আমার বাবা বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। অনেকটা সময় তার সাথে ইশারাতেই কথা বলতে হয়। তবে আগে ছোটবেলায় আমি নাকি তার সাথে ইশারায় কথা বলতে চাইতাম না কিংবা তাকে বাবা বলে ডাকতাম না। তার খুব আফসোস হতো আমি তাকে বাবা বলে ডাকতাম না বলে। এজন্য তখন আমার অন্য চাচাদের কাছে অভিযোগ করত। অবশ্য সেসব অভিযোগ কিংবা অভিমান এখন আর নেই। মিলেমিশে ইশারা ইঙ্গিতেই তার সাথে চলে আমার ঘন্টার পর ঘন্টা কথোপকথন। তবে হ্যাঁ আমার ঠিক মনে আছে ছোটবেলায় যখন বাবার সাথে বাজারে যেতাম তখন বলতাম এদাখো, আলু কেনো, বেগুন কেনো, মরিচ কেনো। ইত্যাদি সব মিলিয়ে বলতে হতো। কিন্তু ছোট চাচা যখন আমাকে বলল যে তুই নাকি তোর বাবাকে ডাকিস না, এমন কথা শোনার পর আমি বাবাকে কখনো আব্বা আবার বাবা বলে সমস্বরে চিত্কার করে ডাকতেই তিনি ভীষণ খুশি হত। সেই খুশির পর থেকেই আমি এভাবেই হাসি খুশির সাথে ইশারা ভাষায় কথোপকথন করে আসছে। ছোটবেলায় দেখতাম আবার অনেক বোবা বন্ধুরা আছে তাদের সাথে কথাবার্তা বলতো। গ্রামের বাইরের বন্ধুরা মাঝে মাঝে বেড়াতে আসতো আমাদের বাড়িতে। আবার আব্বা ও সেসব এলাকায় বেড়াতে যেত। এই বাবার বন্ধুদের আসা-যাওয়া এবং তাদের কথোপকথন আমার খুব ভালো লাগতো। আমাদের গ্রামে স্থানীয় সপ্তাহে দুই দিন হাট বসতো। মশান বাজারেই সেই হাটের পাশেই আশপাশ এলাকার বেশ কয়েক বোবা বন্ধুরা মিলে চারিদিকে গোল করে ঘাসের উপর বসে তারা ইশারা আঙ্গিকে কথা বলতো। মনের কথা, ভাললাগার কথা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপচারিতায করতো তারা। এ দৃশ্য দেখতে আশেপাশে অনেক মানুষ তাদের চেয়ে থাকতো। সেসব বোবাদের মধ্যে আমার বাবা কিরামত আলী (কেরান কাল), মান্নান কাল, সাবান কাল, সোনা কাল, সুবান কাল।
নিজের ভাষায় কথা বলার জন্য কত যুদ্ধ, পরিশ্রম। অথচ অনেকই আছেন যাদের ভাগ্যে নিজের ভাষাটুকু উচ্চারণের সেই সুযোগটাই হয়নি আর হয়তো হবেও না। তারা তাদের মনের ভাষা ব্যক্ত করেন নিজের ইশারার মাধ্যমে। সেই ইশারায় কিছু ভাষা রয়েছে। শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধী মানুষ ইশারার মাধ্যমে তাদের মনের ভাব প্রকাশ করে।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য //ফেব্রুয়ারী ৭,২০২৩//
প্রিন্ট করুন
Discussion about this post