কুমারখালী প্রতিনিধি : পদ্মার ভাঙনের শংকায় রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি সহ ৫ টি গ্ৰাম । পদ্মা পাড়ের এই মানুষ গুলোর চোখে মুখে ভাঙনের আশংকা বিরাজ করছে। যে কোন মুহুর্তে চোখের সামনেই শেষ সম্বল টুকো পদ্মায় চলে যাবে।
বর্ষা মৌসুমে শুরুতেই এবার পদ্মার নদীর পাড় ভাঙ্গতে শুরু করেছে। কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালীর শিলাইদহ ইউনিয়নের কোমরকান্দিসহ আশপাশের এলাকায় পদ্মার অব্যাহত ভাঙ্গনের হুমকিতে রয়েছে।
কমিউনিটি ক্লিনিক, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত শিলাইদহের কুঠিবাড়ীসহ ৫ টি গ্রাম।
নদী ভাঙ্গনরোধে ১৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩.৭২ কিলোমিটার প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হলেও এখনো দুই অংশের মাঝে দেড় কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় ৫ টি গ্রাম প্রতি বছরই পড়েছে ভাঙনের মুখে। নদী ভাঙনের ফলে রাতের অন্ধকারে বিলিন হচ্ছে গ্ৰাম কে গ্ৰাম।
কমোরকান্দি গ্ৰামের ৭০ বছরের বৃদ্ধা নার্গিসের প্রশ্ন প্রতিবছর কত মানুষ আছে আর চলে যায় কিছুই হয় না। আমাদের দিকে কেউ ফিরেও চায়না। এক সময় কতো জমি ছিল। এখন ১ ছেলে নিয়ে ছোট একটা ঘরে থাকি তাও কখন’ যেন পদ্মায় নিয়ে যায়।
এলাকার যুবক সামছুল ইসলাম বললেন, বাঁধ নির্মাণ না হাওয়ায় প্রতি বছর পদ্মায় চলে যায় আমাদের জমিসহ ঘরবাড়ি। এমন ভাঙনের কারণে আমরা এখন নিঃস্ব হয়ে গেছি । আমার এক কাঠা জমি কেনার ক্ষমতা নেই। আমরা পরিবার নিয়ে কোথায় যাব।
পদ্মার পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, মানুষের আকুতি মিনতি, বুড়ো, জুয়ান, সবাড়ি একটি চাওয়া বাঁধ নির্মাণ করে গ্ৰামগুলোকে বাঁচাতে । বর্ষার শুরুতেই প্রমত্তা পদ্মার পানি প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় হঠাৎ ভাঙ্গছে নদীর পাড়। এর আগে নদী ভাঙ্গন প্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে ৩.৭২ কিলোমিটার প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হলেও এখনো দেড় কিলোমিটার নদী তীর সংরক্ষণ কাজ বাস্তবায়ন হয়নি।
কসবা গ্রামের বাসিন্দা মাসুদ রানা জানান, পদ্মা নদীর ভাঙনে বসতবাড়ি কয়েকবার স্থানান্তর করেছি। এবারের ভাঙন নিয়েও এলাকাবাসী রয়েছেন শঙ্কায়। ভাঙনরোধে জলদি নদী তীর সংরক্ষণসহ প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবী করছি।
শিলাইদহ ইউপি চেয়ারম্যান মো: সালাহউদ্দিন খান তারেক বলেন, ইউনিয়নের কমরকান্দি গ্ৰাম, এখানে নদী ভাঙনরোধে তড়িৎ পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে শিলাইদহ ইউনিয়নের ৫/৬টি গ্রাম বিলিন হতে পারে।
ঝুঁকিতে রয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক,বসতবাড়ি, প্রামমিক বিদ্যালয়সহ ফসলি জমি ও নদী গর্ভে বিলীনের আশঙ্কা করা রয়েছে। রবীন্দ্র কুঠিবাড়ীও ঝুঁকিতে পড়বে বলে তিনি জানান। ভাঙ্গনরোধে ১৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মার তীর সংরক্ষণ ও বাঁধ নির্মাণ করা হলেও কোন এক কারনে হয়তো কোমরকান্দি গ্রাম দেড় কিলোমিটার প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি।
শিলাইদহ কুঠিবাড়ীর কাস্টোডিয়ান মোঃ মুখলেছুর রহমান বলেন, পদ্মানদী থেকে কুঠিবাড়ীর দুরত্ব মাত্র কোয়ার্টার কিলোমিটার দুরে। কুঠিবাড়ীর প্রধান অংশে বাঁধ নির্মাণ হয়নি। এতে হুমকির মুখে রয়েছে কুঠিবাড়ী। কুঠিবাড়ী রক্ষা করতে না পারলে নতুন প্রজন্ম ইতিহাস থেকে বঞ্চিত হবে।
কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মন্ডল জানান, ভাঙ্গন প্রবণ নদী তীরবর্তী এলাকা।, ভাঙনরোধে উদ্যোগ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডেকে জানানো হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী আছরাফ উদ্দিন সাথে বার বার তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
Discussion about this post