তিন পুলিশকে বেধড়ক গণপিটুনি
জাহিদ হাসান, ভেড়ামারা (কুষ্টিয়া): কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় পুলিশের মারধরে
এক চায়ের দোকানদার নিহত হয়েছেন। এ ঘটনার তিন পুলিশ সদস্যকে স্থানীয়
লোকজন অবরুদ্ধ করে রাখে। সে সময়ে উত্তেজিত জনতা তাদের উপর চড়াও হয়ে
গণপিটুনি দেয়। এরপর স্থানীয় চেয়ারম্যান ও নিহতের এক ভাই তাদের হাত থেকে
পুলিশদের উদ্ধার করে একটি দোকানে হেফাজতে রাখেন।
এসময় সেখানে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পুলিশের একটি মটর সাইকেল পুড়িয়ে
দেয় উত্তেজিত জনতা। এর তিন ঘন্টা পর রাত সাড়ে ১০ টায় বিজিবি এসে অবরুদ্ধ
এক এসআই ও দুই কনস্টেবল কে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। শুক্রবার রাত
৭টায় চাঁদগ্রাম ইউনিয়নের চন্ডিপুর বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ওই ব্যক্তির নাম রফিকুল ইসলাম দুদু (৪২)। সে চন্ডিপুর গ্রামের মৃত
আজিজ মোল্লার ছেলে ও ইউনিয়ন জাসদের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান
মোস্তাকের ভাই। তিনি চায়ের দোকানদার ছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সন্ধ্যা ৭ টার দিকে রফিকুল ইসলাম
দুদু চায়ের দোকানে চা বানাচ্ছিলেন। এসময় তাকে এক পুলিশ সাধারণ পোশাকে
এসে দোকানের পেছনে জিকে ৪ নং ব্রিজের উপর ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে থাকা
ভেড়ামারা থানার ৬ পুলিশ সদস্যের সাথে তর্ক বির্তকের পর তাকে মারধর করা
হয়। পরে ব্রিজ থেকে ১০ ফুট নিচে ফেলে দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে বলে নিহতের
পরিবার দাবি করলেও পুলিশ বলছে সে পালিয়ে যাওয়ার জন্য নিজেই লাফ দিয়েছে।
পুলিশের এসআই সালাউদ্দিনসহ তিন পুলিশকে অবরুদ্ধ করে গণপিটুনি দিয়েছে
স্থানীয় উত্তেজিত জনতা।
ভেড়ামারা থানার ওসি জানান, পুলিশের যে নিয়মিত অভিযান সেই ভিত্তিতেই
সেখানে গিয়েছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুর রহমান বলেন, একজনকে ব্রিজের
উপরে মারধর করতে দেখি। এগিয়ে গেলে পুলিশ পরিচয় দিয়ে বাধা দেওয়া হয়। এক
পর্যায়ে সেখান থেকে ব্রিজের ১০ ফুট নিচে ফেলে দেওয়া হয়। এসময় স্থানীয়রা
এগিয়ে গিয়ে ব্রিজের নিচে এক পুলিশ তার জামার কলার ধরে বসানোর চেষ্টা করে।
আমরা রফিকুল ইসলাম দুদুর চেহারা দেখে চিনতে পারি। এরপরেই বাজারে উত্তেজনা
ছড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয় মমিন নামে এক যুবক বলেন, দুদু ভালো মানুষ। তার বিরুদ্ধে মামলাতো
দুরের কথা কোন অভিযোগ নেই। পুলিশ তাকে মেরে ফেলেছে। আমরা এর বিচার চাই।
নিহতের বড় ভাই বিসারত ইসলাম বলেন, আমার ভাইকে দোকান থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে
৬ পুলিশ মিলে পিটিয়ে ও ব্রিজ থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করেছে। আমার ভাইয়ের
বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই। কেন আমার ভাইয়ের সাথে এমন করলো জবাব চাই। তিনি
আরও বলেন, তিন পুলিশ জনতার রোষে পড়ে মারা যেতে পারতো। আমরা আগলে রেখেছি।
কারণ আমার ছেলে ও ছেলের বউ পুলিশ। আমার ভাইয়ের ছেলে পুলিশ। আমরা পুলিশ
পরিবার। অথচ এই পুলিশ আমার ভাইকে মেরে ফেললো। আমার ভাই হত্যার দৃষ্টান্ত
মূলক বিচার চাই।
চাঁদগ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল হাফিজ তপন বলেন, এ ঘটনায় জনতার
রোষে তিন পুলিশের জীবন বিপন্ন হতে পারতো। আমি ও নিহতের ভাই দ্রুত
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ নিই। পরে
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম আলম আসেন। তিনিসহ অনেকে
মিলে তিন ঘন্টা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমসিম খেতে হয়েছে। পরে বিজিবি
সদস্যরা তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
এবিষয়ে ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন,
পুলিশের নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে সেখানে যায়। একটি তথ্যের ভিত্তিতে
তার সাথে কথা বলার সময় সে গ্রেফতার এড়াতে ব্রিজ থেকে লাফ দিয়ে আহত হয়
হাসপাতালে সে মারা যায়। এসময় স্থানীয় লোকজন আমাদের পুলিশের তিন সদস্যকে
মারধর করে অবরুদ্ধ করে রাখে। মরদেহ সুরতহাল শেষে মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে
বলে তিনি জানান।
মিরপুর-ইবি থানার সার্কেল ও ভেড়ামারার দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ
সুপার আব্দুল খালেক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তিনি এসময় বলেন, অপরাধ যেই
করুক তার শাস্তি হবে। সকল নাগরিকদের জন্য একই আইন। এ ঘটনায় অপরাধীদের
অবশ্যই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
টি//দৈনিক দেশতথ্য//ডিসেম্বর ১৪,২০২৪//
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post