Print Date & Time : 6 July 2025 Sunday 8:34 pm

প্রতিবাদি কবি রিতা ফারিয়া রিচির একগুচ্ছ কবিতা

ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি

-:রিতা ফারিয়া রিচি:-

ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি

কোত্থেকে এক জ্বীন এসে

চমকে দিয়ে বাজায় বীণ৷

জ্বীনের দেহে সাদা কাপড়

পুরো শরীর ঢাকা

একটু খানি দেখব ছুঁয়ে

নাইরে কোথাও ফাঁকা!

করুণ স্বরে কাঁদছে জ্বীনে

বললো কাছে এসে

তুমি আমার সঙ্গী হবে

দূর পাহাড়ের দেশে?

শুনেই পিলে চমকে গেলো

উঠলো কেঁপে হিয়া

জ্বীনের সাথে দূরের দেশে

কী আর হবে গিয়া?

কিন্তু নাছোড় জ্বীন বাবাজী আমায় করে কাবু

মন্ত্রবলে দেয় বানিয়ে ছোট্ট সোনাবাবু৷

পিঠের ওপর নেয় বসিয়ে শক্ত করে ধরে

ঘাড় ঘুরাতেই পড়ছি ধপাস স্বপ্ন ভাঙার ঝড়ে…

—–রিতা

-:রিতা ফারিয়া রিচি:-

সত্যি ম্যাডাম? ওই বালিশে পিস্তল গুঁজে রাখো?

খুব তো বোঝো আইন-কানুন আদালতি ফাঁকও!

কেমন করে বললে তুমি এমন কথা মুখে?

এত্তোবড় সাহস তোমার ওইটুকুন এক বুকে?

এমনি করে বলতো যদি আলেম সমাজ আজ

লোহার শিকে ভরে দিয়ে করতো তাদের ভাঁজ!

কার ক্ষমতায় শক্ত হলো তোমার বুকের পাটা?

দরাজ গলায় বললে যখন শিহরিত হলো গা’টা!

এই সাহসের বিচার বলো করবে এখন কারা?

হয়নি বিচার কোনো কালেও ওসব লোকের দ্বারা!

তা যাই বলি উৎসাহটা পেলাম তোমার থেকে

পিস্তল রাখার সাধটা এখন পাচ্ছি মনে মনে।

—–রিতা

নেতা কেন ভুললো

-:রিতা ফারিয়া রিচি:-

‘দুর্নীতি হটাবোই’ নেতা রব তুললো

খায় যারা ঘুষ তারা শুনে খুবই ফুললো

চাঁদা দিই প্রতিদিন নেতা কেন ভুললো?

প্যান্ট-শার্ট সব দিই তবু মুখ খুললো!

দিচ্ছি মদ দিচ্ছি নারী দিচ্ছি ঝাকানাকা গাড়ি

দিচ্ছি আলিশান বাড়ি।

চ্যালাপ্যালা এলে দিই চা আর কফিটা

আয়োজনে সাথে থাকে ছোটভাই শফিটা৷

মুখকালো করে বলে, মানিব্যাগ ফাঁকারে

বিদায়ের কালে তাই গুঁজে দিই টাকারে

কানে কানে বলে গেলো সুশীলের বৌ’টা

কাড়ি কাড়ি টাকা ভরা দিতে হবে কৌ’টা৷

ধ্যাত্তেরী শালাগুলো শুনে দেখি চায় কী?

দিনে রাতে ঘুষ-ভুষ সবটাই খায় কী?

মুশকিলে আছি খুব কিলবিল মাথাটা

কই গেলি আয় সব আয় ধর ছাতাটা৷

লাঠি ঝাঁটা যাই পাই চল দিই খিচিয়ে

বুমবুম মেরে ধরে দিই সব বিছিয়ে!

—–রিতা

লাশের ওপর লাশ জমেছে

-:রিতা ফারিয়া রিচি:-

নিয়ম মেনে কারখানা মিল

হয়নি কোনো কালে

দুঃসময়ের আঘাত পড়ে

গরীব দুখির গালে৷

খোঁজ কমিটির দায়সারা কাম

সামনে এসে খোঁজা

কুটিল জটিল বুদ্ধি তাদের

নয়তো মোটেই সোজা৷

পুঁজিপতি বসা আছে

অংক হিসাব কষা আছে

বাঁচলে বাঁচুক শ্রমিক

কিংবা- মরলে মরুক ধুকে!

চোখের জলে চক্ষু ভাসে

হৃদয় ফেটে কান্না আসে

লাশের ওপর লাশ জমেছে

শোকের আঘাত বুকে!

ক’দিন বাদেই এই বদেরা

ঘুরবে হেসে খেলে

অনিয়মের হিসাব করে

ভরবে তাদের জেলে?

কারো গেছে স্বামী

কিংবা কারো গেছে বাবা

কারো গেছে বুকের মানিক

কেউ কি ফিরে পাবা?

মৃত লোকের পরিবারের

দায় কি নেবে ওরা?

হাড্ডিগুলো গুঁড়ো করে

কর শালাদের খোঁড়া!

