Print Date & Time : 4 July 2025 Friday 9:07 pm

প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি তুলবে ক্লাইমেট পার্লামেন্ট

ঢাকা অফিস : চরাঞ্চলের মানুষের জীবন জীবিকার মানোন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চর উন্নয়ন বোর্ড অথবা চর উন্নয়ন অথরিটি গঠনের দাবি জানাবে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সংসদ সদস্যদের ফোরাম ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশ। ‘চর উন্নয়ন বোর্ড’ নামে স্বাধীন প্রাতিষ্ঠানিক কর্তৃপক্ষ গঠন করা হলে চরাঞ্চলের মানুষের উন্নয়ন কার্যক্রম যথাযথভাবে সমন্বয় এবং বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে বলে প্রত্যাশা তাদের।

বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ‘ক্লাইমেট টক’ বিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশের চেয়ারপার্সন তানভীর শাকিল জয়ের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সদস্য ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশের আহবায়ক নাহিম রাজ্জাক এমপি, নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি, আহসান আদেলুর রহমান এমপি, সেলিম আলতাফ জর্জ এমপি, আনোয়ারুল আবেদীন খান এমপি, ব্রিটিশ কাউন্সিলের আইবিপি ম্যানেজার আবুল বাশার, প্রতীকি যুব সংসদের চেয়ারপার্সন মো: আমিনুল ইসলাম, নির্বাহী প্রধান ও ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের সমন্বয়কারী সোহানুর রহমান প্রমুখ। এছাড়াও জেলা প্রশাসক মো: আব্দুল মতিনের সঞ্চালনায় গাইবান্ধা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যানগণ, সাংবাদিকবৃন্দসহ বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতৃবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

সভায় বক্তারা বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদসহ তিস্তা ও যমুনা নদীর ভাঙনে গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ৪ লাখ মানুষ নদীভাঙনে সর্বস্ব হারিয়েছে। চরের মানুষের উন্নয়নে জাতীয় বাজেটে প্রতিবছর বরাদ্দ দেয়া হলেও বরাদ্দের অর্থ যথাযথভাবে খরচ করা সম্ভব হয় না।

ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশের আহবায়ক নাহিম রাজ্জাক এমপি জানান, চর উন্নয়ন বোর্ড গঠনে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি তুলবে ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশের সদস্যরা।

ফুলছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান জিএম সেলিম পারভেজ বলেন, বালাসী ঘাটে ফেরি সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নিয়ে ১৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নদী খনন ও ঘাটের অবকাঠামো নির্মাণ করে বিআইডাব্লিউটিএ। সম্প্রতি দু’দফা পরিদর্শন করে নাব্য সংকটে এই রুট ফেরি চালাচলের উপযোগী নয় বলে জানিয়েছে কারিগরি কমিটি। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকে দায়ী করে তিনি বলেন, এতে এ অঞ্চলের মানুষের স্বপ্নভঙ্গ ঘটেছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঋতু বৈচিত্রে পরিবর্তন এবং তাপপ্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় ফসলহানির ঘটনাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বক্তারা আরো বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারনে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন রোগে ও অনাবৃষ্টির কারণে ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এ ক্ষয়-ক্ষতি মোকাবিলায় পানি নিস্কাশনের জন্য প্রয়োজনীয় স্লুইসগেট নির্মাণ, ভাঙন রোধে পাইলিং করা, নদী ড্রেজিং ও পাড় সংস্কার, বিল সমূহের পানি নিস্কাশনে খাল খনন, নদী ভাঙন রোধে গ্রোয়েন নির্মাণ ও নদী ভাঙনে বাস্তুচ্যুত মানুষের স্থানান্তর রোধের জন্য সরকারি খাসজমিতে গুচ্ছগ্রামে তৈরী করে আবাসন ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।

জলবায়ু সুশাসনের উপর গুরাত্বারোপ করে গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, বাংলাদেশ কার্বন নিঃসরণ করে খুবই কম। কিন্তু যেসব দেশ জলবায়ু বিপর্যয়ের জন্য ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। বিশেষত আমাদের দেশের উপকূলীয় এলাকার প্রান্তিক মানুষগুলো নদীভাঙন, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো, বন্যা ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়ছে। এতে মানুষ হারাচ্ছে কর্মসংস্থান, বাড়ছে জলবায়ু অভিবাসনের ঝুঁকি। এ সংকট মোকাবিলায় স্থানীদের জন্য আয়বৃদ্ধিমূলক কর্মসূচি গ্রহণ, পর্যটন উন্নয়নের পাশাপাশি চর বোর্ড গঠনের উপর জোর দেন।

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদীন খান বলেন, চরের জন্য সাবমারসিবল রাস্তা তৈরির উদ্যোগ নেয়া উচিত। নতুন কর্মসংস্থান তৈরিতে তৈলবীজ, সবজি ইত্যাদি উৎপাদনে আরো বেশি মনযোগী হতে হবে। কৃষিপণ্য ভিত্তিক কারখানা গড়ে তোলার মাধ্যমে উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে। বাড়াতে হবে বিনিয়োগও। চর কেন্দ্রিক দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র গড়ে তোলার উেেদাগ নিতে হবে।

ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশের চেয়ারপার্সন তানভীর শাকিল জয় বলেছেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে অধিক ঝুঁকিপুর্ন। পাশাপাশি ঝুঁকি মোকাবিলায় নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। জলবায়ু সহনশীলতার উদাহরণ বাংলাদেশ। জলবায়ু সংকট-জনিত সমস্যার পাশাপাশি সমাধানও স্থানীয় পর্যায় থেকে উঠে আসতে হবে।

জেলা প্রশাসক মো: আব্দুল মতিন বলেন, সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করতে কাউকে পিছিয়ে রাখা যাবেনা। গাইবান্ধার ১৬৫টি চরের প্রান্তিক মানুষের জীবনমানোন্নয়নে চর উন্নয়ন বোর্ড গঠন করা দরকার। এই বোর্ড হলে সঠিক ব্যবস্থাপনা ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

আলোচনা শেষে ক্লাইমেট পার্লামেন্টর প্রতিনিধিদল গাইবান্ধা বালাসি ঘাট ও ব্রক্ষপুত্র নদের ভাঙা এলাকা এবং চর পরিদর্শন করে।

ব্রিটিশ কাউন্সিলের প্রকাশ কর্মসূচির আওতায় এই পরিদর্শন ও ক্লাইমেট টক কার্যক্রমে সহায়তা প্রদান করছে প্রতীকি যুব সংসদ, ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস এবং আর্থ সোসাইটি।