‘কমিটিতে স্থান পাওয়া একাধিক নেতা বিএনপির সাথে সংশ্লিষ্ট’
পটুয়াখালী ছাত্রলীগে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ঠাই নয় বড় আসনও পেয়েছেন। এ নিয়ে চলছে আলোচনা ও সমালোচনা।
গত ২২ মার্চ (বুধবার) পটুয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান আরিফ সাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তাদের ফেসবুক আইডি থেকে রাঙ্গাবালী উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করেছেন।
![](https://dailydeshtottoh.com/wp-content/uploads/2023/04/Psl.jpg)
অনেক নেতা কর্মী অভিযোগ করেছেন-তারা বলছেন রাঙ্গাবালী উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে স্থান পাওয়া একাধিক নেতার সাথে রয়েছে বিএনপির সংশ্লিষ্টতা। কারো পরিবার বিএনপির সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে সংশ্লিষ্ট। কেউ আবার পূর্বে সরাসরি জড়িত ছিলেন।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের উদ্দেশ্যে ১০ টি নির্দেশনা প্রদান করে ছিলেন। যার মধ্যে ছিল- জেলা, মহানগর, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সম্মেলন ব্যতীত তাদের অধীনস্থ কোন ইউনিটের কমিটি গঠন করা যাবে না। জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্য করে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কমিটি ঘোষণা করে সেই নির্দেশনা অমান্য করেছেন।
জানা গেছে ১৫ই মার্চ (বুধবার)পটুয়াখালী জেলা ছাত্রলীগ রাঙ্গাবালী উপজেলা ছাত্রলীগ ও রাঙ্গাবালী কলেজ ছাত্রলীগের কর্মীসভা করে নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে জীবন বৃত্তান্ত সংগ্রহ করে । পরবর্তীতে ফেজবুকে প্রেস বিজ্ঞপ্তির দিয়ে রাঙ্গাবালী উপজেলা ছাত্রলীগ ও কলেজ ছাত্রলীগের কর্মী সভা করে। কর্মীসভার এক সপ্তাহ পর গত ২২ মার্চ (বুধবার) পটুয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান আরিফ সাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তাদের ফেসবুক আইডি থেকে কমিটি ঘোষণা করা হয়।
গত বছরের ৯ নভেম্বর (বুধবার) কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সাইফুল ইসলামকে সভাপতি এবং তানভীর হাসান আরিফকে সাধারণ সম্পাদক করে পটুয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের ৫৭ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি ঘোষণা করার পর নবগঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক আরিফ’কে শুভেচ্ছা জানিয়ে আনন্দ মিছিল করে তার সমর্থকরা।
![](https://dailydeshtottoh.com/wp-content/uploads/2023/04/psl-6.jpg)
ওই আনন্দ মিছিলে বিএনপি ও শহীদ জিয়ার স্লোগান দেওয়ার একটি ভিডিও ফেইসবুকে ভাইরাল হয়। যা নিয়ে তাৎক্ষণিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হয়েছে। এমন ঘটনায় তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বিষয়টি নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন মন্তব্যে হতাশা প্রকাশ করেন। জেলা ছাত্রলীগের গায় বিএনপির গন্ধ লেগে থাকায় নেতা-কর্মীদের মাঝে তৈরী হয় হতাশা।
এ ঘটনার রেস কাটতে না কাটতেই আবার শুরু নতুন ঘটনার। রাঙ্গাবালী উপজেলা ছাত্রলীগের নব গঠিত কমিটির সভাপতি আরিফ হোসেন বিএনপির লোক। প্রমান হিসেবে দেখানো হয়েছে জেলা বিএনপির ফ্রন্ট লাইনের নেতাদের একটি ছবির ফ্রেম। ওই ফ্রেমে আছেন আরিফ। আরিফ একসময় ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী ছিলো। এ নিয়ে ফেজবুকে বিভিন্ন লেখালেখি চলছে।