—–রিতা

শিশুতোষ ছড়া

করবো এবার জয়

-:রিতা ফারিয়া রিচি:-

বকুল বনের ডালে পাখির মেলা

কত্তোরকম পাখি দেখি রোজ

চড়ুই-শালিক বুলবুলিদের খেলা

ডালে-ডালে শুধুই বাসার খোঁজ৷

পাখির ডাকে ঠোঁট মিলিয়ে ছুটি

ফুলেরা সব ভীষণ অবাক হয়

কুহু সুরে কোকিল নাচায় ঝুঁটি

এই আনন্দের হয় না কভু ক্ষয়

ফুলের সাথে পাখির সাথে

চলি আলতা মেখে

নুপূরপরা পায়ে

ফুলের মধু খাসনে বেশি

বলি “খুকু এসো” ধমকে বলেন মা’য়ে৷

পুকুরঘাটে মাছের খেলা দেখি

পাখিরা সব হয় যে এসে জড়ো

অবাক হয়ে চমকে উঠি এ কী!

মাছের পোনা হয় কি এত বড়ো?

বকুলবনে রাতের জোনাক গুনি

তারায়-তারায় ফুলের সুবাস বয়

ডাকছে ঝিঁঝিঁ নিবিড় হয়ে

শুনি চাঁদ ফাগুনও করবো এবার জয়।

—–রিতা

কত কথা হৃদয়ের ভাঁজে

-:রিতা ফারিয়া রিচি:-

গড়াইয়ের কাছে যদি আসি

সুখ-সুখ স্মৃতিতে ভাসি

অতীতের মাঝে দিই ডুব

শৈশবে ফিরে যাই খুব৷

ওই দূরে দেখা যায়

মাঠ রুপবতী মায়াবতী হাট

ধানক্ষেতে বাতাসের দোল

মন বলে অনুভূতি খোল৷

চারিদিক লাগে ছবি-ছবি

বিস্মিত হয় কত কবি

কত কথা হৃদয়ের ভাঁজে

ছন্দিত হয় কারুকাজে৷

এই পথ যত দূরে যায়

হৃদয়টা কেড়ে নিতে চায়

গাছে-গাছে পাখী ডাকে রোজ

আমি শুধু করি তার খোঁজ৷

কাছে টানে চড়ুইয়ের বাসা

গ্রামটাকে নিয়ে কত আশা

ফুলফল বনানীর ভীড়ে

ছুটে আসি শান্তির নীড়ে৷

কয়াতেই মন পড়ে থাকে

বারেবারে ইশারায় ডাকে

যতো ভাবি ততো ভালো লাগে

মনে যেন আহা প্রেম জাগে!

—–রিতা

বন্দি আছি

-:রিতা ফারিয়া রিচি:-

পুরো শহর একলা যেন

ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আজ

নিরালাতে চুপিচুপি

করছে দুখের রাজ

হায় রে কোথায়

আত্মীয় আর বন্ধু আপনজন

ঘরের ভেতর বন্দি আছি

দুঃখভরা মন!

শপিংমলও বন্ধ এখন

বন্ধ বাজার হাট

কেমন করে এত্তোকিছু

দেয় চুকিয়ে পাঠ?

কোনোখানেই নেই সমাগম

হয় না লোকের ভীড়

গতির জীবন হঠাৎ করেই

হয়ে গেলো ধীর!

ভরদুপুরেও যায় হারিয়ে

ঘামে ভেজা সুখ

কোথায় গেলো খলবলানো

হাসিমাখা মুখ!

সাঁঝ বিকেলের রাঙ্গা সুরুজ

দেখার উপায় নাই

তাইতো এখন বন্দি থেকে

মুক্তি পেতে চাই৷

এই করোনা ভীতি ছড়ায়

সবার ডানে বাঁয়

রুক্ষ সময় টেনশনে তাই

এদিক-ওদিক চায়৷

সাহসীরা খুব সহজে নেয়

কি মেনে হার?

আল্লাহ করো অশুভ

এই সময় থেকে পার!

—–রিতা

মুখে কুলুপ দিয়ে রাখি

-:রিতা ফারিয়া রিচি:-

খাচ্ছো ভালো পরছো ভালো

আমলা হয়ে সরকারী

এই করোনায় নিত্য নতুন

কিনছো জিনিস দরকারী।

গরীব-দুখি পায় না এখন

নিত্য ভাত ও তরকারি

ঘাড়ের ওপর বিষেরফোঁড়া

আর্মি-পুলিশ ভরকারি৷

সরকারী সব চাকরিজিবি

এরাই দামী আমলা

অসংগতি সব মেনে নিই

চাই না খেতে মামলা।

ভাতের আশায় গরিব মানুষ

যাচ্ছে খেটে কামলা

মজলুমানের ওপর তবু ক্যান

করো গো হামলা?

মুখে কুলুপ দিয়ে রাখি

দেখে হাজার দুর্নীতি

তাল মিলিয়ে সময়

কাটাই যাই বাজিয়ে সুর নীতি।

—–রিতা।