পরীকে মহা নায়ক বলায় কারো গায়ে জ্বালা ধরতেই পারে। তা ধরুক। আবার কেউ কেউ পণ্ডিতি করে বলতে পারেন, নায়িকাকে নায়ক বলে ব্যকারণে ভুল করেছি। ব্যকারণে ভুল হলেও বাস্তবতায় যা সঠিক তাই-ই বলেছি। বড় বড় রাজনৈতিক নেতা মাস্তান পুলিশ ও সরকারের দায়িত্বশীলরা যা করতে পারেনি পরিমনি তা করে দেখিয়ে দিয়েছে। কি দেখিয়ে দিয়েছেন তা জানতে হলে এই লেখাটি এক শ্বাসে পড়ে ফেলুন।
পুলিশের ক্ষমতাসীন আই জি যে ক্লাবের প্রেসিডেন্ট মধ্য রাতে সেই ক্লাবে গিয়ে মদের গ্লাস ভেঙে সিকিউরিটিকে পিটিয়েছেন। কেবল মাত্র তাই-ই নয় অনেকগুলো ক্লাবের মহিরুহ সেই নাসির উদ্দিনকে জেল খাটিয়েছেন। কিছু সাংবাদিক ও রাজনীতিকের গড ফাদার বনে যাওয়া হেলেনা জাহাঙ্গীর বোর্ড ক্লাবে গিয়ে ক্যামেরা ফিট করে পরিমণীর বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছিল। সেই ঘটনা তার আইপি টিভিতে প্রচার করে বাহবা নিয়েছিল। সেই হেলেনার রাজনৈতিক পদ গেছে। আইপি টিভি বন্ধ হয়েছে। এখনো সে জেলে রয়েছে। এই কৃতিত্ব সরাসরি পরীর না হলেও এর পেছনে তার ভূমিকা আছে তা অনেকেই বলে ফেলেছেন। সব মিলিয়ে বলবো থানা পুলিশ কোর্টকাচারী ফেস করে পরীমনি যা করেছে তা বাঘাবাঘা লোকেরাও পারেনি।
নায়িকা পরীমনিকে নিয়ে দেশের সব মিডিয়া এখন মহা ব্যাস্ত। প্রথম আলো সহ দেশের অনেক খ্যাতনামা পত্রিকা একাধীকবার পরীমনিকে নিয়ে লিড নিউজ করেছে। দেশের মানুষ জনের মধ্য চিত্র নায়িকা পরি মনিকে নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। ইতিপূর্বে নায়ক-নায়িকাদের নিয়ে কখনো এমন সাড়া জাগানো ঘটনা ঘটেনি।
পাহাড়ের সাথে লড়তে গিয়ে প্রথম ধাপে পরী জিতলেও দ্বীতিয় ধাপের সে গ্রেফতার হওয়ায় মনে হয়েছিল তার ক্যারিয়ার বোধ হয় শেষ হয়ে গেল। গ্রেফতারের দিন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত যা ঘটেছে তা পরীমনিকে হিরো বানিয়ে দিয়েছে। কিভাবে হিরো হলো তা জানতে হলে পড়ুন নিচের অংশ।
পরীমনি ২৭ দিন জেল খেটে কারাগার থেকে বের হয়ে যা করেছে তাতে সব লস উসুল হয়ে গেছে। এই ধরণের কলঙ্কিত ঘটনায় যারা গ্রেফতার হয় তারা লজ্জায় ঘুমটা টেনে নিজেকে লুকিয়ে নিয়ে জেলে যায় এবং ফেরে। পরীমনির ক্ষেত্রে এটা একেবারেই উল্টো হয়েছে।
পরীকে গ্রেফতারের দিন কি ঘটেছিলঃ র্যাব পুলিশসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার শত শত সদস্য তার বাড়ি ঘেরাও করেছে। এতে ভেঙে পড়ে ‘হায় হায় কি হল’ বলে ঘরের মেঝেতে ফিট হয়ে যাননি। হতাশায় ভেঙে পড়ে বিলাপও করেননি। বরং নিজেকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে ফেসবুক লাইভে এসে এক ঝটকায় পুরো দেশের নজর তাঁর দিকে টেনে এনেছেন।
প্রায় ঘন্টাব্যাপি তার গ্রেফতারপূর্ব বিষয় গুলো প্রায় প্রতিটি টেলিভিশন দু’আড়াই ঘন্টা ধরে লাইভ সম্প্রচার করেছে। গ্রেফতারের পর সালোয়ার কামিজ বা শাড়ি নয়, প্যাণ্ট-শার্ট পরে রাজনৈতিক নেতার মতো করে পুলিশের গাড়িতে উঠেছে। অন্যদের মত মুখ ঢেকে, মাথা নীচু করে রাখেননি। মাথা সোজা রেখে স্মার্টলি হেঁটেই গাড়িতে উঠেছেন। এমন পরিস্থিতিতে খুব কম মানুষই এমনটা পারেন।
