নেছারাবাদ(পিরোজপুর)প্রতিনিধি:
এনজিও কর্মকর্তাদের গালিগালাজ সইতে না পেরে নেছারাবোদের এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন। এই ঘটনায় নেছারাবাদ থানায় একটি মামলা হয়েছে।
রকম কুলাংগার ছেলে আপনি কেন জন্ম দিয়েছেন। এই ছেলে জন্ম না দিয়া কলাগাছ জন্ম দিতেন, মানুষ কলা খাইত। আপনি মরেন না কেন? আপনি মরলেও আমরা বেঁচে যেতাম” এনজিওর মাঠ কর্মকর্তাদের এমন কথা সইতে না পেরে নেছারাবাদে একটি হতদরিদ্র পরিবারের তসলিমা(৫২) নামে এক গৃহবধূ গলায় ফাস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এ অভিযোগে নেছারাবাদ উপজেলার ইন্দেরহাট শাখার ‘ডাক দিয়ে যাই’ এনজিওর ছয়জনকে আসামী করে থানায় মামলা করেছে মৃত তসলিমার ছেলে মো: তামিম। ১৬ মার্চ (শনিবার) তসলিমার ছেলে তামিম বাদী হয়ে নেছারাবাদ থানায় মামলাটি দায়ের করেছেন।পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার উত্তর পশ্চিম সোহাগদল গ্রামে ৫নং ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটেছে।
মামলার আসামীরা হলেন ফিল্ড অফিসার সমির চন্দ্র ঘোষ, মো: সাইফুর রহমান, মো: আহাদ হোসেন, নির্বাহী পরিচালক মো: শাহজাহান গাজী, এরিয়া ম্যানেজার মো: আসাদ্দুজামান মিলন, ব্রাঞ্চ ম্যানেজার মো: দ্বীপঙ্কর শীল। মামলায় আসামীদের পরস্পর যোগসাজসে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেয়ায় ওই গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ। তবে এখনো মামলার কোন আসামীকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। পুলিশ বলছেন তারা পলাতক রয়েছে। তবে ওই এনজিওর পরিচালক মো: তাজুল ইসলাম খান বলেছেন, তারা অফিসের কালেকশনে মাঠে আছেন।
মামলার বাদী তামিমের অভিযোগ, তার ছোট ভাই মিরাজ নিজ স্ত্রীর নামে ইন্দেরহাট শাখা ডাক দিয়ে যাই এনজিও থেকে চল্লিশ হাজার টাকার একটি ঋন নেয়। যে ঋনে মিরাজ তার মা তসলিমাকে স্বাক্ষী রাখে। মিরাজ কয়েকটি কিস্তি পরিশোধের পর বাড়ী থেকে সটকে পড়ে। কিস্তি খেলাপি হওয়ায় এনজির লোকেরা যখন তখন বাড়ীতে এসে মাকে চাপ দিচ্ছিল। ঘটনার দিন ১৩ মার্চ সন্ধ্যার পরে মামলার এক থেকে তিন নং আসামী বাড়ীতে এসে মাকে নানান কথা বলে। এক পর্যায় মাকে বলে “এই রকম কুলাংগার ছেলে আপনি কেন জন্ম না দিয়েছেন। এই ছেলে জন্ম না দিয়া কলাগাছ জন্ম দিতেন, মানুষ কলা খাইত। আপনি মরেন না কেন? আপনি মরলেও আমরা বেচে যেতাম”। তাদের এমন কথায় আমার মা তসলিমা রাতেই বাড়ী থেকে বের হয়ে যায়। পরদিন সকালে বাড়ীর পাশে একটি বাগানের মধ্য জাম্বুরা গাছে গলায় লাইনোর দড়ি পেচানো ঝুলন্ত লাশ পেয়েছি। তিনি বলেন ডাকদিয়ে যাই এনজিওর লোকদের এমন কথায় মা আত্মহত্যা করেছে।
নিহত তসলিমার স্বামী দিনমজুর মো: মোস্তফা অভিযোগ করে বলেন, যেহেতু তাদের ছোট ছেলে মিরাজ লোন নিছে। তাই এনজিওর চাপে আমরা স্বামী স্ত্রী দিনমজুরি করে সপ্তাহে তিনশত টাকা কিস্তি দিতে চেয়েছিলাম। তারা না মেনে আমার স্ত্রীকে যা ইচ্ছা তাই বলেছে। তাদের কথা সইতে না পেরে স্ত্রী আত্মহত্যা করেছে।
ডাক দিয়ে যাই এনজিও এর পরিচালজ মো: তাজুল ইসলাম খান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাদের ঋনগ্রহীতা কলি বেগম নামে এক গৃহবধূ অভিযোগকারি পরিবারের পুত্রবধূ। তারা ওই বাসাতে থাকত। তাই আমার অফিসের লোক তাদের বাসায় গিয়ে কলির শাশুড়ি তসলিমার কাছে কলি ও তার স্বামী মিরাজের ব্যাপারে জানতে চেয়েছিল মাত্র। আর কিছু নয়।
নেছারাবাদ থানার অফিসার ইন চার্জ (ওসি) মো: গোলাম সরোয়ার জানান, এ ব্যাপারে থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
খালিদ সাইফুল // দৈনিক দেশতথ্য // ১৬ মার্চ ২০২৪
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post