শেখ সুদীপ্ত শাহীন, লালমনিরহাট:
রংপুর অঞ্চলে কৃষি শ্রমিকের তীব্র শ্রমিক সংকট পূরণ করছে নারী শ্রমিক। পুরুষের সাথে সমান তালে ধানকাটে নারী কৃষিশ্রমিক। তবে তারা মজুরি বৈষম্যের শিকার।
তীব্র গরমে পুরুষের সাথে তালমিলিয়ে সমান কাজ করে নারী শ্রমিক। মজুরি পুরুষের সমান নয়। নারীরা তাদের অর্ধেক একটু বেশী পায়। এই শ্রম বৈষম্য নারী অধিকারের অন্তরায়।
রংপুরের প্রতিটি গ্রামে চলছে ধানকাটার ভরা মৌসুম। এ বছর ধানকাটা মওশুমে পড়েছে তীব্র গরম। চড়া পারিশ্রমিক দিয়েও কায়িক শ্রমের এই ধানকাটার কাজ করতে চায় না। কোন কোন গ্রামে চড়া মূল্যেও ধানকাটার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। দিন হাজিরার চেয়ে চুক্তিতে ধানকাটতে শ্রমিকরা আগ্রহী। এতে তাদের বাড়তি আয় হয়। চুক্তিতে ধানকাটতে শ্রমিকরা ভোরবেলায় সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়লে ধান কাটতে শুরু করে। এভাবে টানা সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা কাজ করে। এতে করে দিনে তাদের আয় কোন কোনদিন পনেরশত হতে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত হয়। এমনিতে কৃষি শ্রমিকের দৈনিক হাজিরা লালমনিরহাট জেলা সহ উত্তরাঞ্চলে পাঁচ হতে ছয় শত টাকা। নারী শ্রমিকে বেলায় উল্টো। নারী শ্রমিক পুরুষের সমান কাজ করে পায় দুইশত পঞ্চাশ টাকা হতে তিনশত টাকা।
রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, ঠাঁকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলা দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলা গুলো হতে অর্থনৈতিক ভাবে অনেক পিছিয়ে। শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত ও নিরক্ষর শ্রমিকের সংখ্যাও অনেক বেশী। যাদের বিশাল একটি অংশ নারী। তাই কৃষি শ্রমের বাজারে এসব জেলায় নারী শ্রমিকদের দেখা যায়।
বোরো ধান আধাপাকা কাটতে হয়। একদম পেকে গেলে ধানকাটার সময় শীষ হতে ধান জমিতে ঝরে পড়বে। তাই কৃষক ধান পেকে গেলে দ্রুত ধান কাটতে মরিয়া হয়ে উঠে। সেচ নির্ভর এই ধানের চাষ হওয়ায়, একই সাথে সকল জমিতে ধান চারা রোপন করে থাকে। এতে সেচ, পরিচযার্, কীটনাশক প্রয়োগ করতে সুবিধা হয়। তাই প্রতিটি দোলার ধান প্রায় একই সাথে পাকতে শুরু করে। কাটতেও হয় একসাথে। বোরো মওশুমে ধান কাটা মারাইয়ের কাজ জোরছে চলে মাত্র ২০—২৫ দিন। এই সময় আবার দেশের হাওড় অঞ্চলেও ধান পাকে। উত্তরের জেলা হতে কৃষি শ্রমিকরা হাওড় অঞ্চলে কাজের সন্ধানে গিয়ে থাকে। এসময় উত্তরের জেলা গুলো হতে বগুড়া, ঢাকা, কুমিল্লা, চট্রগ্রামের জেলা গুলোতে ধান কাটতে যায়। তাই রংপুরের বিভিন্ন জেলায় ধানকাটার পুরুষ শ্রমিকের তীব্র সংকট দেখা দেয়। আশার কথা এই শ্রমিক সংকটের সমাধানে নারী কৃষি শ্রমিকরা এগিয়ে এসেছে। নারী শ্রমিকরা তীব্র গরমেও খোলা মাঠে ধান কাটতে নেমে পড়েছে। নারী শ্রমিকরা কঠোর পরিশ্রম করেও ন্যায পারিশ্রমিক হতে বঞ্চিত হতে হচ্ছে।
অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুস সোবাহান জানান, রংপুর অঞ্চলে এক সময় ধানকাটা শ্রমিকের কোন অভাব ছিলনা। অভাবের তাড়নায় ধানকাটার শ্রমিকরা কমদামে অগ্রিম শ্রম বিক্রি করে দিত। বরং কাজের সন্ধানে দক্ষিণাঞ্চলে শ্রমিকরা ধানকাটতে যেত। এখন রংপুর অঞ্চলে ধানকাটা মাড়াইয়ের শ্রমিক পাওয়া যায়না। কৃষি কাজে কায়িক শ্রম অনেক বেশী, তাই এই শ্রমে কেউ আসতে চায়না। দেশের প্রতিটি গ্রামে এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ইউনিয়ন পযার্য়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য কলেজ রয়েছে। শিক্ষার হার বেড়েছে। শিক্ষিত তরুণপ্রজন্ম শারীরিক শ্রম করতে আগ্রহী নয়। তারা তথ্য প্রযুক্তি, ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা, গামেন্টর্স, ক্ষুদ্র ব্যবসা ও নানা ধরণের বেসরকারি ব্যক্তি মালিকানা প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে আগ্রহী। তারা কৃষি কাজে পরিশ্রম অনেক বেশী তাই করতে আগ্রহী নয়। মজুরি বেশী হলেও নয়। বৈশ্বয়িক অর্থনৈতিক কারণে যখন বাজারে দ্রব্যমূল্যের দাম আকাশ ছোঁয়া। পুরুষের একার আয়ে সংসার চলছে না। ঠিক তখন নারীরাও মাঠে কাজে নেমেছে। তারা সঠিক মজুরি পাচ্ছে না। মুজরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। সঠিক মজুরি পেলে গ্রামের দলে দলে নারী মাঠে ময়দানে কাজে নেমে পড়বে। এতে করে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। নারীকে বৈষম্যের মধ্যে রেখে উন্নয়ন অসম্ভব।
একটি এনজিও’র কর্মকতার্ পারভিন সুলতানা জানান, রংপুরের গ্রামে উন্নয়ন চিত্র পাল্টে গেছে। সকল কাজে নারীর অংশগ্রহন বেড়েছে। তবে এখনো নারীরা শ্রমের মজুরিতে বৈষম্যে স্বীকার।
উপপরিচালক ও আয়ন ব্যয়ন কর্মকতার্ মোহাম্মদ সাদেকুজ্জামান জানান, মজুরি বৈষম্য শুধু লালমনিরহাটে নয়, সারা দেশের চিত্র এটা। এই মজুরি বৈষম্য দূরীকরণে রংপুরে সচেতনতামূলক কর্মসূচি শ্রমকল্যাণ দপ্তরের রয়েছে। তবে লালমনিরহাটে এ বিষয়ে কোন কর্মসূচি আপাতত নেই।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//

Discussion about this post