ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করা যাবে না এবং কোন ব্যক্তি আর্থিক লাভবানের ক্ষেত্রে তথ্য প্রদান করার একমাত্র ক্ষমতা ঐ ব্যক্তির নিজস্ব ব্যাপার বিষয় দুটো তথ্য অধিকার আইনে আরো বিস্তারিত বর্ণনা রাখার সুপারিশ জানায় পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফিন ।
পটুয়াখালী, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪: বাকস্বাধীনতা ও তথ্যের অবাধ অভিগম্যতা নিশ্চিতের মাধ্যমে স্বপ্নের “নতুন বাংলাদেশ” বিনির্মাণে অপরিহার্য হিসেবে তথ্য কমিশনকে দলীয়করণের সংস্কৃতি থেকে রক্ষা করে আমূল সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) পটুয়াখালী।
আন্তর্জাতিক তথ্য জানার অধিকার দিবস ২০২৪ উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় সনাক আরো বলেন, অতীতের তথ্য গোপনীয়তার সংস্কৃতি যেন কোনোভাবেই আর চর্চায় ফিরে না আসে, তথ্য অধিকারের সুফল জনগণ যেন বাস্তবিক অর্থেই পায়। সার্বজনীন তথ্য অধিকার, প্রবেশগম্যতা ও জন-অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তথ্য অধিকার আইনের যুগোপযোগী সংশোধনসহ ১৩ দফা সুপারিশও করা হয় সনাক, পটুয়াখালীর পক্ষ থেকে।
জেলা প্রশাসন, পটুয়াখালী ও সনাক-টিআইবি পটুয়াখালীর আয়োজনে আজ (শনিবার) সকাল ১০ টায় জেলা প্রশাসন কম্মেলন কক্ষে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জনাব যাদব সরকার। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, পটুয়াখালী জনাব আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফিন। সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার, পটুয়াখালী জনাব মো: আনোয়ার জাহিদ ও সনাক পটুয়াখালীর সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট সহিদুর রহমান।
সভায় তথ্য উপাত্ত ও তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ বিষয়ে একটি প্রেজেন্টেসন প্রদান করেন সনাক-টিআইবির এরিয়া কোঅর্ডিনেটর সুকুমার চন্দ্র মিত্র। এ সময়ে ওয়েব পোর্টাল স্টাডির তথ্যও উপস্থাপন করা হয় এবং যে সকল প্রতিষ্ঠান তথ্য আপডেট করে নাই তাদের জেলা প্রশাসন এর পক্ষ থেকে একটি নির্দেশনা প্রদানের সুপারিশ করা হয়।
প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, পটুয়াখালী জনাব আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফিন তার আলোচনায় বলেন, টিআইবির সকল তথ্য প্রকাশিত। তারা স্বচ্ছতার সাথে জবাব প্রদান করে এবং যে সকল তথ্য উপাত্ত¦ তুলে ধরেন তা যথার্থ গ্রহণযোগ্য। এটা নিয়েও কোন কোন মহল তাদেরকে নানাভাবে হেনস্থা করার চেস্টা করেছে কিন্তু মিথ্যা প্রমানিত করতে পারেনি। তিনি সনাক-টিআইবির কাছে অনুরোধ করেন যদি সম্ভব হয় তথ্য অধিকার আইনের কিছু কিছু জায়গায় সংস্কার করে আরো বিস্তারিতভাবে লিপিবদ্ধ ও সংযুক্ত করে আইনটি প্রয়োগের ক্ষেত্রে সহায়তা করা। তিনি সুপারিশ করেন, আইনে আছে ‘ব্যক্তির জীবন বা শারীরিক নিরাপত্তা বিপদাপন্ন হতে পারে’ এরকম তথ্য প্রদান করা যাবে না। কিন্তু এখানে আরো ব্যাখ্যা থাকা দরকার। এছাড়া কোন ব্যক্তি যদি আর্থিক লাভবান হয় সেই তথ্য অনেক ক্ষেত্রেই প্রকাশ করা হয় তাতে ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে বা বিপদে পড়তে পারে। এখানেও আইনের আরো বিশদ ব্যাখ্যা থাকা দরকার।
বক্তারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে রহিত করা, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে তথ্য কর্মকর্তার নাম ফলক ও তথ্য প্রদানে সহায়তা করার জন্য বলেন। টোল, সেতু, ঘাট ইজারা নেয়া, প্রকপ্লের বাজেট ও ব্যায় এর হিসাব কর্মচলাকালীন ঐ স্থানে থাকা দরকার এবং জনগনের কাজ জনগনের হাতে বুঝিয়ে দিয়া টেন্ডারগ্রহণ করা প্রতিষ্ঠানকে নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া সভায় সার্বজনীন তথ্য অধিকার, প্রবেশগম্যতা ও জন-অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সনাক-টিআইবি ১৩ দফা সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে।
বাকস্বাধীনতা ও ভিন্নমতের অধিকার নিশ্চিতের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে তথ্য অধিকার আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন, সকল আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ, বিশেষ করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও সাইবার নিরাপত্তা আইনের মত কালো আইনের মাধ্যমে সৃষ্ট জনগণের ওপর ডিজিটাল নজরদারী কাঠামো নিশ্চিহ্ন করা; তথ্য কমিশনকে অধিকতর কার্যকর করার স্বার্থে স্বচ্ছপ্রক্রিয়ায় যোগ্য ও দলীয় প্রভাবমুক্ত ব্যক্তিদের কমিশনার হিসেবে নিয়োগ প্রদানসহ এই সংস্থাটিকে সম্পূর্ণভাবে ঢেলে সাজানো; তথ্যপ্রকাশ ও তথ্যে অভিগম্যতার সুবিধার্থে ডিজিটাল টুলসের ব্যবহার সহজলভ্য ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন; তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯Ñ এর পরিপন্থি’ বিদ্যমান আইনসমূহ সংস্কার ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বাতিল করা; নতুন কোনো আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে তথ্য অধিকারের মূল চেতনার পরিপন্থি বা আইনটির কার্যকর বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে, এমন কোনো ধারা যাতে সংযোজিত না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা; তথ্য অধিকার আইনে তথ্য প্রাপ্তির জন্য প্রয়োজনীয় আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করা ইত্যাদি।
দিবসকে কেন্দ্র করে সনাক পটুয়াখালী গত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সকাল ১১ টায় সরকারি কলেজ, পটুয়াখালীতে তথ্য অধিকার আইন নিয়ে একটি ওরিয়েনেটশন করে। এছাড়া ঐদিন প্রশ্নোত্তর পর্ব, কুইজ প্রতিযোগিতা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

Discussion about this post