রাকিবুল ইসলাম তনু,পটুয়াখালী : বৈশাখ মানেই বাঙালির প্রাণের উৎসব। বৈশাখে মিশে আছে বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। বাংলা নতুন বছরে ফুটে উঠে গ্রাম-বাংলার চিরায়ত সৌন্দর্য। গ্রামে গ্রামে বৈশখী মেলা বসে। মেলায় থাকে রকমারি খাবার। যার মধ্যে প্রধান খাবার বাতাসা। প্রাচীনকাল থেকে পটুয়াখালীর বাউফল অঞ্চলে বৈশাখে বাতাসা তৈরি ও বিক্রি হয়ে আসছে। কয়েক দশক আগেও বৈশাখ মাসজুড়ে হাটে বাজারে মেলায় বাতাসার দেখা মিললেও এখন আর চোখে পড়ে না। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে বৈশাখের বাতাসা। বিভিন্ন ছোট বড় হাট বাজার, বৈশাখী মেলা ও থৌলে ব্যবসায়ী বাতাসা বিক্রি করতেন। নতুন বছরের বৈশাখ মাসের বৈশাখী উৎসব উপলক্ষে এ বাতাসা তৈরি করা হয় বলে বৈশাখের বাতাসা বা বৈশাখী বাতাসা নামে পরিচিত। মিস্টি কারিগররা চিনি ও মিঠা গলিয়ে বিশেষভাবে এ বাতাসা তৈরি করা হয়। আম, কাঠাল, কলা ও দুধের সাথে মিশিয়ে এ বাতাসা খেয়ে থাকেন। খেতে অনেক সুস্বাদু ও সুমিস্টি।
তবে এক সময় গ্রাম- বাংলায় ব্যাপকভাবে বাতাসা তৈরি ও বিক্রি হত। দোকানীরা বৈশাখী মেলা, হাটে বাজারে বাতাসার পরসা সাজিয়ে বসতেন। যা চিরায়ত বাংলার সৌন্দর্য। মেলায় ঘুরে বাতাসা, ঘির, ঘোল, দই, কুলফি মালাই, মুড়িসহ দেশীয় বিভিন্ন খাবারের স্বাদ না নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম। আধুনিকতার ছোঁয়া স্মৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে সেই সোনালী শৈশব। আগের মত নেই বৈশাখের আমেজ। গ্রামে গ্রামে বসে না বৈশাখী মেলা। যেকারণে হারিয়ে যেতে বসেছে বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য।
উপজেলার কালাইয়া বন্দরের প্রবিণ মিস্টি ব্যবসায়ী বিরাজ ময়রা বলেন, প্রায় ৫০ বছর ধরে মিস্টি তৈরি ও বিক্রি করি। প্রতিবছর বৈশাখে বাতাসা তৈরি করা হয়। একযুগ আগেও বৈশাখ মাস এলেই বাতাসার চাহিদা বেড় যেত। গ্রামে-গঞ্জে ছোট বড় মেলা হত। সেখানে বাতাসা বিক্রি হত। মানুষও কিনতেন। এটি আমাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার। তবে এখন আর কদর নেই। তারপরেও প্রতিবছরই বাতাসা তৈরি করি। যদিও বিক্রি কম, তারপরেও ঐতিহ্যবাহী বাতাসা তৈরি ধরে রেখেছি।
কালাইয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. মেহেদী হাসান রাসেল বলেন, আমরা বাঙালির ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। শিকড় থেকে হারিয়ে যাচ্ছি। এক সময় বাংলা নতুন বছরে গ্রামে নানা উৎসহ উদ্দিপনায় নতুন বছর উদযাপন করা হত। সবাই মিলে মিশে উৎসব করতাম। বাহারি খাবারের স্বাদ নিতাম। বিশেষ করে বাতাসা। দিনদিন সেই সব গ্রামিণ ঐতিহ্যবাহী খাবার হারিয়ে যাচ্ছে।

Discussion about this post