Print Date & Time : 4 July 2025 Friday 8:23 am

পাইকগাছায় আমনের ব্যাপক ক্ষতি

শেখ দীন মাহমুদ,পাইকগাছা(খুলনা) প্রতিনিধি॥ সাগরে লঘুচাপ ও পূর্ণিমার প্রভাবে পাইকগাছায় টানা ৬ দিনের বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় বোয়ালিয়া বীজ উৎপাদন খামারসহ উপজেলার আমনের ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে হয়েছে। ক্ষেতের ধান পড়ে পানিতে তলিয়ে গেছে। অতিবৃষ্টিতে মাছের ঘেরসহ নি¤œাঞ্চল তলিয়ে যাওয়ায় কোথাও কোথাও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।

বৃষ্টির সাথে ঝড়ো হাওয়ায় অনেক এলাকার কাঁচা ঘর-বাড়ি ধ্বসে পড়েছে। বিশেষ করে আমনের বহু ক্ষেতে ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে। ধান গাছ মাটিতে নুয়ে পড়ায় পানিতে ডুবে ও ধানের কুশি ভরা ফুল ঝরে পড়ে ঐ ক্ষতিসাধন হয়েছে।

কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, বাতাসে মাটিতে নুয়ে পড়ে ও পানিতে তলিয়ে থাকা ধান পরিপূর্ণ পুষ্ঠ না হওয়ায় অধিকাংশ ক্ষেতের ধানে কালো দাগ পড়ার আশংকা রয়েছে। তাছাড়া কুশি ভরা ধানের ফুল ঝরে পরাগায়ন না হওয়ায় ধানে চিটা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অধিকাংশ খামার ও ক্ষেতে আমনের ফলন খুব ভালো হলেও অসময়ে অতিবৃষ্টি ক্ষতির মুখে ফেলেছে।

গত শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে ঝড়ো হাওয়ায় পাইকগাছা বীজ উৎপাদন খামারের ৩৭ একর জমির আঁধা পাকা ধান লন্ড ভন্ড হয়ে যায়। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে ধান ক্ষেতে যেন কেউ মই দিয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলের সম্ভাবনাময় খামারটিকে বছরের বিভিন্ন সময় লবণ পানিসহ প্রাকৃতিক নানা দূর্যোগ মোকাবেলা করে ফসল ফলাতে হয়।

সংশ্লিষ্ট খামার সূত্র জানায়, চলতি আমন মৌসুমে খামারে বিনা-২৩ জাতের ২৫ একর ও ব্রি-৩৭ জাতের ১২ একর মোট ৩৭ একর জমিতে আবাদ হয়েছিল। তবে খামারের প্রায় সব ধান পানিতে পড়ে ব্যপক ক্ষতির মুখে রয়েছে। এছাড়া ব্রি-৩০ জাতের ১৪ একরে সবে মাত্র থোড় ও ব্রি ধান-৭৮ জাতের ৭ একরে কেবল কুশি এসেছে। এবস্থায় ঝড়ো হাওয়ায় ধানের পরাগায়ন না হলে ধান চিটা হয়ে ধানের উৎপাদন হ্রাস ও বীজ উৎপাদন মারাতœকভাবে ব্যাহত হতে পারে।

জানাযায়, খামারে সর্বমোট ৫৮ একর জমিতে ৪টি জাতের আমন ধানের আবাদ হয়েছে। যার অধিকাংশ স্থানে ধানের কমবেশি ক্ষতি হয়েছে।

এ বিষয়ে খামারের সিনিয়র সহকারী পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ হারুন জানান, নি¤œচাপের প্রভাবে একটানা বৃষ্টি ও মাঝে মাঝে ঝড়ো হাওয়ায় চলতি মৌসুমে আমন ক্ষেতের ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। বিনা ২৩ জাতের ২৫ একর ও ব্রি ধান ৭৩ জাতের ১২ একর জমির ধান ঝড়ে পড়ে পানিতে ডুবে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে পানি সরে না গেলে ডুবে যাওয়া ধানের অঙ্কুরোদগ্ম হতে পারে এবং ধান কালো হয়ে যাওয়ার সম্ভবনাও রয়েছে। ব্রিধান ৩০ জাতের ১৪ একর ও ব্রিধান ৭৮ জাতের ৭ একর জমিতে আবাদ করা হয়েছে। এ জাতের ধানে সবে মাত্র ফুল ফুটতে শুরু করেছে।

এ অবস্থায় ঝড়ো হাওয়ায় ফুল ঝরে পরাগায়ন ও পুষ্ট না হলে ধান চিটা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে। এতে করে আশানারুপ বীজ উৎপাদন হবে না বলেও আশঙ্কা তার। তাছাড়া মাটিতে পড়ে ডুবে থাকা ধান শ্রমিক দিয়ে কাচির সাহায্যে কর্তন করতে শ্রমিক খরচের পরিমাণ অনেক গুণ বেড়ে যাবে।

তবে সর্বশেষ খামারের ধান বাঁচানোর জন্য সব রকমে প্রচেষ্টা রয়েছে তাদের বলেও জানান এ কর্মকর্তা।

এসময় ধানের কি পরিমান ক্ষতি হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেটা এখনি বলা সম্ভব নয়। ধান কর্তনপূর্বক ঝাড়াই করে ক্ষতির পরিমান নিরুপন করা যাবে। এছাড়া বীজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পুরণ হবে কি না সেটাও নির্ভর করছে উৎপাদিত ধান কেমন হবে এবং ধান কেটে ঝাড়াই করে পরীক্ষা করার পর।