নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বিপ্লবী বাঘা যতীনের জন্মদিন আজ। বাঘা যতীনের জন্ম হয় ১৮৭৯ সালের ৭ ডিসেম্বর মামা বাড়ী কুষ্টিয়া জেলার কয়া গ্রামে। তাঁর পৈত্রিক নিবাস বাংলাদেশের যশোর জেলার ঝিনাইদহ মহকুমার রিসখালী গ্রামে। তাঁর পিতার নাম উমেষ চন্দ্র মুখোপাধ্যায় এবং মায়ের নাম শরৎশশী দেবী। ঝিনাইদহ জেলায় পৈত্রিক বাড়িতে তাঁর ছেলেবেলা কাটে। ৫ বছর বয়সে তাঁর পিতার মৃত্যু হয়। মা এবং বড় বোন বিনোদবালার সাথে তিনি মাতামহের বাড়ি কয়াগ্রামে চলে যান।
অল্পবয়সেই পিতৃহারা হয়েছিলেন যতীন্দ্রনাথ। বিধাব মা শিশু যতীন্দ্রনাথ ও জ্যেষ্ঠ কন্যা বিনোদবালাকে নিয়ে কুষ্টিয়ায় কয়া গ্রামে পিতার বাড়িতে যেয়ে ওঠেন। তাঁর জীবনকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিল মাতা শরৎশশী। পরোপকার বৃত্তি, দুঃশাসন ও অন্যায় প্রতিরোধ করার শিক্ষা যতীন্দ্রনাথ মায়ের কাছ থেকে লাভ করেছিলেন।
বাঘা যতীনের মা ছিলেন বাঘিনী। গ্রামের পাশেই গভীর নদী। তিনি বালক যতীন্দ্রনাথকে স্নান করাতে যেয়ে দূরে ছুঁড়ে ফেলে নিজেই সাঁতরে গিয়ে নিয়ে আসতেন। এভাবে সাঁতার শিখে যতীন্দ্রনাথ একদিন বর্ষার ভরা নদী সাঁতরে পার হবার সাহস ও শক্তি অর্জন করেছিলেন। বাঘিনী মায়ের শিক্ষাতেই গড়ে উঠেছিলেন দেশপ্রেমিক যতীন্দ্রনাথ, বিপ্লবী বাঘা যতীন।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যতীন্দ্রনাথের শক্তি সাহস উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেলেও মন ছিল স্নেহ, মায়া-মমতায় ভরা। কারো উপকার করতে পারলে নিজেকে তিনি ধন্য মনে করতেন। তাঁর পরোপকারের বহু ঘটনা আজো কিংবদন্তীর মতো হয়ে আছে।
বাঘাযতীন নামকরণ: যতীন্দ্রনাথের ‘বাঘা যতীন’ নামটি কে দিয়েছিলেন তা জানা যায় না। কিন্তু নামকরণের ইতিহাসের সঙ্গে নামটিও অমরত্ব লাভ করেছে। একবার কয়াগ্রামে গিয়েছিলেন যতীন্দ্রনাথ। সেই সময় গ্রামে বাঘের খুব উৎপাত ছিল। একদিন গ্রামবাসীরা বাঘের আস্তানায় হানা দিল। গ্রামবাসী বাঘটি মারার জন্য চেষ্টা করছিল।
তাদের সাথে বন্দুক হাতে আছেন যতীন্দ্রনাথের এক জ্ঞাতি ভাই। খবর শুনে যতীনও ভিড়ে গেলেন বাঘ শিকারীদের দলে। এজনের হাতে শুধু বন্দুক। আর যার যার হাতে লাঠি, বল্লম আর দা। যতীনের হাতে এসবের কিছুই নেই। তাঁর হাতে শুধু পেন্সিল কাঠার ছুরি। ওটা নিয়েই যতীন বাঘ শিকারীর দলে শামিল হলেন।
হঠাৎ বাঘ দেখা গেল। তাকে লক্ষ্য করে গুলি করা হলো। কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট হলো সেই গুলি। বাঘটা গেল ক্ষেপে। ক্রুদ্ধ বাঘ ঝাঁপিয়ে পড়লো যতীন্দ্রনাথের উপর। কিন্তু যতীন ঘাবড়ে যাবার ছেলে নন। তিনি তাঁর হাতের পেন্সিল কাটার ছুরি দিয়েই বাঘের সাথে লড়াই করে যেতে লাগলেন। বাঘকে ক্ষত-বিক্ষত করতে করতে নিজেও ক্ষত-বিক্ষত হলেন। কিন্তু হাল ছাড়লেন না। ছুরির ঘা মেরেই একসময় বাঘকে পরাস্থ করলেন। শেষ করে দিলেন তার জীবনলীলা। এই দুঃসাহসিক অভিযানের পর থেকে তিনি বাঘা যতীন নামে অভিহিত হলেন। এরপরেও আরেকবার তাঁকে বাঘিনীর মুখে পড়তে হয়েছিল। সেবার গুলি করে বাঘিনী মেরে তার তিনটি শাবককে বাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন।
শিক্ষাজীবন: কয়া গ্রামের এক প্রাইমারী স্কুলে ভর্তি হলেও বাঘা যতীনের সত্যিকার শিক্ষাজীবন শুরম্ন হয় কৃষ্ণগ্রামের মামার বাড়িতে এসে। এখানেই তিনি স্কুলের শিক্ষাজীবন শুরম্ন করেছিলেন। পড়াশোনার চেয়ে নানান খেলা, শরীরচর্চা প্রভৃতিতেই ছিল তাঁর বেশী উৎসাহ। স্থানীয় স্কুলে পড়ার সময় একদিন একটি পাগলা ঘোড়াকে কব্জা করে অসীম সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন।

Discussion about this post