এরপর থানা হাজত, আদালত, রিমাণ্ডে আদালত থেকে থানায় যাওয়া আসার পথে পরীমনি অসম্ভব দৃঢ়চেতা,সাহসী মানুষের অভিব্যক্তি দেখিয়েছে। শ’ শ’ পুলিশের সাথে সামনে থেকে সে যখন হেঁটে গেছে তখন তার ড্রেস, হাঁটার ভঙ্গি দেখে তাকে আসামী বলে মনেতো হয়ইনি বরং ছবির দিকে তাকালে মনে হয়েছে বিশাল মাপের কোন রাজনৈতিক নেতা রাজসিক নিরাপত্তার ছায়ায় জনসভায় ভাষণ দিতে যাচ্ছেন। আদালত প্রাঙ্গনে তাকে সাধারণ মানুষের মত কারও করুণা প্রার্থনা করতে বা অসহায়ের মত কাঁদতে দেখা যায়নি। বরং মিডিয়াকে লক্ষ্য করে চিৎকার করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করতে দেখা গেছে। যেমনটা দেখা যায় পোড়খাওয়া রাজনৈতিক নেতাদের ক্ষেত্রে।
জেল থেকে বের হবার পর তার রাজসিক প্রত্যাবর্তন এমনকি সম্প্রতি তার ফোনালাপও ভাইরাল হয়েছে। পরিমনি বলেছে, এতদিন নাকি সে দু:স্বপ্নের মাঝে ঘুমিয়ে ছিল। পরিমনিসহ অনান্যদের মামলার তত্বাবধায়ক তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজিকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। পরিমনিকে বারবার রিমান্ডে দেয়ার ব্যাখা দিতে দুই ম্যাজিষ্ট্রেটকে হাইকোট তলব করেছে। হাইকোর্ট বলেছে, পরিমনির রিমান্ড চেয়ে তদন্ত কর্মকর্তার আবেদন ম্যাজিষ্ট্রেট কিভাবে মঞ্জুর করলেন তা বোধগম্য নয়। ১০ দিনের মধ্যে দুই ম্যাজিষ্ট্রেটকে ব্যাখ্যাসহ প্রতিবেদন দিতে হবে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে ১৫ সেপ্টম্বর হাইকোর্টে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনা পরীকে যে নায়িকা থেকে মহা নায়ক বানিয়ে দিয়েছে তা অস্বিকার করা যায়না।
এতসব ঘটনা যাকে নিয়ে তার কোন ভাবনাই নেই। ফোন আলাপে পরিমনি বলছে, তার ওজন বেড়ে গেছে। এক হাতে মেহেদী দিয়ে লিখেছে। কারাগার থেকে বের হবার সময় খোলা জীপে দাড়িয়ে অপেক্ষামান জনতাকে সেই একহাত দেখায়িছে।
সর্বশেষ চমকঃ কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে মলিন পোষাকে মিডিয়ার ক্যামেরা এড়িয়ে কিংবা কালো কাঁচের গাড়িতে উঠে গোপনে বাড়ি যাননি। বরং অত্যন্ত ঠাণ্ডামাথায় সে তার পরিকল্পনা সাজিয়েছে।
ধবধবে শুভ্র সাদা ড্রেস পরে, সাদা রঙের ওড়নাকে পাগড়ির মত করে মাথায় বেঁধে চারপাশ হাসিতে আলোকিত করেই সে বাড়ি ফিরেছে। এই ফিরে যাবার সময়ও সে হাতের তালুতে মেহেদীর রঙে কিসব লিখে-এঁকে সবাইকে ধাঁধাঁয় ফেলে দিয়ে গেছে। এখন চলছে ওই সাদা হাতের নকশায় লেখাটি কাকে উদ্দেশ্য করে লেখা তার রহস্যভেদের ইঁদুর দৌড়।
এবার বলুন পরীমনি অবলা নারী? অতি সাধারণ মানের নায়িকা? নাকি একটি ঘটনার মহানায়ক?
ডা.গুলজার হোসেন উজ্জ্বল লিখেছেন, জেলখেটে বেরিয়ে আসার পর মান ইজ্জত বৃদ্ধি পাওয়ার রেওয়াজটা আবহমান বাংলার হাজার বছরের পুরনো সংষ্কৃতি৷
–প্রতবেদনটি লিখেছেন প্রখ্যাত সাংবাদিক ও আইনজ্ঞ আলী আসগর স্বপন। লেখাটি সম্পাদনা করেছে দৈনিক দেশতথ্যের ঢাকা ডেস্ক।
এবি/০৩ সেপ্টম্বর/২০২১
প্রিন্ট করুন
Discussion about this post