পুলিশের দাবি, পরোয়ানা তামিল করতে গিয়ে দুই নৌকার সংঘর্ষ হয়। জেলেদের দাবি জোর করে ইলিশ মাছ নেয়ায় সংঘর্ষ ঘটে
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:
কুষ্টিয়ার কুমারখালীর পদ্মা নদীতে জেলেদের হামলায় নদীতে পড়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন দুই পুলিশ সদস্য। তাদের খুঁজতে ১১ জন ডুবুরী নামানো হয়েছিল। তারা ৩৬ ঘন্টা পর এএসআই সদরুল আলমের মরদেহ উদ্ধার করেছে।
মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে মাঝ নদী থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। পরে কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম এবং সদরুলের পিতা মরদেহটি শনাক্ত করেন।
এএসআই সদরুলের বাড়ি পাবনা জেলার আতাইকুলা থানায়৷ তার তিন ছেলে মেয়ে৷ বড় ছেলে কলেজে পড়ে৷ মেয়ে হাই স্কুলে পড়ে এবং ছোট ছেলের বয়স মাত্র তিন বছর৷
তবে এখনো নিখোঁজ রয়েছে এএসআই মুকুল। তাকে উদ্ধারের জন্য উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে উদ্ধারকারী দল। এএসআই মুকুলের বাড়ি মেহেরপুর সদরে, তার সপ্তম শ্রেণী পড়ুয়া ছেলে রয়েছে৷
এর আগে, গত সোমবার রাত ৩টার দিকে কুমারখালী থানার এসআই নজরুলের নেতৃত্বে ৬ পুলিশ সদস্য স্থানীয় দুই ইউপি সদস্যকে সাথে নিয়ে একটি মামলার ওয়ারেন্ট তামিলের জন্য নৌকা যোগে চর সাদিপুর যাচ্ছিল। মাঝ নদীতে পুলিশের ওই নৌকায় হামলা চালায় অবৈধভাবে ইলিশ ধরা জেলেদের একটি দল।
এসময় পুলিশের নৌকাটি ডুবে যায়। এতে চার পুলিশ সদস্যসহ দুই ইউপি সদস্য সাঁতরে কিনারায় উঠলেও এএসআই মুকুল এবং সদরুল তলিয়ে যায়। ঘটনার পর থেকেই তাদের উদ্ধারে কাজ শুরু করে পুলিশ। সকালে তাদের সাথে যোগ দেয় খুলনা থেকে আসা ডুবুরি দল।
কুষ্টিয়া ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক জানে আলম বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত নিখোঁজ পুলিশ কর্মকর্তাকে উদ্ধার করা না হবে, ততক্ষণ উদ্ধার অভিযান চলতে থাকবে।’
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশের ওপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের জন্য কাজ করছে পুলিশ।’
জেলেদের ভাষ্য, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অসাধু জেলেরা নদীতে মাছ ধরছিল। গভীর রাতে দুই মেম্বর ও ৬ পুলিশ পদ্মা নদীর বেড় কালোয়া এলাকায় নেমে অভিযানের কথা বলে কয়েকজন জেলের কাছ থেকে ইলিশ মাছ জোরপূর্বক নেয়ার চেষ্টা করে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে শিলাইদহের শ্রীখোল এলাকায় দুর্বৃত্তরা পুলিশ ও মেম্বররের ওপর হামলা চালায়। পরে খবর পেয়ে স্থানীয় জেলেরা এস আই নজরুলসহ ৪ পুলিশ ও দুই মেম্বরকে উদ্ধার করে। তবে তাদের সংগীয় অপর দুই এএসআই কে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে পুলিশের দাবি, গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল করতে গিয়ে দুই নৌকার সংঘর্ষে দুর্ঘটনা ঘটলে দুই এএসআই নিখোঁজ হয়েছে। বাকী ৪ জন সাঁতরে তীরে আসতে সক্ষম হয়েছে।
সরেজমিন ঘটনাস্থল বেড় কালোয়া মোড়ে গেলে স্থানীয় বাসিন্দা ইবাদত শেখের ছেলে জেলে এজাহার শেখ(৩৫) বলেন, ‘রাতে পদ্মায় ইলিশ ধরছিলাম। সেসময় ছলিম ও টিটন মেম্বরসহ ৬ জন পুলিশ এসে আমার কাছে থাকা মাছ নিয়ে চলে যায়। এবং পুলিশ ফের আমাকে মাছ ধরার অনুমতি দিয়ে চলে যায়’।
রাতের ওই ঘটনার সংবাদ পেয়ে আহত পুলিশদের উদ্ধারকারী বেড় কালোয়া এলাকার জেলেদের নেতা ইয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘রাত আনুমানিক তিনটার দিকে স্থানীয় জেলেরা প্রথমে আমাকে ফোন দিয়ে জানায় নদীতে ঝামেলা হচ্ছে, ছলিম ও টিটন মেম্বর এবং পুলিশ এসে জেলেদের কাছ থেকে তেল ও মাছ লুটপাট করে নিয়ে গেছে। এই খবর শুনে আমি আবার ঘুমিয়ে পড়ি। এরপর সোমবার ভোর ৫ টার দিকে কুমারখালী থানার এএসআই সবদুল আমাকে ফোন করে বলে, ‘ভাই আমরা বিপদে আছি সাহায্য করেন, ১০ মিনিট পরে সদরুল কে ফোন দিলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তখন একটি নৌকায় চারজন গিয়ে নদীর মধ্য থেকে এসআই নজরুলসহ ৩ পুলিশ এবং দুই মেম্বরকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি। এসময় এসআই নজরুলের মাথা ফাঁটা ছিল, রক্ত বেরুচ্ছিলো।
এই জেলে নেতার দাবি, ‘নদীতে যাওয়া পুলিশদের কোন ড্রেস ছিলো না বলে তাদের উপর এই হামলার ঘটনা ঘটে। কারন টিটন ও ছলিম মেম্বর জেলেদের মাছ, তেল ও টাকা লুটপাট করতেই সাথে করে পুলিশ নিয়ে এসেছিল। সেই কারনেই ৩০/৪০ জন জেলে ডাকাত ভেবে এই হামলা চালিয়েছে’।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে কুমারখালী থানার ওসি মো: নজরুল ইসলাম দাবি করেন, ‘গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল করতে গিয়ে দুই নৌকার সংঘর্ষে দুই এএসআই নিখোঁজ হয়েছে। বাকী ৪ জন সাঁতরে কুলে আসতে সক্ষম হয়। বিষয়টি তদন্ত চলছে। পরে বিস্তারিত বলা যাবে।
জেলেদের অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, এ গুলো তদন্তের বিষয়। তদন্ত সাপেক্ষে বিস্তারিত বলা যাবে।
প্রিন্ট করুন
Discussion about this post