পাহাড় দেখি, সমুদ্র দেখি, দেখতে পায় না ভেতর ও তলদেশের অদেখা চিত্র। দুধ চুরির অপরাধে আটক পিতাকে দেখি, দেখি না তার শিশু কন্যার ক্ষুধার্ত মুখ।
প্রতি রাতে হাত বদল হওয়া দেহ বিক্রি করা নারীকে পতিতা বলে গালি দিই, বিছানায় কাঁতরানো তার অসুস্থ্য স্বামীর ওষুধ কেনার খবর রাখি না।
আহমেদ ছফা, আনিস সাবেতদের সঙ্গে চিরকুমার থাকার শপথ নেয়া হুমায়ূন আহমেদ কন্যা বয়সীকে বিয়ে করেছিলেন। এ নিয়ে সমালোচনা করি। ২৯ বছরের পুরনো বউ একদিনও তাকে শান্তিতে রাখেনি। এই স্বীকারোক্তির খবর জানি না।
সুইসব্যাংক, প্রকল্পের লুটপাট ও ইউরোপ-আমেরিকায় ‘বেগম পাড়া’র খবর শুনি। দেখি না এমপি-মন্ত্রী আমলাদের স্থুল শরীরের বেগমদের অভিলাষ। দেখিনা তাদের উচ্চাভিলাসের দাবানল।
দেখি লকডাউন অমান্যে বুলডোজার দিয়ে রিক্সা গুড়িয়ে দেয়া। শুনি না রিক্সাওয়ালার আর্তচিৎকার। দেখি কেবল শ্রমজীবি মানুষের আইন অমান্যের অপরাধ। আমরা খোঁজ নিই না তার পরিবারের অভুক্ত সদস্যদের। জানিনা ওরা কিভাবে আজন্ম পাকস্থলীর কষ্ট নিয়ন্ত্রণ করে।
অসুস্থ্য বাবার রিক্সাভ্যান নিয়ে স্কুল পড়ুয়া ভাইটি রাস্তায় নেমেছিল। পুলিশের পিটুনিতে তার কোমল শরীরে জমাট রক্তের ক্ষতে ছোট বোনটি হাত বুলিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। বলছে ‘আমি আর কখনও ক্ষুধার কথা বলবো না। তোমাকে আর কখনও রিক্সা চালাতে দেব না। আমার চোখে সে ভিডিও ক্লিপটি ছিল গুজরাটের গণহত্যার থেকেও নৃশংস।
ঘাড়ের ব্যথা সারে, কিন্তু মাথা উচু করে সত্য বলার সাহসে ভর করে ধুম্রজাল। সেফটি ফাস্টের সঙ্গে নিজেকে জানার সূত্র মেলে না। নিরাপত্তার প্রশ্নে কুমিরের সঙ্গে যুদ্ধ করা বোকামী। তবুও কেউ কেউ থাকে চে’র মতো, মন্ত্রীত্বের চেয়ার ছেড়ে দুর্গম বলিভিয়ায় ইতিহাসের জনক, অথবা নিজেই ইতিহাস হওয়ার গৌরব পায়।
ঘাড় নয়, আসুন সুস্থ ও সবল রাষ্ট্রের জন্য সবাই দোয়া করি।
—দৈনিক দেশতথ্যের পাঠকদের জন্য লেখাটি পাঠিয়েছেন সাংবাদিক আবু বকর সিদ্দিক।