Print Date & Time : 12 September 2025 Friday 8:05 pm

নির্ভার আওয়ামীলীগ-ভিতরে-ভিতরে নির্বাচনের প্রস্তুতি বিএনপি’র

এক সময় বিএনপি’র শক্ত ঘাঁটি ছিল কুষ্টিয়া। দীর্ঘদিন এখানকার সবকটি আসনই বিএনপির দখলে ছিল। কিন্তু বিএনপির সেই দুর্গ এখন আর নেই। বিএনপির শক্তিশালী সেই দুর্গে ফাটল ধরিয়েছে আওয়ামীলীগ। পর-পর তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখানে আওয়ামীলীগ এবং তাদের শরিক ১৪ দল সবগুলো আসন ধরে রেখেছে।
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি’র দুর্গে আঘাত এনে আওয়ামীলীগের এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন খন্দকার রশীদুজ্জামান দুদু। তাঁর মৃত্যুর পর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে দলীয় মনোনয়ন পান বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা মাহাবুব উল আলম হানিফ সে সময় কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনের বাসিন্দা ছিলেন।

জোটগত নির্বাচনের কারণে ওই আসনটি তাঁকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে ছেড়ে দিতে হয়। ফলে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসন থেকে হানিফ প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও মাহাবুব উল আলম হানিফ এ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাহাবুব উল আলম হানিফ এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগে করছেন। প্রায় প্রতি সপ্তাহে তিনি ঢাকা থেকে কুষ্টিয়ায় ছুটে এসে গণসংযোগসহ নানা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছেন। নেতা-কর্মীরা বলছেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে নানা কারণে কুষ্টিয়া জেলা ছিল অবহেলিত জনপদ গুলোর মধ্যে অন্যতম।

আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় নেতা মাহাবুব উল আলম হানিফ এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তাঁর জাদুকরি হাতের স্পর্শে বদলে যেতে থাকে অবহেলিত এই জনপদের চিত্র। এলাকার রাস্তাঘাট নির্মাণ, বাইপাস সড়ক, হরিপুর-কুষ্টিয়া সংযোগ সেতু, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজসহ ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ডে দৃশ্যতই বদলে গেছে অবহেলিত গোটা এই জনপদের চিত্র। ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজের জন্য একদিকে যেমন তিনি জনপ্রিয়তার চূড়ায় অবস্থান করছেন তেমনি নির্বাচনী এলাকার মানুষ-জনের কাছেও ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়ে আছেন। তাই সার্বিক বিবেচনায় নেতা-কর্মীরা মনে করছেন এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও মাহাবুব উল আলম হানিফের কোন বিকল্প নেই। তবে হেভিওয়েট প্রার্থী হানিফ ছাড়াও আওয়ামী লীগের মানোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, বিএমএ কুষ্টিয়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ ডাঃ এ.এফ.এম আমিনুল হক রতন।

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামীলীগের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের পাশাপাশি বিএনপির সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রার্থীরা দলীয় কর্মসূচীর মাধ্যমে ভিতরে ভিতরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিএনপি থেকে এ আসনে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন, কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকারের পাশাপাশি দলের মধ্যে ক্লিন ইমেজের অধিকারী কুষ্টিয়া জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট শামিম উল হাসান অপু বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মত এবারও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার এ আসন থেকে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেলেও আওয়ামীলীগের হেভিওয়েট প্রার্থী মাহাবুব উল আলম হানিফের কাছে পরাস্ত হন। অপরদিকে জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছেন জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি নাফিজ আহমেদ খান টিটু।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ ইনু) প্রার্থী জেলা জাসদের সভাপতি গোলাম মহসিন, জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ফরহাদ হুসাইন ভিতরে ভিতরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখছেন। নির্বাচন প্রসঙ্গে কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আজগর আলী বলেন, ”বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর আসনের সংসদ সদস্য আমাদের নেতা মাহাবুব উল আলম হানিফের নেতৃত্বে যে কোন সময়ের চেয়ে কুষ্টিয়া জেলায় আওয়ামীলীগ অত্যন্ত শক্তিশালী ও সুসংগঠিত। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সব রকম প্রস্তুতি নেতা-কর্মীদের রয়েছে।”

নির্বাচন ও সার্বিক প্রস্তুতি সর্ম্পকে মন্তব্য করতে গিয়ে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট শামিম উল হাসান অপু বলেন, ”এই মুহূর্তে আমরা এই সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে এক দফা নি:দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন ছাড়া অন্য কিছু ভাবছি না। তবে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার মত প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে।”

এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লক্ষ ১১ হাজার ৭২৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লক্ষ ৩ হাজার ১০৭ জন। আর মহিলা ভোটারের সংখ্যা ২ লক্ষ ৮ হাজার ৬১৮ জন।

খালিদ সাইফুল // দৈনিক দেশতথ্য // ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