শেখ জাহাঙ্গীর আলম শাহীন:
উত্তরের জেলা লালমনিরহাটে বৃহস্পতিবার তেমন বৃষ্টি হয়নি। তাতেই তিস্তা নদীতে ঢল নেমেছে। তিস্তা পাড়ের মানুষ বন্যার আশংকা করছে।
তিস্তা নদীর উজানের পাহাড়ে বৃষ্টির প্রভাবে তিস্তা নদীর পানি বেড়েছে। গতিপথ পরিবর্তনে লালমনিরহাট মহিষখোচায়, নীলফামারীর জলঢাকা, রংপুরের গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়ায় দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন।
মহিষখোচা গ্রামের বাসিন্ধা রবিউল আলম জানান, তিস্তা নদীপাড়ের বাঁধ সংলগ্ন বামতীঁরে বৃহস্পতিবার দুপুরের পর হতে হঠাৎ করে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢলে নদীর পানি টইটুম্বুর হয়ে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্রে জানা গেছে, ভারতের ৬টি রাজ্যে গত ২৪ ঘন্টায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই বৃষ্টির পানি তিস্তা দিয়ে গড়িয়ে ব্রম্মপুত্রে পড়ছে। তাই হঠাৎ করে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনিতে তিস্তা নদীতে পলি পড়ে ভরাট হয়ে গেছে। তারমধ্যে গতবছর ৪ অক্টোবর সিকিমে বাঁঁধ ভেঙ্গে তিস্তায় প্রায় দেড় মিটার অতিরিক্ত পলি জমেছে। তথ্যটি ভারতের নদী গবেষণাকেন্দ্র জরিপে উঠে এসেছে। তিস্তার আকর্ষিক পানি বৃদ্ধির কারণে তিস্তা অববাহিকার মানুষ বন্যার আশংকা করছে। এরই মধ্যে দ্বীপ চরাঞ্চলের বেশকিছু বসতভিটা, গ্রামের রাস্তা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে নদী তীরবর্তী এলাকা ও চরাঞ্চলের মানুষ। দুই দিন আগেও ছিল তিস্তা নদী পানি শূন্য। ছিল চরে চরে ফসলের মাঠ। চরের অধিকাংশ ফসল তলিয়ে গেছে। ফসলের খেতের ওপর দিয়ে বইয়ে পানির ে¯্রাতধারা।
তিস্তা নদীপাড়ের ডাউয়া বাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট মোঃ মশিউর রহমান জানান, পলি পড়ে তিস্তা নদী উঁচু হয়েছে। উজানের পাহাড় ঢল সমতল নদী কোথাও ধারণ করতে পারে না। সর্বত্র উঁচু হয়ে গিয়েছে তিস্তা নদী। এখন আর নদীর গভীরতা নেই। নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে একাধিক ধারায় প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর তলদেশ ভরাটের কারণে এবারের বন্যা মৌসুমে একটু পানিতেই নদীর পানি উপচে পড়ার আশঙ্কা করছেন তিস্তা অববাহিকার মানুষ। তিস্তাপাড়ের চরবাসীদের মতে, গত তিন দশকে তিস্তা নদী তিন মিটার উঁচু হয়েছে। পাশাপাশি নতুন করে আরও অন্তত দেড় মিটার উঁচু হয়েছে গতবারের বন্যায়। ফলে তিস্তা নদীর উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে সাড়ে চার মিটার, যা তিস্তাপাড়ের মানুষজন অল্প ঢলেই এবার বর্ষায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন। ডালিয়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ দৌলা বলেন, ১৯৯০ সালে তিস্তা সেচ প্রকল্প চালু করা হয়। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত ৩২ বছরে তিস্তার তলদেশ ভরাট হয়ে কোথাও কোথাও দুই মিটার আবার আড়াই মিটার উঁচু হয়েছে। ফলে উজানের ঢলে বা সামান্য বৃষ্টিপাতেই প্রবল বন্যা দেখা দিচ্ছে। নদীর বুকে পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাওয়ায় এখানে বন্যার পানিপ্রবাহের বিপদসীমা নির্দেশক ৫২ দশমিক ৪০ থেকে বাড়িয়ে ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার করা হয়েছে। এতেই বোঝা যায়, নদীটির তলদেশ কী পরিমাণ ভরাট হয়েছে। এখন তো আরো বেশি ভরাট হচ্ছে। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী মোঃ রবিউল ইসলাম জানান, তিস্তা খরে¯্রাতা নদী ছিল। এখন নেই। একাধিক ধারায় প্রবাহিত হয়েছে। তিস্তা নদী তার স্বকীয়তা হারিয়েছে। উজানে বৃষ্টি হওয়ায় পানি বেড়েছে। আপাতত ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি রংপুরে হয়তো হবে না। তবে বলা যায় না বৃষ্টি হলে হতেও পারে।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//

Discussion about this post