দুই ছেলে ও বউমার নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন সত্তোর্ধ্ব বয়সী এক মা। ছেলে ও ছেলের বউয়ের হাতে মারধরের শিকার হয়ে হাসপাতালে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। তার সাথে মারধরের শিকার হাসপাতালে যন্ত্রণা পোহাচ্ছেন বড় বউমা মাহমুদা আক্তার।
বারবার চলতে থাকা নির্যাতন সইতে না পেরে নিরুপায় হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযুক্তরা হলেন মেজো ছেলে আব্দুল হামিদ (৩৮), হাবিবুল ইসলাম হাবিব (৩৫) ও হামিদের স্ত্রী জান্নাত (৩০)। ঘটনাটি ঘটেছে তেঁতুলিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের কলোনীপাড়া গ্রামে।
নির্যাতিত মা অভিযোগে জানান, দীর্ঘদিন যাবত মেজো ছেলে আব্দুল হামিদ ও ছোট ছেলে হাবিব মাদকাসক্তের আচরণ করে আসছে। এ নিয়ে এলাকার মানুষ মাদকের বিষয়টি জানালে অভিভাবক হিসেবে এসব পরিহার করতে বলায় তারা আমার উপর ক্ষীপ্ত হয়ে উঠে। মানসিক নির্যাতন চালায়। গত সোমবার ঘরের নির্মাণ কাজ নিয়ে ছোট ছেলে হাবিব বড় ছেলে হাফিজুলের বউ ফাহমিদা আক্তারকে কোদাল দিয়ে মাথায় আঘাত করে। আঘাতের কারণে খুব রক্তপাত হওয়া আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করি।
পরে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফিরলে আমাকে দেখেই তারা গালিগালাজ করতে থাকে। গালিগালাজের কারণ জানতে চাইলে তারা ধারালো ছোরা দিয়ে আমাকেও মাথায় আঘাত করে। এতে করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। এরপরেও মেজো ছেলের বউ জান্নাত আমার উপর নির্যাতন চালায়। এ সুযোগে আমার ঘরে ঢুকে ট্রাংকের তালা ভেঙ্গে বড় ছেলে হাফিজুলের আমার কাছে রাখা জমি বিক্রির ৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা, আমার এবং হাফিজুলের স্ত্রীর স্বর্ণ-গহনা নিয়ে যায়। আমার চিৎকার শুনে এলাকাবাসী ঘটনাস্থলে আসলে তাদেরকেও হুমকি প্রদর্শন করে। পরে আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মা হয়ে দুই ছেলে ও বউয়ের নির্যাতন আর সইতে পারছি না। তাই বাধ্য হয়েই থানায় অভিযোগ করতে হয়েছে। আমার মতো কোন অসহায় মা এরকম পরিস্থিতিতে না পড়েন।
অসহায় মা আরও জানান, ২৯ বছর আগে আমার স্বামী তিন পুত্র ও ১ মেয়ে রেখে মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর অতি কষ্টে দিনাতিপাত করে সন্তানদের লালন পালন করেছি। তারা বড় হয়ে এখন আর আমার খোঁজ খবর নেয় না। কি খাই, না খাই কোন খবর না নিয়ে বরঞ্চ দীর্ঘদিন ধরেই দুই ছেলের দ্বারা মানসিকসহ নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছি।
মাহমুদা আক্তার জানান, হামিদ ও হাবিব প্রায়ই আমাদের রক্তচক্ষু দেখিয়ে আসছে। তারা মাদকাসক্ত হওয়ায় এলাকার লোকজনের বিভিন্ন কথাবার্তা শুনে শ্বাশুড়ী মা এসব ছেড়ে দিতে বারবার অনুরোধ করেন। ঘটনার দিন আমরা বাড়ির কাজ করছিলাম। বাড়ির ঘরের সিড়ির কাজ করলে তারা বাধা দেয়, আর সিড়িটি ভেঙ্গে দেয়। তাতে প্রতিবাদ করলে তারা মাথায় কোদাল দিয়ে আঘাত করলে কেটে যায়। দু’তিনটি সেলাই করা হয়েছে। আমাকে মারায় যতো না কষ্ট হচ্ছে, তার চেয়ে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে গর্ভধারিণী মাকে তারা দিনকে দিন নির্যাতন করছে। খরচ তো দিচ্ছেই না, খবরও নেয় না মায়ের।
বড় ছেলে হাফিজুল ইসলাম জানান, আমি তো থাকি বাইরে। ইতিমধ্যে আমার অংশ জমি বিক্রি করেছি। বাড়িতে থাকার ঘর নির্মাণ করছি। ঘটনার দিন সকালেই আমার কর্মস্থল দিনাজপুরে চলে যাই। পরে শুনি আমার স্ত্রীকে মারধর ও মাকে মারধর করেছে। অথচ ওই দুই ভাইকে সবচেয়ে বেশি উপকার আমি করেছি। কিন্তু তারা মাকে মারলো আমার স্ত্রীকে কোদাল দিয়ে মাথায় আঘাত করেছে। পরিবারে ভাইদের হাতে এভাবে বারবার নির্যাতন অসহনীয়, ন্যায় বিচার চাচ্ছি।
তেঁতুলিয়া মডেল থানার ওসি (তদন্ত) জাহেরুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে দুই ছেলের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। মামলার প্রক্রিয়া চলছে। # ০৭/১২/২১