শেষ হচ্ছে দেশের বহুল প্রতীক্ষিত মেগা প্রকল্প বঙ্গবন্ধু টানেলের কাজ। ডিসেম্বর মাসের মধ্যে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত এই টানেলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হওয়ার কথা রয়েছে। ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে প্রকল্পের যাবতীয় কাজ। এদিকে প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ হয়ে যাওয়ায় প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ পাওয়া নিয়ে শঙ্কার মধ্যে পড়েছে প্রকল্পের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া আনোয়ারার ৫০০-৬০০ পরিবার। দেশের এই মেগা প্রকল্পের এক প্রান্ত পতেঙ্গা হলেও অন্য প্রান্ত হচ্ছে আনোয়ারা উপজেলা। ফলে টানেলের বহু লেন বিশিষ্ট সংযোগ সড়কের কারণে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি হারানোসহ বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ ও চাতরী ইউনিয়নের প্রায় ৫০০-৬০০ পরিবার।
জানা যায়, এই টানেলের মূল সংযোগ সড়কটি বন্দর, রাঙ্গাদিয়া, বৈরাগ ও চাতরী মৌজার অংশ দিয়ে গিয়ে যুক্ত হয়েছে পিএবি ছয় লেন সড়কে। টানেল সড়কের ভূমি অধিগ্রহণ বিভাগ মালিকদেরকে এলএ শাখা থেকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের পাশাপাশি বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ভূমির মালিকদের পুনর্বাসনের অতিরিক্ত মঞ্জুরি দিয়ে আসছে। তবে ইতিমধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ হওয়ায় এই পুনর্বাসনের অতিরিক্ত মঞ্জুরি কার্যক্রম স্থগিত করতে যাচ্ছে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ। ফলে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা পাওনা থেকে বঞ্চিত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছে এলাকাগুলোর ৫০০-৬০০ পরিবারের।
টানেল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, বৈরাগ মৌজা থেকে ২০.৪০৩০ একর এবং বন্দর, চাতরী, রাঙ্গাদিয়া থেকে প্রয়োজনীয় নালা, ঘরবাড়ি, ভিটা, পুকুরসহ ভূমি অধিগ্রহণ করে কর্তৃপক্ষ। গত ৩১ আগস্ট প্রকল্প কর্তৃপক্ষ একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সেখানে উল্লেখ করা হয় যে আগামী ৩১ অক্টোবরের পরে এই প্রকল্পের আর কোনো প্রকার ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত ফাইল জমা নেবে না তারা। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ায় তারা তাদের প্রকল্পের কাজ সেতু মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করে তাদের কার্যক্রম স্থগিত করবে।
তবে টানেল নির্মাণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর দাবি, অধিগ্রহণকৃত ভূমির অনেক দাবিদার (প্রকৃত মালিক) করোনাকালীন সময়ে দেশে সবকিছু স্থবির থাকায় ও অনেকে প্রবাসে থাকায়, প্রকৃত মালিকানা ও ভুল বিএস রেকর্ড সংক্রান্ত বিষয়ে আদালতে মামলা মোকদ্দমা বিচারাধীন থাকায় এবং নাবালকদের অভিভাবক নিযুক্ত সংক্রান্ত সমস্যাসহ বিভিন্ন জটিলতার কারণে অনেক ভূমির ক্ষতিপূরণের টাকা এখন পর্যন্ত উত্তোলন করতে পারেনি হাজারো মানুষ।
এ ছাড়াও দুই-আড়াই বছর ধরে করোনার জন্য স্বাভাবিক জীবন স্থবির হয়ে থাকাসহ নানা জটিলতার কারণে এখন পর্যন্ত ক্ষতিপূরণের টাকা ওঠাতে পারেনি তিন ভাগের এক ভাগ ভূমির মালিক। যার ফলে কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে অন্তত ৬০০ পরিবার চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন তারা।
এদিকে কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশের পর থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যরা। ভূমির মালিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে এরই মধ্যে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসক, ইউএনওসহ স্থানীয় সংসদ সদস্য ও ভূমিমন্ত্রীর ধারস্থ হয়েছেন তারা।বৈরাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নোয়াব আলী বলেন, ‘১৯৮০ সাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত সিইউএফএল, কাফকো, কেইপিজেড, চায়না ইকোনমিক্যাল জোন, গ্যাস লাইন, বিদ্যুৎ লাইনসহ বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য এলাকার বহু সম্পত্তি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। অথচ ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকরা উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ না পাওয়ায় সহায়-সম্পত্তি হারিয়ে ভূমিহীন ও নিঃস্ব হয়ে গেছেন অনেকে।
সর্বশেষ কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহু লেন সড়কবিশিষ্ট টানেল নির্মাণ প্রকল্পেরও ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত হতে যাচ্ছে অন্তত ৬০০ পরিবার। তাই আমরা মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করছি অন্তত আরও এক বছর সময় বাড়ানো হোক।’
এ বিষয়ে টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের প্রকল্পের কাজ শেষ হচ্ছে। এ বিষয় নিয়ে তো আমরা বসে থাকতে পারি না। তারা নানা জটিলতার কারণে আটকে আছে। এখন এই কারণে আমাদের বসিয়ে রাখা যাবে না। নির্দিষ্ট একটা সময়সীমার মধ্যে আমাদের কাজ শেষ করতে হবে। ক্ষতিপূরণ নিয়ে কেউ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তার জন্য একাধিকবার মাইকিং এবং আমাদের নিয়োজিত সংস্থাগুলোর মাধ্যমে কাজ করে গেছি। তবুও আমরা চেষ্টা করব মানুষ যাতে ক্ষতিপূরণটা ঠিকমতো পায়।
বা// দৈনিক দেশতথ্য// ০৭, নভেম্বর ২০২২//
প্রিন্ট করুন
Discussion about this post