শেখ জাহাঙ্গীর আলম শাহীন, লালমনিরহাট: দেশের উত্তর পশ্চিমের প্রায় ১০টি জেলা যখন পানিতে ডুবছে। তখন দেশের উত্তরাঞ্চলের প্রধান নদী তিস্তা ও ধরলায় পানি বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। তাই আপতত উত্তরাঞ্চলের ৮টি জেলা বন্যার অশংকা মুক্ত রয়েছে।
যদিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিস্তার পানি বৃদ্ধি নিয়ে নানা আজগুবে গুজব ছড়ানো হচ্ছে।
আজ শুক্রবার তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এমন কি তিস্তা ও ধরলা নদীর কোথাও কোথাও চর জেগে উঠেছে।
ভারতের সিকিমে পাহাড় ধসের কারণে তিস্তা নদীর ওপরে নির্মিত জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের একটি বাঁধ ভেঙে গেছে। ফলে পশ্চিমবঙ্গের গজলডোবা বাঁধে পানির চাপ বাড়লেও তিস্তায় বন্যার শঙ্কা নেই।
তিস্তা পাড়ের মানুষদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড। এমন কি ধরলা নদীতেও কোন পানি আপতত বাড়ার আশংস্কা নেই।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, তারা তিস্তা ও ধরলা নদীর উজানের দেশ ভারতের সাথে উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ রাখছে। দুই দেশের নদী কমিশনের কমিটির কর্মকর্তাদের মধ্যেও যোগাযোগ রয়েছে।
শুক্রবার সকাল ৯টায় তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে নদীর পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫১ দশমিক ৪২ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার)। এর আগে বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সকালে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি কমতে থাকায় দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। গত দুই দিনে তিস্তা নদীর ডান তীর লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়া গাছ ইউনিয়নের হরিনচড়া গ্রামে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। ধরলা নদীর কলাখাওয়া ঘাট এলাকায় ভাঙ্গণ দেখা দিয়েছে। নদী দুইটির পাড়ে ভাঙন হুমকিতে রয়েছে শতাধিক পরিবার। কয়েক দিনে নদীগর্ভে চলে গেছে তিনশ বিঘা জমির ধান সবজিসহ ফসলের ক্ষেত। তিস্তা পাড়ে লোকজন ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন প্রতিরোধে জিও ব্যাগ ফেলতে দেখা গেছে। কিন্তু এতে কোন ভাবে নদী ভাঙ্গন রোধ হচ্ছে না। নদী পাড়ের মানুষ তিস্তা নদী কে ঘিরে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকার কে উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
পানি উন্নয়ন বোড় সূত্রে জানা গেছে, উজানে বৃষ্টির কারণে গত দুই দিন ধরে তিস্তা ও ধরঅ নদীর পানি সামান্য কিছু বৃদ্ধি পেছে। তবে তা এখনো বিপদ সীমার অনেক নিচে রয়েছে। ভারতের সিকিমে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণে তিস্তা ও ধরলা পাড়ের হাজারও মানুষ আতঙ্কে দিন পার করছেন। উজানের ঢল যে কোনো সময় লালমনিরহাটে প্রবেশ করে বন্যার সৃষ্টি হতে পারে- এমন শঙ্কায় নির্ঘুম রাত পার করছে তারা। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে আতংকিত হওয়ার কিছুই নেই। সিকিমের এই পানি হঠাৎ করে তিস্তা নদীতে আসার সুযোগ নেই। বাংলাদেশের তিস্তা ব্যারেজ দিয়ে পানি আটকানো সম্ভব হবে।
সেই প্রস্তুতি পানি উন্নয়ন বোর্ড়ের রয়েছে। বন্যা সর্তকীকরণ কেন্দ্রের সহকারী প্রকৌশলী (পুর) মোঃ জগলুল হায়দার জানান, এখনো পর্যন্ত কোন পূবাভার্স পাওয়া যায়নি তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি প্রবাহ আশংস্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাবে। তিস্তা ও ধরলা নদী অববাহিকায় কোন বন্যা হওয়ার আশংস্কা নেই। উজানে বৃষ্টি হচ্ছে তাই পানি বাড়তে আবার কয়েক ঘন্টা পর কমে যাচ্ছে।
তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়ার পয়েনেটর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আশফাক জানান, এই মূহুর্তে তিস্তা নদীর পানি বিপদ সীমার অনেক নিচে রয়েছে। তিস্তা নদীতে বন্যার আশংস্কা নেই। উজানে পানি বাড়ার খবর সার্বক্ষণিক রাখা হচ্ছে।