বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেফমুবিপ্রবি) এক শিক্ষার্থী র্যাগিংয়ের অভিযোগ তুলেছে অই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ন আহ্বায়কের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী অই শিক্ষার্থী র্যাগিংয়ের শিকার হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ন আহ্বায়ক নূরে জান্নাতের বিরুদ্ধে হলে ডেকে নিয়ে র্যাগিং দেওয়ার অভিযোগ করছেন শিক্ষার্থী জাকিয়া সুলতানা জয়া।
সোমবার (৩ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের নূরুন্নাহার বেগম হলের ২৩৪ নম্বর রুমে র্যাগিং দেওয়ার
ঘটনাটি ঘটে। এসময় ওই ছাত্রী জ্ঞান হারিয়ে প্রায় ৪৫ মিনিট ওই রুমে পরে থাকে। জ্ঞান ফিরলে আরো অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এ ঘটনায় ওই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) ড. এ এইচ এম মাহবুবুর রহমান বরারব একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
ওই লিখিত অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, আমি জাকিয়া সুলতানা জয়া, ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের একজন নিয়মিত শিক্ষার্থী। গত বৃহস্পতিবার ফিশারিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী নূরে জান্নাত আপু আমাকে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করতে বলেন। পরে আমি অসুস্থ শরীর নিয়ে গত রোববার দুপুর ২.৫০ মিনিটে হলে আসি। হলে প্রবেশ করার পর আমাকে সিএসি বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী আদর ভাইকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু উক্ত অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। পরদিন রোজ সোমবার সকাল ৯:৩০ মিনিটে আমাকে ও এনিকে (প্রথম বর্ষে ১ম সেমিস্টার, ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্রী) হলের ২৩৪ নম্বর রুমে যেতে বলা হয় এবং উনার সঙ্গে দেখা করে ক্লাসে ঢুকতে বলা হয়। পরে ক্লাস মিস দিয়ে আমি ও এনি হলে যাই।
পরে আমাকে আবার ওই একই অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং পরে আমাকে আমার জুনিয়র শিক্ষার্থী এনির সামনে ১০ মিনিট কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় এবং পরে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। তাঁর ১ ঘন্টা পর একটু একটু জ্ঞান আসলে আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, সোমবার সন্ধ্যায় শিক্ষার্থী জয়া এঘটনায় অসুস্থ আরো বেশি হলে জামালপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য জামালপুরের একটি বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন।
এঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলেন,’প্রেম সংক্রান্ত বিষয়ের জের ধরে এ ঘটনাটি ঘটছে। এনি নামে এক শিক্ষার্থী নূরে জান্নাতের কাছে হয়তো কোন বিচার দিয়ে ছিলেন প্রেম সংক্রান্ত ঘটনা নিয়ে। পরে নূরে জান্নাত দুইজনে ডেকে হলে এই ঘটনা ঘটায়।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জয়া বলেন,’আমাকে হলে যে বিষয়ের জন্য ডাকা হয়েছে আমি সে বিষয়ে সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। কেন আমাকে হলে নিয়ে এরকম মানসিক নির্যাতন করা হলো তা আমি জানি না।
আমি অসুস্থ থাকার পরও বেশ কয়েকবার আমাকে হলে ডাকা হয় এবং সেখানে নিয়ে মানসিক নির্যাতন করা হয় এবং এক পর্যায়ে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি সেখানে। এ বিষয়ে আমি প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই এবং বঙ্গমাতা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ঘটনা আর দ্বিতীয়বার যেন না ঘটে এটাই আমার প্রশাসনের কাছে চাওয়া।
ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী এনি জানান,
আমি নূরে জান্নাত আপু বা অন্য কারো কাছে কোন বিষয়ে বিচার দেইনি। সে দিনই হলে গিয়ে তাকে (নূরে জান্নাত) আমি প্রথম দেখি। এর আগে তাকে আমি চিনতামও না। হলে আমাকে এবং জয়া (ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী) আপুকে কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। এক পর্যায়ে জয়া আপু জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। আমার পরীক্ষা থাকায় কিছুক্ষণ পর হল থেকে আমি চলে আসি।
এ বিষয়ে নুর- এ-জান্নাত বলেন,’এঘটনার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমায় শুধু শুধু হয়রানি করা হচ্ছে।ওই মেয়ে তো আগে থেকেই অসুস্থ ছিলো।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আহবায়ক কাউছার আহম্মেদ স্বাধীন বলেন, নুর-এ-জান্নাত যুগ্ন আহবায়ক এটা ঠিক আছে। আর অই ছাত্রীও কিন্তু ছাত্রলীগেরই। ঘটনাটা নিতান্ত একটা ব্যাক্তিগত ইস্যু। প্রেম ঘটিত বিষয়। এই বিষয় আমরা অবগত হওয়ার সাথে সাথেই সেন্ট্রাল ছাত্রলীগকে অবগত করছি। এই বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে তারা যখন রিপোর্ট দিবে কার কতটুকু দুষ আমরা অই অনুযায়ী ব্যাবস্থা নিবো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) ড. এ এইচ এম মাহবুবুর রহমান বলেন,’আমরা একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত
চলছে।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. কামরুল আলম খান বলেন,’এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না, আর কিছু শুনিও নি। এখন পর্যন্ত আমার কাছে কোন লিখিত অভিযোগ বা কেউ কিছু বলেনি।
খালিদ সাইফুল, দৈনিক দেশতথ্য,৫ এপ্রিল ২০২৩
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post