শেখ জাহাঙ্গীর আলম শাহীন, লালমনিরহাট থেকে : উত্তর জনপদের রংপুর অঞ্চলে জেঁকে বসেছে ঘন কুয়াশা ও তীব্র ঠান্ডা।
সাধারণ মানুষ ঘরে বাহির হতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে দিনমজুর শ্রেণির কৃষি শ্রমিকরা কেতে কাজের সন্ধানে এসেছে।
প্রধান কারন ঘরে খাবার নেই। রংপুর অঞ্চলের ভাষায় কৃষি শ্রমিক আব্দুর রহিম(৪৫) জানায়, পেটে খাইলে পিয়ে সয়, তাই জারত কামত আসিচুং। ( পেটে খিদে থাকলে পিঠেও সয়। তাই ঠান্ডায় কাজ করতে এসেছে )
উত্তরাঞ্চলের জেলা লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর, গাইবান্ধা, ঠাঁকুরগাঁও, নীলফামারী, দিনাজপুর ৩ পঞ্চগড়। হিমালয়ের পাদদেশে জেলা গুলোর অবস্থান। যার কারণে হিমবাহের প্রবাহের কারণে এখানে শীতের মৌসুমে অন্য অঞ্চলের চেয়ে তুলানামূলক বেশি শীত পড়ে। এখন তীব্র শীত জেঁকে বসেছে। শীতে কষ্ট পাচ্ছে শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষ। কাজ ছাড়া বাসা-বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না মানুষ। এর মধ্যে তীব্র কুয়াশায় দিনভর ঢাকা থাকছে আকাশ। কোথাও দিনে হয়ত একটু সময়ের জন্য সূর্যের দেখা মিলে। আবার কোথাও একবারও সূর্যের দেখা পাওয়া যায়নি। শীতের কারণে সাধারণ মানুষ যাহের আয়ের উৎস আছে তারা বাড়ির বাহির হচ্ছেনা। কিন্তু দিনমজুর শ্রেণির মানুষ পড়েছে মহা বিপাকে। তাদের ঘরে কোন সঞ্চিত অর্থ সম্পদ নেই। ফলে তারা বাধ্য হচ্ছে তীব্র শীত উপেক্ষা করে মাঠে কাজ করতে। তীব্র ঠান্ডায় হাত – পা কুঁকড়ে যায়। তবুও কাজ করতে হচ্ছে। তা না হলে অনাহারে থাকতে হবে। ঠান্ডায় শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা শীতজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।
লালমনিরহাটে শীতজনিত রোগে বৃদ্ধ – বৃদ্ধা শিশুর মৃত্যু হার বেড়েছে। গত এক সপ্তাহে বৃদ্ধ, বৃদ্ধা শিশুসহ ৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ঘন কুয়াশার কারণে সড়ক পথে দিনের বেলায় যানবাহনকে হেড লাইট জ্বালিয়ে চলতে দেখা গেছে।
এমন কি ঘন কুয়াশার কারনে সৈয়দপুর বিমান বন্দর হতে বিমান উঠানামা করতে বিলম্ব হয়েছে।
বুড়িমারী স্থলবন্দর হতে পণ্যবাহী ট্রাক গুলো রাতে সড়ক পথে ঘনকুয়াশার কারনে ঠিকমত ছেড়ে আসতে পারেনি। তাই দিনের বেলায় সড়কে পণ্যবাহী ট্রাকের চাপ বেড়েছে।
এদিকে কনকনে ঠান্ডা আর হিমেল হাওয়ায় খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘর হতে বের হচ্ছে না মানুষ। গরম কাপড়ের অভাবে শীতে কষ্টে ভুগছে শিশু, বৃদ্ধসহ নিম্ন আয়ের কর্মজীবী মানুষ। সন্ধ্যা থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকছে পুরো জনপদ। দিনের বেশির ভাগ সময় সূর্য়ের দেখা না মেলায় তাপমাত্রা নিম্নগামী হচ্ছে। এ অবস্থায় শীতকাতর মানুষ খড়-কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তাসহ ১৬টি নদ-নদীর অববাহিকায় ৪২০টি চরের মানুষ। তারা গরম কাপড়ের অভাবে তীব্র শীতে ভুগছে। এমতাবস্থায় কাজে বের হতে পারছে না শ্রমজীবী মানুষ। লালমনিরহাট জেলায় কোন আবহাওয়া অফিস নেই।
কুড়িগ্রামের কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ অফিসের পর্যবেক্ষক মোফাখারুল ইসলাম জানান, শুক্রবার জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ¦মুখীর কারনে রংপুর অঞ্চলে অভাব দেখা দিয়েছে। আব্দুর রহিম নামের দিনমজুর বলেন, ‘কাম (কাজ) না করলে তো প্যাটোত (পেটে) ভাত যায় না। কঠিন ঠান্ডায় সারা দিন থরথর করি গাও কাঁপে। ইয়াতে কতক্ষণ কাম করা যায়!’ ঘন কুয়াশাসহ তীব্র শীত জেঁকে বসায় রংপুরের সর্বত্র শ্রমজীবী মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে কৃষি শ্রমিকরা পড়েছে বেকায়দায়। বিগত ৫৩ বছরে উত্তরাঞ্চলে তেমন কোন ভারী ও মাজারী শিল্প কলকারখানা গড়ে উঠেনি। তাই এখানকার অর্থনীতি সম্পূর্ণ কৃষি নির্ভর রয়ে গেছে। সারা বছর কৃষি কাজ হয় না। অর্থনৈতিক দুরবস্থাও ছাড়েনা।

Discussion about this post