হামিদের পুত্র কামরুল ইসলাম (২৬),আব্দুল কাইয়্যুমের পুত্র আব্দুল হালিম (৩০),আব্দুল আহাদ (২৮),নুরু মিয়ার পুত্র সাইকুল (৩০),হোসেন মিয়ার পুত্র খালেক (২৭),মৃত আব্দুল বারেকের কন্যা যমুনা বেগম (৪০),মৃত আব্দুন নূরের পুত্র আব্দুল খালেক (৪০),হলহলিয়া চরগাঁও গ্রামের মৃত জিন্নত আলীর পুত্র (আকবর আলী (৪৫),মৃত শাফিল উদ্দিনের পুত্র আবুল বাশার (৪৫),মৃত নুরজামাল এর পুত্র তফুর আলম (৪০),মৃত আব্দুর রউফের পুত্র এমদাদুল হক (৪০) ও তোষা মিয়া (২৮),টেটিয়াপাড়া গ্রামের সালাম মুন্সীর ছেলে আলমগীর (৩৭),বড়ছড়া বালুচর গ্রামের আলমগীরের স্ত্রী শেফালী (২৮),বড়ছড়া গ্রামের গোলাপ মিয়ার পুত্র সেলিম মিয়া (৩৮),লাকমা গ্রামের মৃত এরশাদ মিয়ার পুত্র ফজলুল হক (৪৫) প্রমুখ। মামলার বিবরণে প্রকাশ, গত ১৭ অক্টোবর শুক্রবার সকাল ৭টা হতে ২৫ অক্টোবর শনিবার শনিবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত পূর্ব বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের ১৫ জনের পাকাঘর,আধাপাকা টিনশেড ঘরসহ মোট ১৯টি বসতবাড়ী ভেঙ্গে ছুরমার করে দেয় আসামীরা। ভাংচুরের একপর্যায়ে প্রত্যেকের ঘরে থাকা ফ্রিজ,কাঠপালং,সোকেস,আলনা,স্বর্ণালংকার,ধান চাল,পুকুরের মাছ,চেয়ার টেবিল,বিভিন্ন ইলেক্ট্রিক ফ্যান,গরু ছাগল,হাঁস মোরগীসহ সকল আসবাবপত্র অবাধে লুটতরাজ করে নেয়। আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগের ন্যায় প্রকাশ্য দিবালোকে সংগঠিত এমন বর্বরোচিত ভাংচুর ও হামলার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ৩০ টি পরিবার। এখনও খোলা আকাশের নিচে প্রায় ১৫০ জন নারী ও শিশু বসবাস করছে। একেবারে ভেঙ্গে ঘুরিয়ে দেয়া হয়েছে ১৯টি বসতভিটা ও গরুর ঘর। কেটে ফেলা হয়েছে বিভিন্ন জাতের ৩০০টি বিভিন্ন জাতের গাছ। নষ্ট করা হয়েছে ২টি টিউবওয়েল। মামলাটি আমলে নিয়ে দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আগামী ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তাহিরপুর থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন। বাদীপক্ষে এডভোকেট নজরুল ইসলাম মামলাটি পরিচালনা করেছেন । হলহলিয়া গ্রামের ঘটনাস্থলের পূর্বে আমির আলীর গোত্র এবং পশ্চিমে সাদেক আলীর গোত্রের মধ্যে এই ঘটনা সংগঠিত হয়। রাজমিস্ত্রী কাজের ১৫০০ টাকা পাওনা আদায়কে কেন্দ্র করে প্রথমে দুই পক্ষে মারামারির ঘটনা থেকে পরবর্তীতে পুরুষশুন্য আমির আলীর গোত্রের ঘরবাড়ী ভাংচুরসহ লুটতরাজ করে সাদেক আলীর গোত্ররা। ক্ষতিগ্রস্থদের পক্ষে মামলার বাদী সুলতান মিয়া বলেন,গত ২২ সেপ্টেম্বর সোমবার প্রতিপক্ষরা আমার চাচাতো ভাইদেরকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। এ ঘটনায় বাংলাদেশ দন্ডবিধি আইনের ৩২৬/৩০৭ ধারায় আমার চাচাতো ভাই আজিজুল ইসলাম বাদী হয়ে বিজ্ঞ আদালতে জিআর ২০৯/২০২৫ইং মামলা দায়ের করেন। এতে উত্তেজিত হয়ে প্রতিপক্ষরা আমাদের বসতবাড়ী ভাংচুরসহ লুটতরাজ করেছে। প্রতিপক্ষের চান্দু মিয়ার পুত্র মোঃ নুরুল ইসলাম বলেন,আমার চাচা বৃদ্ধ সোনা মিয়াসহ ৫ জনকে আহত করেছে প্রতিপক্ষরা। এর মধ্যে ৩ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মারামারির ঘটনার ২২ দিন পর আমার চাচা সোনা মিয়া (৭৮) সিলেটের এম.এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এতে উত্তেজিত হয়ে গ্রামবাসী আমাদের প্রতিপক্ষের বাড়ীঘর ভাংচুরসহ লুটতরাজ করেছে। দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সবুজ মিয়া বলেন,একপক্ষে খুন আরেক পক্ষের বাড়ীঘর ভাংচুর ও লুটতরাজের ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। আমি চেষ্টা করছি দুপক্ষের বিরোধ নিস্পত্তি করতে। ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে তাহিরপুর থানার ওসি মোঃ দেলোয়ার হোসেন বলেন, হলহলিয়া গ্রামের ২ পক্ষের মধ্যে সৃষ্ট সংঘর্ষে এক বৃদ্ধ গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে মারা যাওয়ার পর এই ঘটনা সংগঠিত হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। এ ব্যাপারে তদন্ত সাপেক্ষে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
প্রিন্ট করুন










Discussion about this post