জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতেও বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটারে টাকা রিচার্জ করতে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন হাজার হাজার গ্রাহকরা।
এক বা দুই নয়, গভীর মনোযোগের সঙ্গে গুনে গুনে ২৪০ থেকে ৩২০টি পর্যন্ত সংখ্যা প্রবেশ করাতে হবে ‘কি প্যাড’-এর মাধ্যমে। সব ঠিকঠাক হলে তবেই একজন প্রিপেইড গ্রাহক তার বিদ্যুৎ বিল দিতে পারবেন।
কোনো কারণে যদি সামান্য হেরফের হয় তাহলে নতুন করে আবার নামতে হবে সংখ্যা প্রবেশ করানোর যুদ্ধে। অসাবধানতাবশত দুবার ভুল নম্বর প্রবেশ করালে অ্যাকাউন্টটি একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ব্লক হয়ে যাবে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) প্রি-পেইড মিটারে টাকা রিচার্জ করতে গেলে টোকেনে এত লম্বা ডিজিট আসছে। এতে চরম ভোগান্তি গ্রাহকের।
অথচ আগে মিটারে টাকা রিচার্জের ক্ষেত্রে সাধারণত ২০ ডিজিটের একটি টোকেন পেত গ্রাহকরা। সেই টোকেনটি মিটারে প্রবেশ করালেই রিচার্জ সম্পন্ন হতো।
কিন্তু সম্প্রতি রিচার্জ করতে গেলে স্বাভাবিকের চেয়ে ২০/১৬ গুণ অর্থাৎ ৩২০ ডিজিটের একটি লম্বা টোকেন আসে। এই টোকেনের সবগুলো নম্বরটি মিটারে প্রবেশ করিয়ে রিচার্জ সম্পন্ন করতে হচ্ছে। আর তা করতে গিয়ে তিনবার ভুল হলে মিটার লক হয়ে যাচ্ছে।
চরপাথরঘাটার ভুক্তভোগী মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, ‘মিটার রিচার্জের ক্ষেত্রে বর্তমানে যা তা একটা অবস্থা, উপরে থাকে মিটার, সেই মিটারে এত বড় টোকেন উঠাতে গিয়ে আমরা নিজেরাই ক্লান্ত এখন। অথচ আগে মাত্র ছোট একটি কোড আসত, সেই কোড মিটার উঠালেই রিচার্জ সম্পন্ন হতো, এখন তো আর সেভাবে হচ্ছে না। এটা ভোগান্তি না চরম তামাশা।’
ইছানগরের আলী আহমদ নামে গ্রাহক বলেন, ‘আমি অক্ষর জ্ঞানহীন মানুষ, এত কিছু বুঝি না। এতগুলো নম্বর তোলতে লক করে ফেলি। অফিসের লোক এসে ঠিক করে দেয়।’
ওদিকে, বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো অবশ্য বলছে, ধীরে ধীরে গ্রাহকের মিটারগুলো স্মার্ট মিটারে রূপান্তর করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এটা শেষ হলে এমন সমস্যা আর থাকবে না। কিন্তু এখন পর্যন্ত এর বাস্তবায়ন চলছে খুবই ধীরগতিতে।
কর্ণফুলীর খোরশেদ আলম নামে আরেক গ্রাহক বলেন, ‘আধুনিক এই যুগে ডিজিটাল বাংলাদেশে এটা তো খুবই হাস্যকর। এর ফলে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে আমাদের। যত দিন যাচ্ছে সব কিছু স্মার্ট হচ্ছে। সেখানে বিদ্যুৎ বিল দিতে এত বড় নম্বর। স্থানীয় কয়েকজন জানালেন তারাও ২৪০, ৩২০, ৩৫০ থেকে ৩৬০টি সংখ্যাও প্রবেশ করিয়ে বিল সম্পন্ন করছেন। অনেকের হাত ব্যথা। গাড় ব্যথা।’
কর্ণফুলীতে দায়িত্বরত বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারি প্রকৌশলী মোঃ রাশেল বলেন, বছরের শুরুতেই একবার গ্রাহকের সমস্ত ডাটা আপডেট হতে এ ধরনের ডিজিট আসে। আবার এত বড় সংখ্যা ব্যবহারের কারণ হলো-একেকটি সংখ্যা দিয়ে গ্রাহকের নাম, ক্যাটাগরি ইত্যাদি তথ্য বোঝায়। সাংকেতিক এই লেখাগুলো জমা হয় বিতরণ কোম্পানিগুলোর সার্ভারে। নতুন করে কোনো তথ্য হালনাগাদের প্রয়োজন না হলে ২০ সংখ্যার ডিজিট দিয়েই রিচার্জ করা যায়।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড পটিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী (বিতরণ বিভাগ) আ স ম রেজাউন নবী বলেন, ‘অনেক সময় বিদ্যুতের ট্যারিফ বা মূল্য পরিবর্তন, লোড বৃদ্ধি, নতুন সংযোগ কিংবা কোনো ধরনের অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন হলে তখনই গ্রাহককে এ ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। আমাদেরও সব ডিজিট এন্টার করে বিল দিতে হয়। এটা সামনে একেবারেই কমে যাবে। তখন ভোগান্তি কমবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি কারো লক হয়। তখন আমরা অফিস থেকে লোক পাঠিয়ে তা ঠিক করে দেই। ডিজিট গুলো প্রবেশ করানোর সময় কলম দিয়ে দাগ কেটে এন্টার প্রেস করলে ভুল করার সম্ভাবনা কম থাকে।’
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post