স্বাভাবিক জনজীবন বিপর্যস্ত। ৫শতাধিক বয়ষ্ক ও শিশু হাসপাতালে। অধিকাংশ টিউবয়েলে পানি উঠছেনা। রোজাদারদের ইফতারে জুটছেনা ঠান্ডা পানি। প্রতিদিন অন্তত ২০টি অগ্নিকান্ড ঘটছে
কুষ্টিয়ায় ১০ দিন ধরে চলছে তীব্র তাপদাহ। এতে জেলার স্বভাবিক জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। মানুষসহ সকল প্রানীকুলের নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে আক্রান্ত বয়ষ্ক ও শিশুরা ডায়ারিয়া জনিত গুরুতর অসুস্থ্য ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালে। ২৫০শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানায়, অন্যান্য সময়ের তুলনায় গত ৫দিন ধরে অতিরিক্ত প্রায় ৫শতাধিক বয়ষ্ক ও শিশু রোগী ভর্তি হয়েছে তীব্রতাপদাহের স্বীকার হয়ে। সেই সাথে দশগুন বৃদ্ধি পেয়েছে অগ্নিকান্ডের সংখ্যা বিপুল ক্ষয়ক্ষতির শিকার কৃষকরা।
কুমারখালী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: সাইদুর রহমান জানান, ‘গত ১০ দিন ধরে কুষ্টিয়াসহ আশপাশের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি থেকে ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রির মধ্যে উঠানামা করছে। গতকাল শনিবার ছিলো ৪১ ডিগ্রি, রবিবার তাপমাত্রা অপরিবর্তিত আছে এবং আগামী দুই একদিনের মধ্যে তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে’। রবিবার দুপুর আড়ায় টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। অনুভুতি অনুযায়ী আরও বেশী তাপমাত্রা মনে হচ্ছে।
২৫০শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তাপস কুমার সরকার বলেন, প্রতিদিনই গরম জনিত শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের শয্যা সংখ্যার তুলনায় প্রায় ৫গুন বেশী রোগী ভর্তি আছে। রবিবার দুপুর পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা ১শর অধিক যাদের অধিকাংশই তীব্র গরমের কারনে ডায়ারিয়া আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী কুস্টিয়া জেনারেল হাসপতালে মোট ভর্তি প্রায় ৭ শ রোগীর মধ্যে ৭০% ভাগই গরম জনিত কারনে অসুস্থ্য হয়ে চিকিৎসাধীন। একটানা তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় হিট স্ট্রোক, ডায়রিয়া, শিশুদের নিউমোনিয়াসহ গরমজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।
প্রতিদিনের মতো জীবিকার তাগিদে গলায় ঝুড়ি ঝুলিয়ে রাস্তায় বের হন ফেরিওয়ালা মুনিরুল। তাপদাহের ঝিমুনিতে থেমে গেছে চলার গতি। আশপাশে গাছের ছায়া না পেয়ে একটি ভবনের প্রাচীরের কোনে বসে ঝিমুচ্ছে। নেই তার মালামাল চুরির ভয়। ঘামঝরা দেহে নিশ্চিন্তে ঘুমুচ্ছে মুনিরুল।
সূর্য উঠার পর সকাল ৯টা হতেই বেড়ে যাচ্ছে সূর্যের উত্তাপ। প্রবাহমান বায়ু মন্ডলকেও অনুভুত হচ্ছে আগুনের তাপের মতো। দুপুরের পর রোদের উত্তাপে বাইরে বের হওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে। এদিকে, তীব্র তাপদাহে বিপাকে পড়েছেন কৃষক ও খেটে খাওয়া শ্রমজীবি মানুষেরা। কুষ্টিয়া ঝিনাইদহ মহাসড়কের বিত্তিপাড়া এলাকায় বেশ কিছুৃসংখ্যক মালবাহী পরিবহন থামিয়ে গাছের নীচে একটু শীতল ছায়ায় গা জিরোচ্ছে চালক হেলপাররা।
তীব্র তাপদাহে কুষ্টিয়া শহরসহ আশপাশে ভু-গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় অধিকাংশ টিউবয়েলে পানি উঠছেনা। এতে রোজাদারদের ইফতারে হাতের কাছে জুটছেনা ঠান্ডা পানির সহজলভ্যতা। দুর থেকে সংগৃহিত পানি বাড়ি পর্যন্ত আসতে আসতে গরম হয়ে যাচ্ছে। পানির সংকট কুস্টিয়া পৌর এলাকায় আরও বেশী প্রকটাকার ধারণ করেছে। পৌর এলাকার সর্বমোট প্রায় ৩৬ হাজার হাউজ হোল্ডিংএর জন্য পানির সক্ষমতা রয়েছে ১০হাজার ৪শ ঘন মিটার যা চাহিদার তুলনায় ৫ভাগের একভাগ। এক কথায় তাপদাহের তীব্রতায় গ্রম শহরের ভিন্নতায় নয় সমানে সমান জ¦লছে খরতাপে।
কুষ্টিয়া ফ্য়াার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল আলীম জানান, ‘তীব্র খরতাপের কারণে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা, দৌলতপুর ও মিরপুর উপজেলায় তামাক চাষ অধুষ্যিত হওয়ায় প্রতিদিন অন্তত ২০টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটছে এবং চাষীরা বেশ মোটা অংকের আর্থিক ক্ষতির স্বীকার হচ্ছে। অনেক সময় অধিক তাপের ফলে শুষ্ক তামাকের গুদামে এমনিতেই আগুন ধরে যাচ্ছে, শুষ্ক তামাককে দাহ্য পদার্থ হিসেবে ধরা হয়’। এছাড়া গত ৭দিনে জেলার ৬টি উপজেলায় ছোট বড় শতাধিক অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে এই অধিক তাপদাহের কারণে’।
খালিদ সাইফুল, দৈনিক দেশতথ্য, ১৬ এপ্রিল ২০২৩
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post