নিজস্ব প্রতিবেদক : আজ রোববার, পহেলা কার্তিক বাউল সাধক লালন শাহ’র ১৩১ তম তিরোধান দিবস। করোনা মহামারীর কারণে সরকারিভাবে এবছরও বাউল স¤্রাট ফকির লালন শাহ’র তিরোধান দিবস পালন না করার সিদ্ধান্ত থাকলেও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই দিবসটি উদযাপন করছেন বাউল ভক্ত সাধু ও অনুসারীরা। প্রতি বছরের মত এবারও হাজারো বাউল ভক্ত ভিড় জমিয়েছেন কুষ্টিয়ার কুমারখালী উজেলার ছেঁউড়িয়াস্থ লালনের আখড়া বাড়িতে। ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে তাঁরা লালন একাডেমি চত্বর ও সামনের মাঠে অবস্থান নিয়েছেন। ইতোমধ্যে দেশের দুর-দুরান্ত থেকে ছুটে আসা কয়েক হাজার লালন ভক্ত বাউল ও সাধুগণ ভিড় করেছেন সাঁইজীর ধামে। একতারা,দোতরা হাতে নিয়ে তাঁরা গেয়ে চলেছেন লালনের গান।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমির আহ্বায়ক সাইদুল ইসলাম গত ১২ অক্টোবার প্রেস ব্রিফিং’র মাধ্যমে ঘোষণা দিয়েছিলেন, করোনা মহামারীর সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এবারও তিরোধান দিবস উদযাপন করা হবে না। একই সাথে দিবসটি উপলক্ষে সকল প্রকার গণজমায়েত এড়িয়ে চলারও আহবান জানিয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু সব বিধি নিষেধ উপেক্ষা করে কোন দাওয়াত পত্র ছাড়াই প্রতি বছরের মত এবারও কয়েক হাজার লালন বাউল ভক্ত আর সাধুরা এসে ভিড় করেছেন লালনের আখড়া বাড়িতে। আখড়াবাড়ির বাইরে লালন লালন একাডেমির মাঠে নিজস্ব রেওয়াজে ভক্তি-শ্রদ্ধা দিতে দেখা গেছে লালন অনুসারীদের।
নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা ফকির পবন শাহ বলেন, সাঁইজীর ধামে আসতে তাঁদের কোন দাওয়াত লাগেনা। আসেন মনের টানে। এখন সাঁইজিকে ভক্তি জানিয়ে চলে যাব। অভিযোগ করেন মেলা না হওয়ায় এবার ভক্ত অনুসারীদের এক প্রকার না খেয়েই থাকতে হচ্ছে। এদিকে সাধু সঙ্গ ও বাউল মেলা না হওয়ায় হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন অনেক বাউল, ফকির এবং লালন ভক্ত।
তারপরও আখড়াবাড়ির ভেতরে ও বাইরে চলছে জাতপাতহীন-মানবতার লালন দর্শনের প্রচার। বরাবরের মতো দর্শন প্রচার হচ্ছে তারই অমর বাণী আর গানের মাধ্যমে। কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়া এখন লালনের গানের সুরে প্রকম্পিত।
আজ থেকে প্রায় দুই শত বছর আগে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় বাউল-ফকিরদের দল গঠন করেছিলেন ফকির লালন সাঁই। অহিংস, জাতপাতহীন ও মানবতাবাদী গান বেঁধে প্রচার করতেন তাঁরা। দিনে দিনে তাঁর দল বড় হতে থাকে। বাড়তে থাকে অনুসারী ও ভক্তের সংখ্যা। আজ বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছে লালনের গান আর তাঁর অমর বাণী।
১২৯৭ বঙ্গাব্দের পয়লা কার্তিক দেহত্যাগ করেন ফকির লালন শাহ। এই ১৩১ বছর ধরে আখড়া বাড়িতে চলা রেওয়াজ হলো পহেলা কার্তিক লালনের তিরোধান দিবসে তাঁর মাজার ধুয়ে মুছে পরিস্কার করে বাউল-ফকিরদের জন্য অধিবাস, বাল্যসেবা এবং পূর্ণসেবার (খাবার) আয়োজন।
তিন দিন ধরে চলে লালনের জীবন ও দর্শন নিয়ে আলোচনা সভা, মেলাসহ সরকারি অনুষ্ঠানমালা। এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে দেশ বিদেশের লাখ লাখ মানুষ এতে অংশ নিতেন।
করোনার বাস্তবতায় দুই বছর বন্ধ এসব আয়োজন। ফকির-বাউলরা নিজেদের মতো করে সাঁইজিকে স্মরণ করতে পারছেন, এতেই তাঁরা খুশি। তাঁদের ভাষ্য মতে, ’সাঁইজির কৃপায় সব আঁধার কেটে যাবে। আবার সব স্বাভাবিক হবে।”
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post