ঠাকুরগাঁও অফিস : ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রাক্তন স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বদলী আদেশ নিয়ে খোদ স্বাস্থ্য বিভাগে শুরু হয়েছে তোঘলকি কারবার।
প্রায় ৬ বছর ধরে কর্মরত এ্যাডহক মেডিকেল অফিসার মো: আব্দুল জব্বারকে ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তার পদ থেকে বদলী করা হয় ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা হাসপাতালের এমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার হিসেবে। গত ০৮.০৯.২৫ইং অধিদপ্তরের বদলী আদেশে তাকে ৬ দিনের মধ্যে নবাগত কর্মকর্তার কাছে চার্জ হস্তান্তর পূর্বক নতুন কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশনা থাকলেও তিনি আদেশের ২৬ দিনেও কতৃপক্ষের নির্দেশ পালন করেননি বরং নিজেকে বহাল দাবি করে অবৈধভাবে বিভাগীয় আইবাস সফটওয়ার ব্যবহার করে বিভাগীয় স্টাফদের সেপ্টেম্বর/২৫ ইং মাসের বেতন গত ০৪ অক্টোবর ফরোয়ার্ড করেন এবং অফিসের পরিসংখ্যানবিদ আরমিনা ্আকতার কে হাত করে ইউএইচএফপি এর মেইল থেকে ডাইরেক্টর মিটিংয়ের পাসওয়ার্ড নিয়ে নিজের বাড়ীতে বসে অফিস ইনচার্জ হিসেবে অধিদপ্তরের ৯ অক্টোবরের জুম মিটিংয়ে অংশ নিয়ে নিজের কর্তৃত্ব জাহির করেন এবং এখনো তিনি বহাল হিসেবে দাবি করেন।
অথচ অফিসের পরিসংখ্যানবিদ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্যের প্রতি অবহেলা করে নিজের অফিস প্রধানকে জুম মিটিংয়ের পাসওয়ার্ড না দিয়ে গোপনে প্রাক্তন কর্মকর্তাকে সরবরাহ করেন, যা গুরতর অসদাচরন বলে মনে করছেন অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীরা।
উল্লেখ্য পরিসংখ্যানবিদ আরমিনা আকতার নতুন কর্মকর্তাকে বেকায়দায় ফেলতে গত ২৭ সেপ্টেম্বর অফিসের মেইল পাসওয়ার্ড ভুল দেন। পরে বিষয়টি নিয়ে সমস্যা হলে তিনি ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান। কেন্দ্রের নবাগত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা.কামাল আহম্মেদ কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতাল থেকে ছারপত্র নিয়ে গত ১৫ সেপ্টেম্বর ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জন কার্যালয়ে যোগদানপত্র দাখিল করেন। সিভিল সার্জন ১৬ সেপ্টেম্বর আর্টিকেল ৪৭ অনুযায়ী যোগদান গ্রহন করে প্রয়াজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। ঐদিন থেকে অফিসিযালী দায়িত্ব পালনের ২২ দিন পরে আকষ্মিকভাবে অধিদপ্তরের জুম মিটিংয়ে প্রাক্তন কর্মকর্তার অংশ গ্রহনের বিষয়টি নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।
এ বিষয়ে রংপুর বিভাগীয় পরিচালক এবং পরিচালক প্রশাসন ডা. কামাল আহম্মেদ কে জুম মিটিংয়ে অংশ না নেয়ার কারন জানতে চাইলে তিনি মিটিংয়ের বিষয়ে অবগত নন এবং তাকে জুম মিটিংয়ের লিংক দেয়া হয়নি বলে জানান। নবাগত কর্মকর্তা যোগদানের পর থেকে পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে, প্রতিটি বিভাগে কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে ফিরে এসেছে প্রানচাঞ্চল্য ও আন্তরিকতার পরিবেশ। ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় ৮ অক্টোবর থেকে চালু করা হযেছে গর্ভবতি মহিলাদের বিনা পয়সায সিজারিয়ান কার্যক্রম। দরিদ্র রোগীদের আস্থা ফিরেছে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার প্রতি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাকিবুল ইসলাম ও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা হাসপাতাল পরিদর্শন করে নবাগত কর্মকর্তার জনস্বার্থ ও সেবামূলক কার্যক্রমে আশাবাদ ব্যাক্ত সহ সার্বিক সহযোহীতার আশ্বাস দিয়েছেন।
ইতোমধ্যে প্রাক্তন কর্মকর্তা উর্ধতন কতৃপক্ষের নির্দেশ উপেক্ষা করে অফিসের দায়িত্ব হস্তান্তর না করে অফিসের প্রয়োজনীয় মালামাল ও যানবাহন তার নিজের হেফাজতে ব্যাক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন। অফিসের সরকারী জিপ গাড়ী, ১ টি মোটর সাইকেল, ২ টি ল্যাপটপ, স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সরকারি মোবাইল সিম যার নম্বর ০১৭০১-২৪৮৭৪৬, ব্যাংক হিসাবের ব্যালেন্স সহ ষ্টেটমেন্ট, চেকবই এবং অফিসিয়াল আইবাস এর পাসওয়ার্ড নিজের হেফাজতে রেখে অবৈধ ব্যবহার সহ স্বাস্থ্য বিভাগের মত ষ্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ন একটি বিভাগে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি সহ অফিসের কাজের পরিবেশে বিঘ্ন ঘটাচ্ছেন এবং যেকোন মূল্যে তিনি তার বদলী আদেশ বাতিল করে ফিরে আসবেন বলে কর্মচারেিদর মধ্যে আতংক ছড়াচ্ছেন।
স্বাস্থ্য বিভাগের স্বারক নং ডিজিএইচএস/পার-২/বিধি-২০২৪/৬৪৭৭ তারিখ ১১/০৮/২৪ ইং পরিচালক প্রশাসন ডা.মো: হারুন-অর রশিদ স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এডহক বা প্রকল্পভুক্ত(পরবর্তীতে এনক্যাডারকৃত) ও প্রকল্প ভুক্ত চিকিৎসক কর্মকর্তাসহ ডা: আব্দুল জব্বারের পদায়ন আদেশ বাতিল করেন। এর পরেও এই কর্মকর্তা বহাল তবিয়তে তার কার্যক্রম চালিযে যান। এমতাবস্থায় ৮ সেপ্টেম্বর পূনরায় বদলী আদেশ হলে শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী এবং বেপরোয়া এই কর্মকর্তা সরাকে ধরা জ্ঞান করে গত ২৬ দিনেও তার দায়িত্ব হস্তান্তর করেননি এবং সরকারী জিপ গাড়ী সহ অফিসিয়াল মালামাল নিজের হেফাজতে রাখা, বদলীকৃত কর্মস্থলে যোগদান না করে বদলী আদেশ বাতিলের জন্য রাজনৈতিক নেতাদের দিয়ে তদ্বির অব্যাহত রেখে বিভাগীয় চেইন অব কমান্ড অমান্য করার গুরুতর অসদাচরন সত্বেও কতৃপক্ষ এখন পর্যন্ত দোর্দন্ড প্রতাপশালী এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করেননি। যা নিয়ে জনমনে নানা পশ্নের উদ্রেক করেছে।
অভিযোগের বিষয়ে অধিদপ্তরের পরিচালক প্রশাসন ডা.এবিএম আবু হানিফ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিধি মোতাবেক যা হবার তাই করা হবে, নিয়মের বাহিরে কোন কিছুই করা হবেনা।

Discussion about this post