‘যায় দিন আসে ভালো’ প্রবাদ বয়োবৃদ্ধ মোজাম্মেল মিয়ার জীবনে কাজে লাগেনি। তাই একমুঠো ক্ষুধার অন্নের জন্য বৃদ্ধ বয়সে রুগ্ন শরীরে বাজারে বাজারে পান বিক্রি করে বেড়ান। যা পান তা দিয়ে চলে পাঁচ সদস্যের সংসার।
মোজাম্মেল মিয়ার বয়স এখন আশি। বাড়ী পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার সোহাগদল গ্রামের ৭নং ওয়ার্ডে।
নদীর ধারে তিন কাঠা জায়গা জমি ছিল। সেই জমিটুকুরও সিংহভাগ গিলে নিয়েছে রাক্ষুসে সন্ধ্যা নদী। সেই নদীর ধারে একটি ঝুপড়ি ঘরে তার বসবাস। এই বৃদ্ধ বয়সেও শরীরে যতই রোগ শোকের বাসা বাধুক পানের বাক্স গলায় ঝুলিয়ে রাস্তায় বেরুতে পারলেই জোটে খাবার। না হলে থাকতে হয় উপোষ। তাই প্রতিদিন কাক ডাকা ভোরে বৃদ্ধ মোজাম্মেল পানের বাক্স নিয়ে ছোটেন উপজেলার হাটে বাজারে।
সংসারে এক ছেলে থাকতেও নিরুপায় হয়েই পথে ঘাটে পান বিক্রি করছেন মোজাম্মেল। তার ছেলে নাম নূর হোসেন(৩৫)। গত কয়েক বছর ধরে তার ছেলে শারীরিকভাবে ভিষন অসুস্থ। তাই স্ত্রী,ছেলে,পুত্রবধূ ও এক নাতিকে নির্ভর করতে হয় বৃদ্ধ মোজাম্মেলের পান বিক্রির উপার্জনে।
মোজ্জামেল বলেন, তার ছেলে একজন জেলে। তিন মাস পর পর হাজার দেড়েক ভাতার টাকা পায়। ছেলের সামান্য উপার্জন মিলিয়ে আমাদের সংসার চলত।
আমি শারিরীকভাবে ভীষন অসুস্থ। বাম চোখে ভাল দেখতে পাইনা। চোখ দিয়ে কেবল পানি ঝরে।
ছেলে অসুস্থ হওয়ায় গত তিন চার বছর ধরে এই শারীরিক অসুস্থতা নিয়েই পানের বাক্স নিয়ে রাস্তায় ঘুরছি। তবে এখন আর শরীর দিয়ে পারছিনা। আমি খুব ক্লান্ত। পানের বাক্সের ওজন বহন করতে আমার খুব কষ্ট হয়।
তাছাড়া, আমার বাম চোখ দিয়ে কেবল পানি ঝরে। তাই অনেকে এই অবস্থা দেখে আমার কাছ থেকে পান খেতেও চায়না।
সারাদিন ঘুরে তিন চারশ টাকার বেশি বিক্রি হয়না। এসময় মোজাম্মেল মিয়া দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে অনেকটা কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, যদি কোথাও ছোট খাট একটা পানের দোকান দিয়ে বসতে পারতাম তাহলে হয়তো এই রুগ্ন বয়সে কিছুটা শান্তি পেতাম।
হাজার বিশেক টাকা হলেই দোকানটা দিতে পারতাম।
এবি/দৈনিক দেশতথ্য/১ নভেম্বর/২০২১
অশীতিপর মোজাম্মেল মিয়া এভাবেই পান বেচে পাঁচ সদস্যের সংসার চালান

Discussion about this post