পাইকগাছা(খুলনা) প্রতিনিধি: খুলনার পাইকগাছা উপজেলার লতার শংকরদানা সরকারি খাস খালের ৯টি স্থানে বাঁধ ও নেট-পাটা দিয়ে লবণ পানির মাছ চাষ করায় মৌসুমের শুরুতেই পুর্বের ন্যায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে বিস্তির্ণ অঞ্চলে দীর্ঘ মেয়াদী জলাবদ্ধতার পাশাপাশি ৬ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মাণাধীন কার্পেটিং রাস্তা হুমকির মুখে পড়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বিস্তীর্ণ অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের অন্যতম মাধ্যম প্রায় ৩ কিঃ মিঃ দৈর্ঘ্যের সরকারি খাস খালটি বন্দোবস্ত নিয়ে অন্তত ৯টি খন্ডে পৃথক বাঁধসহ নেট-পাটা দিয়ে লবণ পানির মাছ চাষ করার ফলে প্রতিবছর বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে সেখানকার ঘরবাড়ি, ফসলি ক্ষেত, রাস্তাঘাট তলিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে। এ বছরেও সেই একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়রা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করে এসব বাঁধসহ নেট-পাটা অপসারণ করে সেখানকার ৩ গ্রামের জলবদ্ধতার নিরসন ও নির্মাণাধীন ৬ কোটি টাকার সরকারি কার্পেটিংয়ের রাস্তাটি রক্ষার দাবি করেছেন।
অভিযোগে জানানো হয়, উপজেলার লতা ইউনিয়নের হাড়িয়া ওয়াপদা রাস্তা হতে হতে হাড়িয়া খাসমহল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত প্রায় ৩ কিঃ মিঃ দৈর্ঘ্যের শংকরদানা খাস খালের অবস্থান।
সেখানকার শংকরদানা, হাড়িয়া এবং সচিয়ারবন্দসহ বিস্তির্ণ অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম এ খাস খাল। বিভিন্ন সময় বিভিন্নজন খালটির বন্দোবস্ত নিয়ে অনুরুপ খন্ড খন্ড করে খালের মধ্যে বাঁধসহ নেট-পাটা দিয়ে মাছ চাষ করেছিল।
তারা হলেন, স্থানীয় ক্লিনটন বিশ্বাস, পঙ্কজ কুমার, দীপঙ্কর, বাবু লাল বিশ্বাস, বরুণ বিশ্বাস, স্বজল, সমীর কুমার মন্ডল, অসীম কুমার সরকার ও সত্যনন্দ রায়।
এলাকাবাসী অভিযোগ, খালের ইজারা নিয়ে পৃথক পৃথক ভাবে মাছ চাষ করার কারণে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে দীর্ঘ দিন যাবৎ জলাবদ্ধতার কবলে পড়তে হয় তাদের। এসময় বসত-বাড়িসহ রাস্তাঘাট ও ফসলের ক্ষেত তলিয়ে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির মুখে পড়তে হয়।
স্থানীয় সঞ্জয় বিশ্বাস বলেন, খালে মাছ চাষে কারো আপত্তি নেই, তবে বর্ষা মৌসুমে খাস খাল দিয়ে সুষ্ঠু পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
এ বিষয়ে স্থানীয় মমতা সরকার ও ঝর্ণা শীলরা জানান, গত ক’দিনের টানাবর্ষায় তাদের বসতবাড়ির উঠানে পানি উঠে গেছে এবং নির্মাণাধীন একমাত্র চলাচল রাস্তাটিও তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
তবে সত্যরঞ্জন সরকার বলেন, ভোগান্তি লাঘব করতে হলে এসব বাঁধ ও নেট-পাটা অপসারণ জরুরী।
এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে ঘের মালিক ক্লিনটন বিশ্বাস বলেন, স্লুইস গেটের মুখে তার অংশের ৬ বিঘা জমিতে ঘের করছেন তিনি। অতি বর্ষায় জলাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে তিনি আরোও বলেন, স্লুইস গেট দিয়ে পানি সরবরাহ করেন। তবে অন্যান্যদের কারণে জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সুনীল কুমার মন্ডল জানান, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে এলাকায় যাতায়াতের একমাত্র রাস্তাটির কার্পেটিং কাজ চলমান রয়েছে। এ রাস্তাটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব আমাদের সকলের। তিনি পানি সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ব্যক্তি কিংবা সরকারি উদ্যোগ নিলে তিনি সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী স্বজল বিশ্বাস জানান, নির্মানাধীন কার্পেটিং (রাস্তা) টেকসই বা রক্ষা করতে জলাবদ্ধতার নিরসনের বিকল্প নেই। ক’দিনের ভারি বর্ষায় নাজুক অবস্থার জন্য তিনি খালের বাঁধসহ নেট-পাটাকে দায়ি করে সুষ্ঠু পানি সরবরাহে তা অপসারনের দাবি করেন।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//

Discussion about this post