রফিকুল্লাহ্ কালবী: গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় কুষ্টিয়া পাবলিক লাইব্রেরির সামনে এনএস রোডে মানববন্ধন করে জেলার চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্য ও তাদের ভুক্তভুগী পরিবারের সদস্যরা।
২০২৪ এর জুলাই বিপ্লবের পর থেকে প্রায় প্রতি মাসেই তারা ৩ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন করে আসছে। তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে (১) পিলখানায় নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী ব্যক্তি ও নেপথ্যের নায়কদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা এবং যেসব বিডিআর সদস্য অন্যায়ভাবে সাজাভোগ করলেন তাদের খালাস দেয়া, (২) যেসব বিডিআর সদস্যকে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত হরা হয়েছে তাদের সকলকে সরকারির সমস্ত সুযোগসুবিধাসহ চাকরিতে পুনর্বহাল ও যথাযথভাবে পদায়ন করা, (৩) তদন্ত কমিশনকে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও নির্ভয়ে কাজ করার জন্য প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত ২ এর (ঙ) ধারা বাদ দিতে হবে।
২০০৯ সালে ঢাকার পিলখানায় বিডিআর সদরদপ্তরে তৎকালীন বিডিআর- এর ৫৭ অফিসারসহ মোট ৭৪ জনকে হত্যার প্রেক্ষিতে গঠিত ১৮টি স্পেশাল কোর্ট ১৮ হাজার পাঁচশো বিশ জন বিডিআর সদস্যকে সাজা প্রদান ও চাকরিচ্যুত করে। এখন পর্যন্ত ৮শো ১৯ জন বিডিআর সদস্য কারাগারে বন্দী আছে এবং এদের মধ্যে ২শো ৫২ জন ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত। ইতোমধ্যে ৬৪ জন সাজাপ্রাপ্ত বিডিআর সদস্য কারা-অভ্যন্তরেই মৃত্যু বরণ করেছে বলে জানা যায়।
গতকাল দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন মারফত জানা যায়, রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর ম্যাসাকারের পরিকল্পনা আগে থেকেই জানতেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর তত্ত্বাবধানে। হত্যাকাণ্ডের জন্য ভারতের প্রশিক্ষিত একটি কিলার গ্রুপকে ঢাকায় আনা হয়। এরা ভাড়া করা বিপথগামী বিডিআর সদস্যদের সঙ্গে মিলে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
হত্যার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে মেজর জেনারেল (অব.) তারেক সিদ্দিক, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ সেলিম, শেখ ফজলে নূর তাপস, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজম এবং সেনাবাহিনী ও পুলিশের কিছু কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন।
রাজধানী পিলখানার সদর দপ্তরে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঘটেছিল দেশের ইতিহাসে নৃশংসতম এই বিডিআর হত্যাকাণ্ড।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতীয় কিলার গ্রুপের একটি অংশকে খেলোয়াড় বেশে বিডিআরের একটি পিকআপে করে এবং আরেকটি অংশকে রোগী সাজিয়ে নম্বরবিহীন অ্যাম্বুলেন্সে করে পিলখানায় ঢোকানো হয়। রাতে অ্যাম্বুলেন্সে করে তারা পিলখানা ত্যাগও করে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের ধারণা ভারতীয় কিলার গ্রুপটিকে ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে বিমানের দুবাইগামী ফ্লাইটে তুলে দেওয়া হয়। এজন্য ফ্লাইটটি দুই ঘণ্টা বিলম্বে ছাড়ে। আরও জানা গেছে, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর লোকজন ও কিলার গ্রুপের সদস্যরা ফার্মগেটে অবস্থিত তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের হোটেল ইম্পেরিয়াল ব্যবহার করেছে। নাম-পরিচয় গোপন রেখে ইম্পেরিয়াল হোটেলে তারা অবস্থান নিয়েছিলেন। পিলখানায় সংঘটিত ঘটনা ‘বিডিআর বিদ্রোহ’ হিসেবে চালানো হলেও এটি ছিল একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। সেনাপ্রধান হিসেবে বিডিআর হত্যা মোকাবেলা তথা সেনা কর্মকর্তাদের বাঁচাতে ব্যর্থ হয়েছেন জেনারেল মঈন ইউ আহমেদ। হত্যাকাণ্ডের দায় তিনি এড়াতে পারেন না।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পিলখানার সিসি টিভি ফুটেজসহ গুরুত্বপূর্ণ আলামত ধ্বংস ইতোমধ্যেই ধ্বংস করা হয়েছে।