রফিকুল্লাহ্ কালবী:
সরকার অবৈতনিক শিক্ষা-কার্যক্রম চালু করতে চাইলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তা হতে দিচ্ছে না। শিক্ষকগণ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাথে আঁতাত করে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নিকট থেকে নানান উছিলায় হাতিয়ে নিচ্ছে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা।
ফলে ভুক্তভোগী অভিভাবক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীলদের মধ্যে দিন দিন বাড়ছে তিক্ততা।
বিশেষ করে এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল ও মাদরাসাগুলোতে এই অনিয়ম দীর্ঘদিন ধরে চর্চিত হয়ে আসছে- যার সাথে শিক্ষা অধিদপ্তর ও মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের কোন সম্পর্ক নেই।
একটি সময় শিক্ষার্থিরা বার্ষিক পরীক্ষা দিয়ে তাদের ফলাফলের ভিত্তিতে স্বয়ংক্রীয়ভাবে পরবর্তী শ্রেণিতে ভর্তি হতো। ১৯৯৯ সাল বা তৎপরবর্তীকালে সমস্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগণ এক জোট হয়ে স্বয়ংক্রিয় ভর্তিতে ফিস আরোপ করে এবং অভিভাবকদের নিকট থেকে পুনঃভর্তির নামে নির্দিষ্ট হারে টাকা নিতে থাকে। পরবর্তীকালে এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদের সাথে মিটিংয়ের মাধ্যমে রেজুলেশন করে শিক্ষার্থিদের নিকট থেকে কোন্ খাতে কত টাকা আদায় করবে তা জায়েজ ফর্মুলায় নির্ধারণ করে নেয়। বিশেষ করে পুনঃভর্তি ফী ও পরীক্ষার ফী যেহেতু বোর্ড কর্তৃক চাপিয়ে দেয়া বিষয় নয়, তাই বিভিন্ন বিদ্যালয় ও মাদরাসায় এই ফী- এর পরিমাণে হেরফের হতে দেখা যায়। এ বছর কুষ্টিয়ার বিভিন্ন স্কুল ও মাদরাসায় সরেজমিন ঘুরে এই ভিন্নতার চিত্র দেখা গেছে। কোনো কোনো স্কুল ও মাদরাসার কমিটি অষ্টম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণিতে পুনঃভর্তির ফী নির্ধারণ করেছে পাঁচশত টাকা। আবার কিছু কিছু এমপিওভুক্ত মাদরাসা তাদের অষ্টম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণিতে পুনঃভর্তির ফিস নির্ধারণ করেছে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত। ফলে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন বছরের শুরুতে চরম অর্থনৈতিক বিপাকে পড়েন। কেননা, ডিসেম্বর মাসে বিদ্যালয়ের সকল বকেয়া বেতন ও পরীক্ষার ফী পরিশোধ করার পরের মাসেই জানুয়ারিতে কমপক্ষে এক মাসের বেতনসহ পুনঃভর্তি ফী পরিশোধ করে ভর্তি নিশ্চিত করা সাপেক্ষে নতুন বই সংগ্রহ করতে হয়। এতে দরিদ্র অভিভাবকগণ পড়েন সীমাহীন অর্থনৈতিক ও মানসিক চাপে।
অভিভাবক ও সুধীজন মনে করেন, শিক্ষা অধিদপ্তর ও বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত নয়- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমন সকল আরোপিত ফি বাতিল করা উচিত। বিশেষ করে পুনঃভর্তি ও তাতে কমিটি কর্তৃক অবৈধ ফি নির্ধারণ বাতিল করতে হবে। সরকার যেখানে প্রাথমিক শিক্ষার মতো মাধ্যমিক শিক্ষাকেও অবৈতনিক করতে বদ্ধপরিকর সেখানে শিক্ষকদের ঠুনকো বাণিজ্যিক ভাবনার ফলে সরকারের সেই পরিকল্পনা ব্যাবহত হতে চলেছে। শুধু তাই নয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসাগুলোতে যেসব দরিদ্র শিক্ষার্থী উপবৃত্তি ভোগ করে তাদের নিকট থেকেও নেয়া হয় প্রতিমাসে বেতন ও পুনঃভর্তি ফি। এভাবে পুনঃভর্তির নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অভিভাবকদের নিকট থেকে বছরের শুরুতেই হাতিয়ে নেয় লক্ষ লক্ষ টাকা। জানা গেছে, শিক্ষকদের পাশাপাশি কমিটির সদস্যগণের মধ্যেও এই টাকা ভাগবাটোয়ারা হয়ে থাকে।
শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা যায়, বিদ্যালয়ের শিক্ষক কিংবা পরিচালনা পরিষদের সদস্যরা এই ধরণের কোন বাণিজ্যিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে না, এটা অবৈধ। বোর্ডের কাছে যদি অভিভাবকদের পক্ষ থেকে যথাযথ প্রমাণসহ লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয় তাহলে বোর্ড অভিযুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্টানের দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবে।
কুষ্টিয়া দায়রা আদালতের একজন সিনিয়র আইনজীবী বলেন, যেহেতু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত ফি ও কর্মকাণ্ডের বাইরে শিক্ষার্থিদের নিকট থেকে আর কোন অর্থ গ্রহন করতে পারে না, তাই তাদের পুনঃভর্তির রেজুলেশন সম্পূর্ণভাবে অবৈধ। অভিভাবকেরা যদি এ ব্যাপারে আদালতের শরণাপন্ন হয় তাহলে তারা সুবিচার পাবে।

Discussion about this post