রাঙ্গাবালী বার্তা নামের একটি ফেজবুক পেইজ থেকে জেলা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়েছে – ‘ছাত্রদলের ছেলেগুলোকে রাঙ্গাবালী উপজেলা ছাত্রলীগে জায়গা দেওয়ায় ধন্যবাদ সাইফুল-আরিফ।’
সমালোচকরা বলছেন, রাঙ্গাবালী উপজেলা ছাত্রলীগের ১নং সহ-সভাপতি মাহমুদ হোসেন টিটুর চাচা মোঃ শাহিন ফরাজী ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম-সম্পাদক ছিলেন। তিনি এখনো সরাসরি যুক্ত আছেন বিএনপির রাজনীতিতে।
![](https://dailydeshtottoh.com/wp-content/uploads/2023/04/psl-5.jpg)
৬ নং যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোঃ শিমুলের মা মোসাঃ সাহিদা গাজী ১৫ নং চরমোন্তাজ ইউনিয়ন বিএনপির কার্যনির্বাহী সদস্য।
২ নং সহ-সভাপতি মোঃ ইমরান মাহমুদের চাচা মোঃ আব্বাস উদ্দীন হাওলাদার বর্তমান উপজেলা বিএনপির যুগ্ম- সাধারণ সম্পাদক।
এখানেই শেস নয়, প্রথম প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে উপজেলা ছাত্রলীগের ২৪ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি প্রকাশ করা হয়। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই আরেকজন যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক মোঃ রায়হান এর নাম দিয়ে ২৫ বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে ফেইজবুকে প্রকাশ করেন সভাপতি-সম্পাদক।
নতুনভাবে যুক্ত হওয়া ওই যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোঃ রায়হান সরাসরি বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত। প্রমান হিসেবে তুলে ধরাপ হয়েছে রায়হানের একটি সেলফি। ওই সেলফিতে রায়হানকে দেখা যায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আলহাজ্ব এ বি এম মোশাররফ হোসেনের সাথে। এই ছবি নিজের ফেজবুক আইডিতে পোষ্ট করেছেন রায়হান।
![](https://dailydeshtottoh.com/wp-content/uploads/2023/04/psl-3.jpg)
আরো জানা গেছে ২৫ সদস্যের মধ্যে ১৫ জনই রাজনীতির সঙ্গে খুব একটা জড়িত নয়। ১০ জন বিএনপির সাথে ছিলেন সংশ্লিষ্ট।
জেলা ছাত্রলীগের একাধিক নেতা কর্মী জানান, জেলা কমিটির নেতাদের সাথে সমন্বয় না করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একক ক্ষমতা বলে কমিটি ঘোষণা করেছেন।
এ নিয়ে রাঙ্গাবালী উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা মোঃ নেছার খান বলেন, আমি চ্যালেঞ্জ নিয়ে বলতে পারি কমিটিতে যাদের রাখা হয়েছে তারা নন পলিটিক্যাল। কখনো তেমনভাবে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলো না। আর বাকি যারা আছে তাদের বিএনপির সাথে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। আমি উপজেলার সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ছিলাম। ছাত্রলীগের জন্য বহুবার হামলা-মামলার শিকার হয়েছি। অনেক শ্রম দিয়েছি। আমাকে কমিটিতেই রাখা হয়নি। যাদের রাখা হয়েছে তারা যদি যোগ্য হতো তবে আমার কোন বক্তব্য থাকতো না।
পটুয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক তানভীর হাসান আরিফের বিরুদ্ধেও রয়েছে বিএনপি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ। তার বাবা জামান গাজী পটুয়াখালী পৌর বিএনপির ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সম্পাদক। এ নিয়ে জেলা কমিটি গঠনের পূর্বে একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। আরিফের এই বিএনপি সংশ্লিষ্টতার খবর জানতো তৎকালীন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদক স্বয়ং। তবুও অলৌকিক ক্ষমতা বলে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে অধিষ্ঠিত হয় তানভীর হাসান আরিফ।
