সিলেট অফিস : ঈদের দীর্ঘ ছুটির পর সশরীরে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা কার্যক্রম শুরুর কথা ছিলো।
কিন্তু চলতি জুন মাসে সিলেটে কয়েক ধাপে বন্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস কার্যক্রমে অনলাইনে আর পরীক্ষা কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়। এরই মধ্যে সরকার ঘোষিত প্রত্যয় স্কিমের প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চলমান আন্দোলন কর্মসূচিতে ক্লাস পরীক্ষার কার্যক্রমের ব্যঘাত ঘটছে।
এতে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সেশনজটের আশঙ্কা করছেন। স্নাতক শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তরের শিক্ষাথীর্রা বেশি দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন।
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরে প্রতি বর্ষের দুইটি সেমিস্টার সম্পন্ন হয়ে থাকে। এর মধ্যে মে থেকে জুলাই এই তিনমাস প্রথম সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তবে গত ২৬ মে থেকে ২০ জুন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রীষ্মকালীন ও ঈদের ছুটি ছিল। ছুটি চলাকালীন গত ১৭ জুন থেকে সিলেট বিভাগে বন্যা পরিস্থিতির অবনতিতে বিপাকে পড়েন ছুটিতে বাড়িতে যাওয়া শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে সিলেটের উপজেলাগুলো, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের কয়েকটি উপজেলার শিক্ষার্থীদের বন্যার কারণে যাতয়াতে ব্যাঘাত ঘটে।
এরকম পরিস্থিতি চলতে থাকলে গত ২১ জুন অনলাইনে ক্লাস কার্যক্রম ও ২৩ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত বিভিন্ন বিভাগের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষাগুলো স্থগিত করা হয়। বিভাগীয় প্রধানরা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে নতুন করে সময়সূচি নির্ধারণের সিদ্ধান্ত হয়।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের আহ্বানে সরকারঘোষিত প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহার, বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের শিক্ষকদের প্রস্তাবিত সুপারগ্রেডে অন্তর্ভুক্তকরণ ও স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকসমিতি। গত মে মাস থেকে বিভিন্ন প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করছে সংগঠনটি। এর মধ্যে ছিল কালো ব্যাজ ধারণ, মানববন্ধন, প্রতিবাদী মিছিল, অবস্থান কর্মসূচি ও কর্মবিরতি। সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অর্ধদিবস কর্মবিরতি ও বেলা ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় সামাজিক বিজ্ঞান ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকরা।
দাবি আদায় না হলে ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা। এতে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। কিন্তু এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা ও ক্লাস কার্যক্রমের বিলম্বে সেশনজটের কথা বলছেন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মাভৈঃ আবৃত্তি সংসদের আহ্বায়ক ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী শাহরিয়া আফরিন প্রকৃতি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বন্যার কারণে বেশ কয়েকটি বিভাগের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এখন শিক্ষকদের কর্মবিরতি চলতে থাকলে বড় সেশনজটের মুখে পড়তে হবে। পারিবারিকভাবে অনেকে স্বচ্ছল নয়, চাপ রয়েছে পড়াশোনা শেষে দ্রুতই চাকরির প্রতিযোগিতায় নামতে হবে। এমনিতেই মহামারী করোনার কারণে শিক্ষাজীবনের দুই বছর ক্ষতি হয়েছে। এটা কিন্তু সার্টিফিকেটে উল্লেখ থাকবে না। শেষপর্যন্ত দেখা যাবে চাকরির প্রস্তুতির জন্য সময়ই পাওয়া যায়নি। একসময় চাকরির বয়সই শেষ হয়ে যাবে। তাই শিক্ষকদের কর্মবিরতি চলতে থাকলে সবদিকে শিক্ষার্থীদেরই ক্ষতি হচ্ছে, সেশনজট তৈরি হচ্ছে।’ তাই শিক্ষকদের দাবির বিষয়ে সরকারকে যথাযথ ও দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বলে মনে এই শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান মাসরুর বলেন, ভিসি বিরোধী আন্দোলনসহ নানাপরিস্থিতির কারণে আমরা আমরা ইতোমধ্যে এক থেকে দেড়বছরের সেশনজটে আছি। বর্তমানে শিক্ষকদের কর্মবিরতি যদি আরও প্রলম্বিত হয়, তাহলে লম্বা সেশনজটের আশঙ্কা করছি। এতে ক্যারিয়ারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। সব শিক্ষার্থীই বিসিএস, গবেষণা কিংবা উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। সেশনজটের কারণে সবাই ক্ষতির সম্মুখীন হবে।’
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির সাবেক সভাপতি মেহেরাব সাদাত বলেন, ‘বিভিন্ন পরিস্থিতি সেশনজটের চিন্তার উদ্রেগ ঘটাচ্ছে। এই প্রেক্ষিতে সামগ্রিকভাবে শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।’
শিক্ষকদের চলমান আন্দোলন বিষয়ে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকসমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. কবির হোসেন বলেন, ‘একটা বিশেষ মহল বিভিন্নভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে একের পর এক ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে । হঠাৎ করে ‘প্রত্যয়’ নামক সর্বজনীন পেনশন স্কীম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপর চাপিয়ে দেওয়া তার অন্যতম উদাহরণ। এর ফলে মেধাবী শিক্ষার্থীরা আজ শিক্ষকতা নামক মহান পেশা থেকে বিমুখ হচ্ছে ও মেধা বিদেশে পাচার হচ্ছে। এরকম চলতে থাকলে আধুনিক স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে গভীর অন্তরায় সৃষ্টি করবে এবং ভবিষ্যতে শিক্ষা ব্যবস্থাকে নিয়ে যাওয়া হবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।’
‘এর কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষাথীরা সেশনজটের কবলে পড়ুক তা কোনোভাবেই কাম্য নয়’ জানিয়ে আলমগীর কবির বলেন, ৩০ জুনের পূর্বেই শিক্ষকদের দাবিদাওয়ার ব্যাপারে সরকার কথা বলে সমাধান করবে বলে আমরা আশাবাদী।
খালিদ সাইফুল, দৈনিক দেশতথ্য, ২৮ জুন২০২৪