শেখ জাহাঙ্গীর আলম শাহীন, লালমনিরহাট থেকে :ফাল্গুনে শুকিয়ে যাওয়া তিস্তা নদীতে হঠাৎ ৩৬ কিউসেক পানি প্রবাহ । তিস্তা নিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচির আগে এই পানির প্রবাহের কারণে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
তিস্তা নদীর ন্যায্যপানির হিস্যা ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে আগামী ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি তিস্তা পাড়ে অবস্থান করে লাগাতার রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়েছে তিস্তা নদী রক্ষা কমিটি ও বিএনপি।
তিস্তা পাড়ের ১৩৫ কিঃমিঃ জুড়ে থাকবে এই কর্মসূচি। রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘিরে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চলছে। এই কর্মসূচিতে তিস্তা পাড়ের দলমত নির্বিশেষে প্রায় ১০-১৫ লাখ মানুষের সমাগম ঘটবে। এখানে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, রংপুর ও নীলফামারীর জেলার তিস্তা পাড়ের মানুষ সমাবেত হবেন। তিস্তা পাড়ে সমাবেশ কে স্বার্থক করতে তৈরি করা হয়েছে জনসভামঞ্চ, রাতে তিস্তা পাড়ের আন্দোলনরত মানুষদের থাকার জন তৈরি করা হয়েছে গণ প্যান্ডেল। লালমনিরহাট জেলা সদরের তিস্তা সেতুর পাড়ের মঞ্চে প্রধান অতিথি হিসেবে ১৭ ফেব্রুয়ারি বক্তব্য রাখবেন বিএনপির মহা সচিব র্মীজা ফকরুল আহম্মেদ।
তিস্তা পাড়ের বাসিন্ধা মহিষখোচা স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ রবিউল ইসলাম জানান, হঠাৎ শনিবার বিকাল হতে তিস্তা নদীতে সামান্য পানি বেড়েছে। তিস্তা নদীর মূলপ্রবাহে দুইদিন আগেও ছিল হাটুপানি। আজ বেড়ে হয়েছে কমর পর্যন্ত পানি। বিগত দিনে খরা মৌসুমে সাধারণত এমনটা হয় না। এবছর হয়েছে। ফলে নদী পাড়ের জেগে ওঠা চরের রবি ফসল নিমিষেই তলিয়ে গেছে। এতে কৃষকের ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তবে অন্যদিকে তিস্তায় সামান্য পানি প্রবাহের সৃষ্টি হয়েছে। যাহা নদীর প্রবাহকে বাচিঁয়ে রেখেছে। এটা কৃষি ও প্রকৃতির জন্য মঙ্গলময়।
এদিকে তিস্তা ব্যারেজ সূত্রে জানা গেছে, তিস্তা নদীতে শনিবার পানির প্রবাহ হঠাৎ সামান্য বেড়েছে। ফলে ব্যারাজের ছয়টি জলকপাট খুলে দিয়ে তিস্তা নদীর ব্যারেজের ভাটিতেছে পানির প্রবাহ বাড়াতে পানি ছেড়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
গতকাল শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টার পর থেকে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানিপ্রবাহ বাড়তে শুরু করে।
এদিন সন্ধ্যা ৬টায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫০ দশমিক ১০ সেন্টিমিটার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার)।
এদিকে তিস্তার পানির ন্যায্য হিসাবের দাবিতে তিস্তা পারে ১৭-১৮ ফেব্রুয়ারি ৪৮ ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তিস্তা পাড়ের মানুষ।
এরমধ্যে পানি বৃদ্ধিতে তিস্তা পাড়ের কৃষকরা আশঙ্কায় রয়েছেন। জেগে উঠা বালুচরের রসুন, পেঁয়াজ, মিষ্টি কুমড়া, ডাল-বাদামসহ অন্যান্য ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে তিস্তা নদীরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক ও বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, তিস্তার পানি বৃদ্ধির বিষয়টি শুনেছি। পানি বাড়লেও ১৭-১৮ ফেব্রুয়ারি তিস্তা পারে ৪৮ ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি চলবে।
রংপুর বিভাগের পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসি মোঃ মিজানুর রহমান জানান, বর্তমান সেচ মৌসুম চলছে। তিস্তা ব্যারেজের উজানে গজলডোবায় ব্যারেজ রয়েছে ভারতের। সেখানেও ভারতের সেচপ্রকল্প রয়েছে। চাষের জমিতে সেচ দিতে ভারত গজলডোবায় পানি দিয়েছে। সেই পানির অতিরিক্ত খুব সামান্য পানি তিস্তা নদীতে ছেড়েছে। এই পানি ছাড়ায় তিস্তা নদীতে শুস্কমৌসুমে পানি প্রবাহ বেড়েছে। তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্পও কার্যকর ভুমিকা রাখতে পারছে।
তিনি জানান, সপ্তাহ ধরে তিস্তা সেচ প্রকল্পে ২৮ হতে ৩২ কিউ সেক পানি প্রবাহ ছিল। গতকাল সেখানে পানির প্রবাহ হয়েছে ৩৬ কিউসেক। এটা তেমন কিছু নয়। সামান্য পানি বেড়েছে। এই পানি বাড়াতে বন্যাপরিস্থিতি সৃষ্টি করবে না। এমন কি শুকিয়ে যাওয়া তিস্তা নদীর ভাটির সবগুলো চরও ভিঁজবে না। এই পানির আসায় তিস্তার জীববৈচিত্র কিছুটা হলেও রক্ষা হবে। আমাদের দাবি তো তিস্তা নদীতে শুস্কমৌসুমে পানির প্রবাহ চাই। তারা পানি দিয়েছে। বরং এটা নিয়মিত হওয়া উচিত। এটাই তো তিস্তা পাড়ের মানুষের দাবি।

Discussion about this post