এ ব্যপারে আরিফ বলেন, আমি ও আমার পরিবার যদি বিএনপির সাথে সংশ্লিষ্ট থাকতাম তাহলে আমি জেলা ছাত্রলীগের সেক্রেটারি হতে পারতাম না।
অভিযোগের কোন প্রতিবাদ করেননি কেন? প্রতিবাদ না করার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে তিনি বলেন, আমার এই ঘটনার কোন ভিত্তি নাই। এগুলো মিথ্যা। এছাড়া স্পষ্ট কোন উত্তর মেলেনি সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যে।
![](https://dailydeshtottoh.com/wp-content/uploads/2023/04/Psl-4.jpg)
রাঙ্গাবালী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সহ অভিযুক্ত ৫ জন সদস্য কিভাবে কমিটিতে আসলো এমন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তিনি বলেন, আপনি প্রথমে কি বললেন সভাপতি বিএনপির সাথে সংশ্লিষ্ট? কিন্তু আমরা জানি এই ছেলে এর আগে উপজেলার সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলো। ও স্কুলজীবন থেকেই ছাত্রলীগ করে৷ তাছাড়া আমরা উপজেলা আওয়ামী লীগ, স্থানীয় সংসদ সদস্য সহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করেই কমিটি দিয়েছি। এরপরেও যদি এমন অভিযোগ থেকে থাকে আর তা যদি সত্যি হয় তবে আমরা অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যাবস্থা নিব।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলামকে রাঙ্গাবালী উপজেলা ছাত্রলীগের নব-গঠিত কমিটির এই আলোচনা-সমালোচনা নিয়ে মুঠোফোনে প্রশ্ন করতে চাইলে তিনি ব্যস্ত থাকার অজুহাত দেখিয়ে, পরে যোগাযোগ করতে বলে ফোন কেটে দেন। তার পরবর্তীতে তাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন কমিটিতে স্থান পাওয়া নেতাদের বিরুদ্ধে বিএনপির সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করে মুঠোফোনে জানান, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের পরিবার বিএনপির সাথে সংশ্লিষ্ট থাকতে পারে। কিন্তু তারা এখন ছাত্রলীগের কর্মী। এ বিষয়ে আমাদের আসলে কোন বক্তব্য নাই।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব সাইদুজ্জামান মামুন খান মুঠোফোনে জানান, বিএনপির সাথে সংশ্লিষ্ট এমন কাউকে কমিটিতে রাখার কথা না। তারপর আমি দেখছি। যদি অভিযোগ সত্য হয় তবে আমরা জেলা ছাত্রলীগকে এ ব্যাপারে লিখিতভাবে অবহিত করবো এবং সঠিক ব্যবস্থা নেবো।
পটুয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব অধ্যক্ষ মহিব্বুর রহমান মহিব এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করতে চাইলেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা তা রিসিভ করেনি৷
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলমগীর বলেন, এ বিষয়ে আমরা কিছু জানিনা। যদি বিএনপি ঘরানার কেউ থেকে থাকে আর তার প্রমাণ যদি থাকে তবে আপনারা পত্রিকায় প্রকাশ করুন। এ বিষয়টায় আমাদের প্রতিবাদ আছে। প্রানের এই সংগঠনকে কেউ কলুষিত করতে চাইলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে৷ প্রমান হাতে পেলে আমরা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে জানাবো। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা যাতে নেয়া হয় সে বিষয়ে কথা বলবো৷
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ভিপি আবদুল মান্নান বলেন, যদি সত্যিই এমনটা হয়ে থাকে আপনারা পত্রিকায় দিয়ে দিন। আমাদের কোন আপত্তি নাই। আমরা সবকিছু সঠিক থাকলে আপনাদের সহযোগীতা করবো এবং কথা দিলাম অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো। এই বিষয়ে আপনারা নিশ্চিত থাকবেন।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//এপ্রিল ০১,২০২৩//
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post