শেখ জাহাঙ্গীর আলম শাহীন, লালমনিরহাট থেকে:
উজান হতে আসা পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানিতে খরেস্রােতা তিস্তা নদী উম্মাদের মত আচরণ করতে শুরু করেছে।
আজ শনিবার সন্ধ্যা ৬ টায় তিস্তা নদী কাউনিয়া পয়েন্টে পয়েন্টে বিপদ সীমার এক সেঃমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা উপকূলের কমপক্ষে ১৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠেছে। যাহা একই দিনে বিকাল ৩ টায় ছিল বিপদ সীমার ১১ সেঃমিটার নিচে।
রাতে পানি বেড়ে বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পাড়ে। চরাঞ্চলে ও তিস্তা ব্যারেজের উজানে সর্তকতা জারি করা হয়েছে। তিস্তা সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি গেট খুলে পানি প্রত্যাহার করা হচ্ছে। তিস্তা দ্বিতীয় শেখ হাসিনা সেতুর নিচে পানি উন্নয়ন বোর্ড ডেঞ্জার বোর্ড টানিয়ে সর্তক করেছে।
তিস্তা উপকূলের কমপক্ষে ১৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চবিদ্যালয়, মাদ্রাসায় পানি উঠেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে আজ শনিবার জানিয়েছে, দেশের বন্যা প্রবণ প্রধান প্রধান নদ—নদীর পানি হু হু করে বাড়ছে। প্রবল বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পানির ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে সন্ধ্যা ৬ টায় বিপদসীমার ৫ সেঃমিঃ নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তবে তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার মাত্র এক সেঃমিঃ নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজানি ঢলে তিস্তা নদীর পানি হু হু করে বেড়েই চলছে। রাতে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এদিকে নদী পাড়ের মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে উচুস্থনে ছুটছে। তিস্তা চরাঞ্চলের মসজিদের মাইকে চরবাসীকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে। পানির তোড়ে তীব্রনদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।
নদীর পানি বাড়ার সাথে রংপুর জেলার কাউনিয়া, পীরগাছা ও গংগাচড়া উপজেলার তিস্তা অববাহিকার নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপ চরের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। লালমনিরহাট জেলার মহিষখোচা, রাজপুর, তাজপুর, খুনিয়াগাছ, হরিণচরা, দোয়ানি, গড্ডিমারী, বিছনদই, হলদিবাড়ি, পারুলিয়া, দক্ষিণ পারুলিয়ায় তিস্তা নদীতে পানি বেড়েছে। এসব চরাঞ্চলের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। মহিষখোচায় গোর্বধন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে পানি ঢুকেছে। নদীর তীরবতীর্ চারপাশে পানি প্রবেশ করার খবর পাওয়া গেছে। পানিতে ডুবে গেছে বাদাম, শীতের সবজি, পিঁযাজ, মরিচ সহ নানা ফসলের ক্ষেত। সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ি ডুবে যাওয়ায় পানিতে নাকানি চুবানি খাচ্ছে। মহিষখোচা ও কাউনিয়ার গদাই গ্রামের নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকা বাসীরা জানান,পাউবো কোনো প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা গ্রহন করেনি। মহিষখোচা স্পার এক ও বাঁধকে ঝুঁকিপূর্ণ সাইনবোর্ড লাগিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছে। অথচ এবছর শুস্কমৌসুমে বিভিন্ন গ্রুপে মহিষখোচার প্রায় ৪৪ কোটি টাকা খরচ করে ৮টি গ্রুপে বাঁধ সংস্কার ও নতুন বাঁধ নিমার্ণ করেছে। সেই বাঁধে ইতোমধ্যে ধ্বংস দেখা দিয়েছে।
এদিকে রংপুরের গংগাচড়া উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নের চিলাখাল সূর্যমূখী ক্বারী মাদরাসা,চিলাখাল মধ্যপাড়া জামে মসজিদ, উত্তর চিলাখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। কোলকোন্দ ও লক্ষীটারী ইউনিয়নের ৫ শতাধিক ঘরবাড়িতে নদীর পানি ঢুকে পড়েছে।
প্রশাসন বলছেন, তিস্তা নদী এলাকায় বন্যা ও ভাঙনের বিষয়ে আমরা সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছি। লালমনিরহাট পানি
উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার জানান, তিস্তা নদী একটি খরে¯্রাতা নদী। এই নদীর উজানে ভারতের গজলডোবায় একটি বাঁধ আছে। নদীর উজানে এই বাঁধ হতে তিস্তা নদীর পানি নিয়ন্ত্রণ হয়ে থাকে। গজলডোবার ভাটিতে প্রায় ৬৫—৭০ কিঃমিঃ দুরে বাংলাদেশের তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্প রয়েছে। কিন্তু উজানের ঢল আসায় তিস্তা ব্যারেজের সকল ৪৪টি জল কপাট খুলে দেয়া হয়েছে। তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্ট পানির সমতল ৫২.১০ মিটার বিপদসীমা = ৫২.১৫ মিটার) যা বিপদসীমার ৫ সে.মি নিচে প্রবাহিত হচ্ছে। কাউনিয়া পয়েন্ট পানির সমতল ২৯.৩০ মিটার (বিপদসীমা = ২৯.৩১ মিটার) যা বিপদসীমার এক সে.মি নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।