পরিচালক মোহাম্মদ আরাফাতুর রহমানের গল্প, চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় নির্মিত চলচ্চিত্র “ণাঋ” এই উপমহাদেশের সাম্প্রতিক বছরগুলোর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর এবং চাঞ্চল্যকর কিছু বাস্তব ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত। এই ঘটনাগুলির মধ্যে একটি হল, ২০১২ সালে দিল্লিতে চলন্ত বাসে ২৩ বছর বয়সী ছাত্রী জ্যোতি সিংকে ধর্ষণ ও হত্যা। ছবিটি নারীর স্বাধীনতা, নিরাপত্তা এবং অধিকারের একটি প্রতিচ্ছবি যা যুগ যুগ ধরে সমাজে আবর্তমান নারী চরিত্রগুলির মধ্যে দিয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। সমাজের বিভিন্ন অবস্থানে থাকা এমন পাঁচটি ভিন্ন নারী চরিত্রের মন্তাজ হচ্ছে এই ছবির প্রতীকি ভাষা। “ণাঋ” দর্শকের মাঝে এমন একটি অনুভূতির অনুসন্ধান করে যা স্থান-কালের সীমা পেরিয়ে আচ্ছন্ন নৈতিকতাকে ভেদ করে , সত্তার গভীরে স্পর্শ করতে পারে।
বাংলাদেশের নৈসর্গিক জেলা শহর যশোর থেকে এইচএসসি পাস করার পর, আরাফাত তার নিজের শহর ছেড়ে ঢাকায় আসনে এবং স্ট্যামর্ফোড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে ফিল্ম এন্ড মিডিয়া স্টাডিস ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হন। তিনি ডিরেকশনে স্পেশালাইজেশন নিয়ে অনার্স সম্পন্ন করনে। এই সময়কালে তিনি তার দক্ষতাকে শানিত করেন এবং স্টুডেন্ট, ইন্ডিপেন্ডেন্ট এবং বাণিজ্যিক প্রযোজনায় কাজ করে মূল্যবান অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। কয়েকটি পুরস্কার-বিজয়ী স্বতন্ত্র শর্ট ফিল্ম এবং ডকুমেন্টারি নির্মানের পরে তিনি ডিপ্লোমার জন্য বাংলাদেশ ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটে নথি ভুক্ত হন। তার পরবর্তী গন্তব্য ছিল ইনস্টিটিউট অফ ফাইন আর্টস, কলকাতা, যেখানে তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণে ডিপ্লোমা করেন। তার সর্বশেষ স্বাধীন চলচ্চিত্র হল “ণাঋ”।
ছবিটির অত্যন্ত সাহসী ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সাদিয়া ইসলাম মৌ ও প্রীতিলতা নূর সহ কোলকাতার সুভলিনা সেন, দেবলীনা সেন চাধা এবং দেবলীনা রায়। কয়েক বছর ধরে ছবিটি বাংলাদেশের বিভিন্ন লোকেশন ছাড়াও ভারতের বেশ কিছু লোকেশনে শুটিং করা হয়েছে। পরিচালকের কাছ থেকে জানা যায়, ছবিটির মেকআপ, কস্টিউম থেকে শুরু করে সেট ডিজাইন , আলোকসজ্জা ও পশুপাখি ব্যাবহার ইত্যাদি অত্যন্ত কঠিন ছিল। তিনি আরও জানান, অর্থায়নের সংকট থাকা সত্বেও ছবিটির কারিগরি ও নান্দনিক বিষয়ে র্সবাত্বক মনোযোগ দেয়া হয়েছে। ছবিটিতে দুই বাংলার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কলাকুশলী ছাড়াও স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করেছেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ও ইনস্টিটিউট অফ ফাইন আর্টস, কলকাতার ছাত্রছাত্রীরা। কারিগরি সহায়তায় ছিল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন, ধ্বনিচিত্র ও ফায়ারড্রাম।
ছবিটি মূলত ৮ টি ভিন্ন দৃশ্যের মন্তাজ, যেখানে দৃশ্যের চরিত্র বা ঘটনাগুলরি মধ্যে কাহিনীগত কোন সর্ম্পক নাই। তবে সবগুলি দৃশ্যেই উপমহাদেশীয় নারীর প্রতিমূর্তি বিদ্যমান। সাদিয়া ইসলাম মৌ অভিনীত দৃশ্যটি বাংলাদেশের ঢাকা জেলায় শুটিং করা হয়। এই ছবির গল্পের বিষয়বস্তু ও পরিচালকের ভাবনা তাকে ভীষণভাবে নাড়া দেয় বলইে প্রথমবারের মতো স্বল্পদৈর্ঘ্য স্বাধীন চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে আগ্রহী হন বলে জানান এই অভিনেত্রী।
ছবিটির প্রিমিয়ার শো উপলক্ষে “ণাঋ”র অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে অভিনন্দন বার্তা পোস্ট করেছেন দেবলীনা রায়, দেবলীনা সনে চাধা এবং ছবির অপর একটি চরিত্রের অভিনেতা জয় বদলানি তারা সকলেই ছবিটি দেখার জন্যে দর্শকদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
নারীর অধিকার ও স্বাধীনতার জন্য চলমান লড়াইয়ে প্রতি দর্শকের সচেতনতাকে নাড়া দেবার জন্যে উপযুক্ত এই ছবিটি প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে প্রদর্শিত হতে যাচ্ছে। রেবেকা সুলতানা প্রযোজিত, ২৬ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের ছবি “ণাঋ” আনুষ্ঠানিকভাবে ২১তম ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শনীর জন্য “স্বল্পদৈর্ঘ্য ও স্বাধীন চলচ্চিত্র বিভাগে”-এ নির্বাচিত হয়েছে। ছবিটির পরিচালক এ-সম্পর্কে বলেন- “বিভিন্ন বয়সী নারীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে ণাঋ। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে এরকম একটি ছবি বাংলাদেশের সবচাইতে সমাদৃত চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানোর সুযোগ পাচ্ছি। এতে করে ছবির মেসেজটি অনেকের কাছে পৌঁছে যাবে বলে আশা করছি।
রেইনবো ফিল্ম সোসাইটি আয়োজিত ২১তম ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল এ “ণাঋ” ছবিটির স্ক্রিনিং সময়সূচী:
প্রিমিয়ার শো:
স্থানঃ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেম জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তন, ঢাকা-১০০০
সময়: ১৫/০১/২৩, রবিবার বিকাল ৫টা
২য় শো:
স্থান: বাংলাদশে শল্পিকলা একাডমেী, জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা মলিনায়তন, ঢাকা-১০০০
সময়: ১৬/০১/২৩, সােমবার, বকিাল ৫টা
Discussion about this post