দৌলতপুর প্রতিনিধি ॥ কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে মহান বিজয় দিবসে এক ইউপি চেয়ারম্যানের কালো পতাকা উত্তোলনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। এ দিন কালো পতাকা তুলে ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ মণ্ডল কার্যত নিজের অজ্ঞতারই প্রকাশ ঘটিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। সিরাজ মণ্ডল উপজোলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ভাগজোত বাজারে চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে বিজয় দিবসের দিনেও এই কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। এ ঘটনায় উপজেলাজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে চেয়ারম্যানকে নিয়ে তীর্যক মন্তব্যও করছেন। পরে কালো পতাকাটি সেখান থেকে সরিয়ে ফেলেন চেয়ারম্যান। জানা যায়, ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে দৌলতপুর উপজেলা প্রশাসনের মূল উৎসব আয়োজন ছাড়াও উপজেলার ১৪ ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য রাজনৈদিক দল ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং বিভিন্ন প্রদিষ্ঠানের উদ্যোগে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ বিজয় দিবসের কর্মসূচি পালন করে। তবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কর্মসূচির বাইরেও চেয়ারম্যান সিরাজ মণ্ডলের উদ্যোগে ভারতীয় সীমান্তবর্তী ওই ইউনিয়নের ভাগজোত বাজারে তার কার্যালয়ের সামনে জাতীয় পতাকা, দলীয় পতাকা ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। স্থানীয়রা জানান, দৌলতপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সিরাজ মণ্ডল প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পতাকা উত্তোলন করেন। তবে পতাকা তোলার সময় তার সঙ্গে আর কারা ছিলেন তা জানা যায়নি। এরপর জাতীয় ও দলীয় পতাকার সঙ্গে মাঝখানে উড়তে থাকে কালো পতাকাটিও। পরে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এ নিয়ে পুরো উপজেলাব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজ মণ্ডল।
পরে ব্যাপক সমালোচনার মুখে সিরাজ চেয়ারম্যানের নির্দেশে তার লোকজন সেখান থেকে কালো পতাকাটি সরিয়ে ফেলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, যে পাইপ দিয়ে পতাকাটি ওড়ানো হয় সেই পাইপটি গোড়া থেকে উপড়ে ফেলা হয়। পরে সেটির জায়গা হয় চেয়ারম্যানের ওই ব্যক্তিগত কার্যালয়ের স্টোর রুমে।
এ ঘটনায় চেয়ারম্যান সিরাজ মণ্ডলের অজ্ঞতা আর অযোগ্যতাকেই দুষছেন অনেকে। চেয়ারম্যানের কাণ্ডজ্ঞানহীনতার কারণে বিজয় দিবসের দিনেও শোকের এই কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে বলে মন্তব্য তাদের। অনেকে চেয়ারম্যান সিরাজের প্রতি তীর্যক মন্তব্য করছেন। তাদের মতে, কোন দিবসে কোন পতাকা ওড়ানো হয় তা একজন আওয়ামী লীগ নেতা বা চেয়ারম্যানের না জানার মধ্য দিয়ে মূলত তার চরম দৈন্যদশাই ফুটে উঠেছে। এ ধরনের অযোগ্য ও অজ্ঞ ব্যক্তির জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টিও তাদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে।
জাতীয় শোক দিবস ও মহান শহীদ দিবস ছাড়া বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবসে কালো পতাকা উত্তোলনের বিধান নেই। কিন্তু অজ্ঞ চেয়ারম্যান সিরাজ মণ্ডল তা উপেক্ষা করে বিজয় দিবসের দিনেও জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকার সঙ্গে কালো শোক পতাকা উত্তোলন করে কার্যত অপর দুটি পতাকার অবমাননা করেছেন বলেও অনেকে মনে করছেন।
রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান বলেন, ‘সিরাজ চেয়ারম্যান বিজয় দিবসে কালো পতাকা উত্তোলন করে চরম অযোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ মেনে চলা কারো পক্ষেই এমনটা করা সম্ভব নয়। শুধু এই পতাকার বিষয়ে নয়, নানা কারণেই বারবার বিতর্কিত হয়েছেন এই চেয়ারম্যান। আমরা তার এ ধরনের কাণ্ডজ্ঞানহীন ঘটনার নিন্দা জানাই।’
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান সিরাজ মণ্ডল দাবি করেন, যে কালো পতাকা উত্তোলন নিয়ে সমালোচনা করা হচ্ছে সেটি বিজয় দিবসের না, এই পতাকাটি ১৫ আগস্টের জাতীয় শোক দিবসের ছিল। একটি মহল উদ্দেশ্যমূলকভাবে সেটি এখন সামনে এনে অপপ্রচার করছে। কিন্তু ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে কালো পতাকা ও জাতীয় পতাকা সমভাবে বা একই উচ্চতায় ওড়ানো যায় না, সেখানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। এক্ষেত্রে তিনটি পতাকাই সমানভাবে উড়তে দেখা যাচ্ছে কেন? এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি আলোচিত চেয়ারম্যান সিরাজ মণ্ডল।

Discussion about this post